রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
ঢাকায় ব্যস্ত মার্কিন প্রতিনিধি দল

বসছেন দল সরকার শ্রমিক নেতা ও সুশীল সমাজের সঙ্গে

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বসছেন দল সরকার শ্রমিক নেতা ও সুশীল সমাজের সঙ্গে

তিন দিনের সফরে ঢাকা এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল। গতকাল সকালে ঢাকা আসার পর থেকেই তারা ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। ধাপে ধাপে বৈঠক করছেন রাজনৈতিক দল, সুশীলসমাজ ও শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে। ঢাকার মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক বন্ধন শক্তিশালী করার উপায়, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে উভয়ের স্বার্থোন্নয়নে পারস্পরিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরবেন। আজ পররাষ্ট্র সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক ও সাক্ষাৎ করবেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে কঠোর অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের পর এটাই প্রথম উচ্চ পর্যায়ের সফর। এ প্রতিনিধি দলে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের (এনএসসি) দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র ডিরেক্টর আইলিন লাউবাচার, ইউএসএইডের সহকারী প্রশাসক ও এশিয়া ব্যুরো মাইকেল শিফার এবং যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতার। এর আগে গত বছরের ১৬ অক্টোবর ঢাকায় এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতার। সে সময় বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। ঢাকা পৌঁছানোর পর আফরিন আখতারসহ মার্কিন প্রতিনিধিরা গতকাল দুপুরের পর পরই রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন বিএনপি নেতাদের সঙ্গে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তিন নেতা ছিলেন ছিলেন বৈঠকে। ছিলেন ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও।

এর আগে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে পারস্পরিক স্বার্থের অগ্রগতির জন্য কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবেন তারা। সফরকালে তারা তরুণ অ্যাকটিভিস্ট, সুশীলসমাজ, শ্রমসংগঠক এবং মুক্ত গণমাধ্যমের বিকাশে নিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। দূতাবাস জানায়, মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এগিয়ে নেওয়া, মানবাধিকার সমর্থন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, আন্তর্জাতিক হুমকির বিরুদ্ধে আঞ্চলিক সহনশীলতার শক্তি এগিয়ে নেওয়া এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রচারে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আফরিন আখতার যখন বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তখন প্রতিনিধি দলের আরেক সদস্য ইউএসএইডের সহকারী প্রশাসক ও এশিয়া ব্যুরো মাইকেল শিফার বাংলাদেশের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো ও তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য একসঙ্গে কাজ করতে ইউএসএইডের পক্ষ থেকে চুক্তি স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি হিসেবে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন শিক্ষাপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘শিখো’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীর চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউএসএইডের বাংলাদেশের মিশন ডিরেক্টর রিড অ্যাশলিম্যান। এ উদ্যোগের উদ্দেশ্য যুবদের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের সমৃদ্ধি অর্জন। এ সময় মাইকেল শিফার বলেন, বাজারে চাহিদা আছে এমন বিষয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারলে তরুণরা দেশকে আরও প্রতিযোগিতাসম্পন্ন ও পরবর্তী এশিয়ান টাইগার ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। সেই সঙ্গে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে সমৃদ্ধিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবে। পরে বাংলাদেশের শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মার্কিন প্রতিনিধি দলের সদস্য আফরিন আখতার। তাঁর সঙ্গে আরও ছিলেন মাইকেল শিফার, ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের লেবার অ্যাটাশে, ইউএসএইডের মিশন ডিরেক্টর প্রমুখ। দলটি ঢাকার রামপুরায় বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি (বিসিডব্লিউএস) এবং বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের (বিজিআইডব্লিউএফ) প্রধান কার্যালয়ে বৈঠক করেন। বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিসিডব্লিউএস নির্বাহী পরিচালক ও বিজিআইডব্লিউএফের সভাপতি কল্পনা আক্তার বলেন, ‘রামপুরায় আমাদের প্রধান কার্যালয়ে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। দলে ছিলেন ১০-১২ জন। আফরিনসহ আরেকজন আমার সঙ্গে কথা বলেছেন।’ আলোচনার বিষয় কী ছিল-জানতে চাইলে কল্পনা বলেন, ‘গাজীপুরের শ্রমিকনেতা শহিদুল ইসলাম হত্যার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সঠিকভাবে তদন্ত হচ্ছে কি না, অগ্রগতি কতদূর এসব বিষয়ে মার্কিন কর্মকর্তারা জানতে চেয়েছেন। এ ছাড়া আমাদের শ্রম আইনের সংস্কার নিয়ে কথা হয়েছে। কোন পর্যায়ে আছে জানতে চাইলে আমি বলেছি ওটা এখন সংসদে রয়েছে। সরকার এটা নিয়ে কাজ করছে।’ শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে সমাজমাধ্যমে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পোস্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ যেন সংগঠিত হতে এবং সম্মিলিতভাবে তাদের দরকষাকষির অধিকারের উন্নয়ন করতে পারে, তার সমর্থন জানায় যুক্তরাষ্ট্র। শ্রম অধিকার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দেখা করতে পেরে আমরা আনন্দিত, কারণ তারা সাহসিকতার সঙ্গে বাংলাদেশের শ্রমিকদের সংগঠনের স্বাধীনতা, সম্মিলিত দরকষাকষির অধিকার এবং মানসম্মত মজুরির জন্য চাপ অব্যাহত রেখেছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের গ্লোবাল লেবার পলিসি বিশ্বজুড়ে শ্রমিকদের অধিকার উন্নয়নে নিয়োজিত। সফরসূচি অনুসারে, দলনেতা আইলিন লাউবাচার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে আজ দুপুরে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন। বিকালে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে দেখা করবেন।

সর্বশেষ খবর