শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
নীরব রাজনীতি সরবের চেষ্টা

শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেবে না আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেবে না আওয়ামী লীগ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর রাজনীতি অনেকটা নীরব ছিল। রমজান সামনে রেখে রাজনীতি সরব হওয়ার আভাস মিলছে। জনগণকে সম্পৃক্ত করে সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে চায় বিএনপি ও তাদের মিত্ররা। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কোনো বাধা দেবে না আওয়ামী লীগ। বিএনপি এবং তাদের মিত্ররা আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামলে কোনো ধরনের সহিংসতায় না জড়াতে, বাধা না দিতে তৃণমূল পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এটা জানা গেছে। তাঁরা বলছেন, সরকারবিরোধীরা আন্দোলনের কৌশল পরিবর্তন করতে পারে। তারা এখন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি এবং অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ ইত্যাদি বক্তব্য থেকে সরে এসে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চাইছে। সে কারণে তারা এখন থেকে বাস্তব পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে কীভাবে জনগণকে সম্পৃক্ত করা যায় সেসব কর্মসূচি দিতে পারে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কখনোই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেয়নি। ভবিষ্যতেও দেবে না। গণতান্ত্রিক আন্দোলন করার অধিকার সব রাজনৈতিক দলের আছে। এটা আমাদের সংবিধানেও বলা আছে। বিএনপিসহ তাদের মিত্ররা যদি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে তাহলে যেন বাধা না দেওয়া হয় সে নিদের্শনা তৃণমূল পর্যায়েও দেওয়া হয়েছে।’ গত মঙ্গলবার ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেবে না সরকার। তবে আন্দোলনে সহিংসতার উপাদান যুক্ত হলে বাধা আসবে। বাধা দেওয়ার মতো সহিংস তৎপরতা, সন্ত্রাস, অগ্নিসন্ত্রাস এসব উপাদান যদি আন্দোলনে যুক্ত হয় তাহলে বাধা আসবে। তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিলে আমরা বাধা দেব কেন? দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, রাজপথে বিএনপিকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া না হলেও সতর্ক থাকবেন দলটির নেতা-কর্মীরা। কারণ বিএনপির অতীত কর্ম ভেবেই সজাগ ও সতর্ক থাকবেন ক্ষমতাসীন দলটির নেতা-কর্মীরা। এজন্য সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনও পৃথক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে। তবে বিএনপি যেসব এলাকায় কর্মসূচি দেবে সেসব এলাকায় যাবেন না আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচনের পর আমরা সাংগঠনিক কাজে মনোযোগী হয়েছি। মেয়াদোত্তীর্ণ সাংগঠনিক ইউনিটগুলোর সম্মেলন করব। এ ছাড়া স্থানীয় সরকারের ভোট রয়েছে। বিএনপি তাদের কর্মসূচি করলে আমরা কেন বাধা দেব? আগ বাড়িয়ে কোনো কিছুই করা হবে না। তবে অতীতের মতো আগুনসন্ত্রাস, গাড়ি ভাঙচুর, বিচারপতির বাসভবনে হামলা হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছেন, বিএনপিসহ তাদের মিত্রদের আন্দোলন নিয়ে আপাতত ভাবছে না ক্ষমতাসীনরা। তাদের আন্দোলনের দৌড় কত দূর তা ক্ষমতাসীন দলের জানা আছে। কাজেই এখন সাংগঠনিক কাজে বেশি মনোযোগী হবে আওয়ামী লীগ। দলের সাংগঠনিক ৭৮ জেলার মধ্যে অনেক জেলাই মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। সেগুলোর সম্মেলন করা হবে দ্রুতই। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কৌশলগত কারণে মাঠে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাখায় অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে। এ কোন্দল নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সর্বশেষ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকেও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা কোন্দল নিরসনে তাগাদা দিয়েছেন। গত সপ্তাহে আওয়ামী লীগ সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে কোন্দলপূর্ণ জেলা-উপজেলাকে ঢাকায় ডেকে সমাধানের নির্দেশনা দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সামনে রমজান মাসেও কোন্দলপূর্ণ জেলা-উপজেলাকে ঢাকায় ডেকে সমাধান করা হতে পারে। সে হিসেবেই এখন কর্মপরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা সাংগঠনিক কর্মপরিকল্পনাই ভাবছি। বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে আপাতত ভাবছি না। দলের অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যা আছে সেগুলো মেটানো এবং মেয়াদোত্তীর্ণ সংগঠনের সম্মেলন করব।’

সর্বশেষ খবর