শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
নীরব রাজনীতি সরবের চেষ্টা

রমজানে নেতা-কর্মীদের চাঙা রাখতে চায় বিএনপি

শফিউল আলম দোলন

রমজানে নেতা-কর্মীদের চাঙা রাখতে চায় বিএনপি

নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙা করতে রমজানেও সোচ্চার থাকবে বিএনপি। কারাবন্দি সব নেতা-কর্মী আস্তে আস্তে মুক্ত হচ্ছেন। তাদের রাজনৈতিকভাবে আরও বেশি সক্রিয় রাখতে পুরো রমজানেই থাকবে কর্মসূচি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, সরকারের পদত্যাগ, খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার দাবিসহ বিভিন্ন জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুতে কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে সব কর্মসূচিই হবে শান্তিপূর্ণ।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রচলিত ইফতার মাহফিলের পাশাপাশি এবার ১০টি বিভাগীয় শহরে সাংগঠনিকভাবে ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে কারামুক্ত নেতা-কর্মীদের সম্মানেও ইফতারের আয়োজন করবে বিএনপি। একই সঙ্গে চলমান আন্দোলনে দল ও অঙ্গ সংগঠনের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের আলাদাভাবে সম্মান জানানোর ব্যবস্থা করা হবে। ধন্যবাদ জানিয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়া হচ্ছে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী নেতাদের। বিশেষ করে এবারের রোজায় ঢাকা থেকে শুরু করে সব সাংগঠনিক বিভাগ, জেলা, উপজেলা, পৌরসভাসহ সব ইউনিটে জমজমাটভাবে ইফতার রাজনীতি আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধিসহ সারা দেশে আবারও জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোই হচ্ছে এসব কর্মসূচির মূল লক্ষ্য। জানা গেছে, রমজানে কর্মসূচির মধ্যে আরও থাকবে গণসংযোগ, বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল, মানববন্ধন লিফলেট বিতরণ, আলোচনা সভা। গত সোমবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক ছাড়াও আলাদাভাবে কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কর্মসূচি নির্ধারণের বিষয়ে আলোচনা করছেন দলের হাইকমান্ড তারেক রহমান। এ ছাড়াও আন্দোলনে অংশ নেওয়া সমমনা জোট ও দলগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে শিগগিরই নতুন করে আলোচনা শুরু করবে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস পর অংশ নেন সদ্য কারামুক্ত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কারামুক্ত নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে আন্দোলনে যারা ভূমিকা রেখেছেন- তাদেরও প্রশংসা করেন। বিএনপি নীতিনির্ধারকদের মতে, এবারের নির্বাচনের আগে মাঠের সক্রিয় নেতা-কর্মীদের পরিকল্পিতভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। কারাগারে থাকা এসব নেতা-কর্মীর বেশির ভাগই ছিলেন পদ-পদবিহীন। তাদের যদি সম্মান দেওয়া হয় তাহলে দল উপকৃত হবে। নেতা-কর্মীরাও উজ্জীবিত হবেন। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কারামুক্ত নেতা-কর্মীদের নিয়ে দেশের ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে ১০টি ইফতার পার্টির আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব অনুষ্ঠানে দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতারা অংশ নেবেন। এ ছাড়াও বৈঠকে গ্রেফতারকৃত নেতাদের অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত নেতা হিসেবে যারা আন্দোলনে দায়িত্ব পালনসহ নেতৃত্ব দিয়েছেন- তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। সভায় ওই নেতাদের চিঠি দিয়ে ধন্যবাদ জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আন্দোলনে তাদের ভূমিকা ও অবদান স্বীকার করে চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে দু-একদিনের মধ্যেই চিঠি দেওয়া হবে। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এটি ভালো উদ্যোগ। বাস্তবতা হলো গ্রেফতার হওয়া প্রায় সব নেতা-কর্মীই মাঠে সক্রিয় ছিলেন। তবে অধিকাংশই তৃণমূলের নেতা-কর্মী, যাদের কোনো পদ-পদবি নেই। তাদের সম্মান প্রদানের পাশাপাশি ভবিষ্যতে পদ-পদবি দিয়েও মূল্যায়ন করা উচিত। বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, গত বছর ২৮ জুলাই থেকে সারা দেশে ২৭ হাজার ৫২৬ জনেরও বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। তবে এর মধ্যে অধিকাংশ নেতা-কর্মীই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। কারাগারে এখন ১৩-১৪ জন কেন্দ্রীয় নেতাসহ দেড় হাজারের মতো নেতা-কর্মী আছেন। সিনিয়র নেতাদের মধ্যে এখনো কারাগারে আছেন ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনসহ অন্তত ১৩ জন কেন্দ্রীয় নেতা। রমজানের কর্মসূচি বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল বিএনপি সব সময়ই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ও আন্দোলনে বিশ্বাসী। দলীয় ফোরামসহ সমমনাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। তিনি কারাগারের ভিতরের দুরবস্থার কথা উল্লেখ করে বলেন, সেখানে বিনা চিকিৎসায় ইতোমধ্যে অনেক নেতা-কর্মী মারা গেছেন। তিনি সব রাজবন্দির অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেন। একই বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, আমরা সবাইকে নিয়ে আবারও শান্তিপূর্ণ গণ আন্দোলন গড়ে তুলব।

 

সর্বশেষ খবর