বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

সেনা প্রত্যাহার শুরু গোলাগুলি বন্ধ

এখনো আতঙ্কে সীমান্তের বাসিন্দারা, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাঙ্কার করে সতর্ক প্রহরা বিজিবির

নিজস্ব প্রতিবেদক

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের উত্তরাঞ্চল থেকে জান্তাবাহিনী সৈন্য প্রত্যাহার শুরুর পর হঠাৎ করেই যেন শান্ত হয়ে যায় সবকিছু। গত রবিবার উত্তর রাখাইনের দুটি পাহাড়ি ঘাঁটি থেকে সৈন্য সরিয়ে নেওয়া হয় বলে সোমবার এক বিবৃতিতে দাবি করে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। এর পর থেকে টেকনাফ সীমান্তে থেমে গেছে গোলাগুলির শব্দ। সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত কোনো গোলার শব্দ শোনা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। স্বায়ত্তশাসিত রাখাইনের দাবিতে কয়েক দশক ধরে লড়াই করে আসছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। চলতি মাসের শুরুর দিকে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে চলমান সংঘাত প্রবল সংঘর্ষে রূপ নেয়। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের পর সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তের ওপারে। এক পর্যায়ে শাহপরীর দ্বীপের ওপারেও প্রবল যুদ্ধ শুরু হয়। মিয়ানমারে যুদ্ধ চললেও গুলি ও মর্টার শেলের বিকট শব্দে ঘুম হারাম হয়ে যায় এপারের সীমান্তবাসীর। এক দিন শোনা যায়নি গুলির শব্দ, তবে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে বাসিন্দাদের মধ্যে। শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটের বাসিন্দা সালামত উল্লাহ বলেন, উখিয়াসহ টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্টে মাসব্যাপী মর্টারশেল ও গুলির শব্দে মানুষ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করছিল। পরবর্তীতে রাখাইন রাজ্যের মংডুর দখল নিয়ে জান্তাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে শুরু হয় ব্যাপক সংঘর্ষ। এ কারণে শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দারা নতুন করে আতঙ্কে পড়ে যায়। তবে জান্তাবাহিনীর সৈন্য প্রত্যাহারের খবর আসার পর সোমবার রাত থেকে কোনো গোলার শব্দ শোনা যায়নি। হঠাৎ করেই যেন সুনশান নীরবতা। তবে শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্ট মার্টিন ইউনিয়নের সীমান্তের ওপারে রবিবার রাত থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা গেছে। এদিকে, নিরাপত্তার কারণে শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে পর্যটকসহ স্থানীয়দের চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বিজিবি। নাফ নদীতে টহল জোরদার করেছে বিজিবি-কোস্ট গার্ড। স্থলভাগেও পুলিশের টহল বেড়েছে। কাজ করছে চারটি বিশেষ দল। মিয়ানমার থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাঙ্কার করে পাহারা দিচ্ছে বিজিবি। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী গতকাল বিকালে বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে জেনেছি সোমবার রাত থেকে কোনো বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি। এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তে বসবাসরত মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এদিকে টেকনাফ সীমান্ত শান্ত হলেও আতঙ্ক কাটেনি এপারের বাসিন্দাদের। যে কোনো সময় আবার সংঘর্ষের আশঙ্কায় স্বাভাবিক হয়নি জনজীবন। নদীতে মাছ ধরতে যাচ্ছেন না জেলেরা। কৃষিকাজেও ভাটা পড়েছে। সাবরাং নয়াপাড়ার বাসিন্দা সৈয়দ আলম বলেন, গত কয়েক দিন টেকনাফ সীমান্তের মানুষগুলোর ঘুম ভেঙেছে বিকট শব্দে। মর্টারশেলের শব্দে এপারের মাটি কেঁপে উঠেছে। নাফ নদীর তীরে বসবাসরত বাংলাদেশিরা আতঙ্কে আছেন।

 

সর্বশেষ খবর