শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

অতিমুনাফায় বিপদ

ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ

অতিমুনাফায় বিপদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেছেন, উপযুক্ত নীতিমালা তৈরির ভিত্তিতে রোগী এবং সেবাদানকারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। দেশে স্বাস্থ্য শিক্ষার মান তলানিতে পৌঁছেছে। এদিকে নজর না দিলে হাসপাতালে সেবার মান বাড়বে না। রোগীমৃত্যুর ঘটনায় এসব বেসরকারি হাসপাতালের অতিমুনাফা লোভও দায়ী। গতকাল তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রোগীর সুরক্ষা প্রটোকল মেনে চিকিৎসা দিলে খতনা করতে গিয়ে শিশুমৃত্যুর মতো অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটার কথা না। রোগীর নিরাপত্তাব্যবস্থা পদ্ধতির মধ্যে মূলত রয়েছে রোগীর নিরাপত্তার প্রতি ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করা। এমন একটি সংস্কৃতি তৈরি করা যেখানে রোগীর নিরাপত্তা সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যসেবা দানকারীদের জন্য একটি নিরাপদ কাজের পরিবেশ ও পদ্ধতি এবং ক্লিনিক্যাল প্রক্রিয়াগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং স্বাস্থ্যসেবা দানকারী ও পরিচর্যা কর্মীদের দক্ষতা তৈরি করা। এ ছাড়া টিমওয়ার্ক এবং পারস্পরিক যোগাযোগ উন্নত করা। রোগীর নিরাপত্তাবিধানে এ পদ্ধতিগুলো সারা বিশ্বে অনুসরণ করা হলেও বাংলাদেশে তেমন অনুসরণ করা হয় না। আবহমান কাল ধরে গ্রামবাংলার হাজাম সম্প্রদায় খতনার কাজ করত। এরপর চিকিৎসকরা খতনা করতে শুরু করেছেন। এটাকে আমরা ইতিবাচকভাবে নিয়েছিলাম কারণ তারা প্রটোকল মেনে চিকিৎসা দেবেন। ফলে এটা একটা আধুনিক পদ্ধতির মধ্যে আসবে। কিন্তু খতনা করতে গিয়ে পরপর শিশুমৃত্যুর ঘটনা এখন এ সেবাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। খতনা করতে গিয়ে ৭ জানুয়ারি শিশু আয়ানের মৃত্যুর পর স্বাস্থ্য অধিদফতর কিংবা সোসাইটি অব সার্জনস ও সোসাইটি অব অ্যানেসথেসিওলজিস্টস সুন্নতে খতনার অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার একটা গাইডলাইন তৈরি করতে পারত। কোথায় জেনারেল অ্যানেসথেসিয়া আর কোথায় লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করতে পারত। কিন্তু এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। দেশের মেডিকেল শিক্ষার মান বিষয়ে ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, দেশে গত প্রায় দুই যুগে যেসব সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার অধিকাংশই শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে পারেনি। মেডিকেল শিক্ষার জন্য এসব মেডিকেল কলেজে উপযুক্ত শিক্ষক নেই, অনেকটিতে হাসপাতাল কিংবা শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা হয়নি। ইন্টার্নশিপে মনোযোগ না দিয়ে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার সংস্কৃতি প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর ফলে স্বাস্থ্যসেবার গুণগত মানে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এজন্য ল্যাব নেই, শিক্ষক নেই, হাসপাতাল নেই এসব সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল থেকে শিক্ষার্থীদের অন্যত্র স্থানান্তর করে তাদের সঠিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। মান অনুযায়ী শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতে তাদের সময় বেঁধে দিতে হবে। কারণ চিকিৎসক, নার্স এগুলো জীবনঘনিষ্ঠ পেশা। তাই এখানে কোনো গাফিলতির সুযোগ নেই। বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন নীতিমালায়ও সংশোধন প্রয়োজন। বিএমডিসি সনদ পেতে এবং তা নবায়নে আবেদনকারী চিকিৎসকদের জন্য অবশ্যই লাইসেন্সিং পরীক্ষা চালু করতে হবে। এজন্য বিএমডিসির সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বিশ্বের ৫০টির বেশি দেশে লাইসেন্সিং পরীক্ষা চালু আছে। কিন্তু এখানে দেশের যে কোনো মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করলেই বিএমডিসি সনদ পেয়ে যাচ্ছে। এটা পরিবর্তন হওয়া উচিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর