বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিদেশ থেকে ডলার আনতে প্রশ্ন কেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদেশ থেকে ডলার আনতে প্রশ্ন কেন

বিদেশ থেকে ডলার আনার ক্ষেত্রে নানা রকম প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। তাই পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার জন্য কোনো ধরনের প্রশ্ন না তোলার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছেন অর্থনীতিবিদরা। এতে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আসবে। দেশে বিনিয়োগ বাড়বে। কর্মসংস্থান তৈরি হবে। এতে সরকার ডলার সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে মনে করেন বিশেজ্ঞরা। দেশের অর্থনীতিতে বর্তমানে যে ধরনের সমস্যা রয়েছে তার মূলে রয়েছে মার্কিন ডলারের সংকট। সংকট কাটিয়ে উঠতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ ও ঋণের প্রবাহ কমে গেছে। ঋণ যে পরিমাণ আসছে পরিশোধ করতে হচ্ছে তার চেয়েও বেশি। ডলার সংকট ও দর বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন, বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তারপরও বিদেশ থেকে ডলার আনার ক্ষেত্রে নানা রকম প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ফলে জিনিসপত্রের উচ্চ দামের বাড়তি ব্যয় মেটাতে মানুষের কষ্ট হচ্ছে। বেড়েছে মূল্যস্ফীতি।

এসব সংকট উত্তরণে বিদেশ থেকে ডলার          আনার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রশ্ন না তোলার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, দেশে ডলার আনার ক্ষেত্রে সরকারের নমনীয় হওয়া উচিত। সবাই তো টেররিজমের জন্য ডলার আনে না। টেররিজম ছাড়া অন্য যে কোনো পারপাসে ডলার আনুক না কেন সমস্যা কী। সন্ত্রাসে অর্থায়নে যারা দেশে ডলার আনে, তাদেরকে সরকারের সংশ্লিষ্টরা চেনে। কিন্তু সাধারণ মানুষ যেসব ডলার দেশে আনে, তাদের অযথা আইনকানুন দেখানোর কারণে আবার ফেরত চলে যায়। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির এক হিসাবে বলা হয়েছে, স্বাধীনতার পরের অর্থবছর থেকে গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১২ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। ২০২৩ সালে মে মাসে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বিকল্প বাজেট উপস্থাপনকালে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আবুল বারকাত বিপুল অর্থ পাচারের তথ্য তুলে ধরেন। অর্থনীতি সমিতির হিসাবে ১৯৭২-৭৩ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত পাচার হওয়া অর্থের ৫ শতাংশ উদ্ধার করা গেলেও সরকার ৫৯ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা পাবে। দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ উদ্ধারের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান উৎস হতে পারে কালো টাকা ও অর্থ পাচারের ওই খাত বলেও মন্তব্যও করেন আবুল বারকাত। এ বিষয়ে বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, কারণ সরকার চায় না দেশে ডলার আসুক। সরকার এটা নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। টাকা তো পাচার হয়েই গেছে, চলেই গেছে। এখন ফেরত আনাটাই হলো লক্ষ্য। ডলারটা যেভাবেই আসুক, আসতে দেওয়া উচিত।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ আসে বিদেশি বিনিয়োগ থেকে। দুই বছর আগেও এই বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ায় তা বেশ ভালো প্রভাব রেখেছিল অর্থনীতিতে। কিন্তু হঠাৎ করে তা কমছে। বিনিয়োগ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে নিট সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহ ছিল ৩২৪ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার। আগের অর্থবছরে ২০২১-২২ ছিল ৩৪৩ কোটি ৯৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার। হিসাব বলছে, বছর ব্যবধানে নিট এফডিআই প্রবাহ কমেছে ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। এটি চাকরিপ্রার্থীদের জন্য একটি নেতিবাচক দিক। কারণ, বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে না। একই সঙ্গে এটি অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের অভাবের একটি প্রতিফলন, যা চলতি অর্থবছরে সরকারের ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাধা হতে পারে। এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিদেশ থেকে ডলার বা বিনিয়োগ আনার প্রক্রিয়া অনেক জটিল। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে ডলার আনার সময় নানা ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। এ ছাড়াও ওয়ান স্টপ সার্ভিস, মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এ ধরনের সমস্যার কারণে প্রত্যাশিত ডলার আসছে না দেশে। বিনিয়োগ আনার প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে হবে। শুধু দেখতে হবে যে অর্থ আসছে সেটা সন্ত্রাসে অর্থায়ন হচ্ছে কি না। তা হলেই বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, বিদেশ থেকে ডলার আনা আরও সহজ করা হয়েছে। তারপরও ডলার আনার ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সমস্যায় পড়লে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়।

সর্বশেষ খবর