রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

রাতভর গোলাগুলি

নিজস্ব প্রতিবেদক

কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার থেকে আবারও গোলাগুলি ও মর্টার শেলের শব্দ ভেসে এসেছে। তিন দিন বন্ধ থাকার পর শুক্রবার রাতভর গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। এতে আবারও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। তবে গতকাল সকাল ৮টার পর আর শব্দ শোনা যায়নি। এদিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম-তুমব্রু এলাকার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি দুই সপ্তাহ ধরে শান্ত রয়েছে। আমাদের টেকনাফ ও বান্দরবান প্রতিনিধির পাঠানো তথ্যে জানা গেছে, শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং খারাংখালীর পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার এলাকায় গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। একই দিন বিকাল ৫টার দিকে সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়ার পূর্ব পাশে মিয়ানমার থেকে তিনটি মর্টার শেলের বিকট শব্দ ভেসে আসে। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এর আগে সোমবার বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা থেকে সর্বশেষ মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় গোলাগুলির শব্দ শোনা গিয়েছিল। টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বলিবাজার ও কেয়ারিপ্রাং নামে দুটি গ্রামে রাতভর থেমে থেমে গোলাগুলির পাশাপাশি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। এ সময় সীমান্তের কাছাকাছি থাকা বাংলাদেশি লোকজন ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা বলেন, কয়েকদিন শান্তিতে থাকলেও আবার সীমান্ত এলাকায় অশান্তি দেখা দিয়েছে। রাতভর গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে। এদিকে নাফ নদের পূর্ব পাশে অবস্থিত মিয়ানমারের মংডু শহরের পেরাংপুরু ও নলবন্যা গ্রামে শুক্রবার রাত ১১টার পর থেকে ভোর পর্যন্ত কয়েকটি ভারী গোলাবর্ষণ বা মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

সীমান্তবর্তী নাফ নদসংলগ্ন শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়া জেলে সমিতির সভাপতি আবদুল গণি বলেন, শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত মিয়ানমারের অভ্যন্তরে পেরাংপুরু ও নলবন্যা গ্রাম থেকে গোলাগুলি ও বিকট শব্দ ভেসে এসেছে। এ কারণে এপারের বাসিন্দাদের মধ্যে রাতভর আতঙ্ক দেখা গেছে। তবে সকাল থেকে আর কোনো শব্দ শোনা যায়নি। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, সীমান্ত এলাকার জনপ্রতিনিধিরা গোলাগুলির শব্দের বিষয়টি তাকে জানিয়েছেন। মিয়ানমারে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে সীমান্ত এলাকায় বিজিবি, কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তে বসবাসরত বাংলাদেশের নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এদিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম-তুমব্রু এলাকার ওপারে মিয়ানমার অংশে দুই সপ্তাহ ধরে কোনো গোলাগুলির ঘটনা ঘটেনি। সীমান্ত লাগোয়া বাসিন্দারা নির্ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

বিজিবি সূত্র জানায়, আর কোনো রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ যাতে না ঘটে সেজন্য কাঁটাতারের বেড়া ঘেঁষে সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা। প্রসঙ্গত, ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সংঘর্ষ বাড়তে শুরু করে। ৫ ফেব্রুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে এক নারীসহ দুজন নিহত হন। আহত হয় এক শিশু। সংঘর্ষ চলাকালে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যসহ সে দেশের ৩৩০ জন প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর