বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
সংসদে প্রধানমন্ত্রী

রোজায় পণ্যমূল্য স্বাভাবিক রাখার কার্যক্রম অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

রোজায় পণ্যমূল্য স্বাভাবিক রাখার কার্যক্রম অব্যাহত

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আসন্ন পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে কারসাজি করে পণ্যমূল্য বাড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, কেউ গুজবে কান দেবেন না। এতে কেউ গুজব ছড়িয়ে মানুষের খাদ্য নিয়ে খেলতে পারবে না। পবিত্র রমজানে কেউ যাতে বাজার নিয়ে খেলতে না পারে সে ব্যাপারে সরকার সচেতন আছে। ইচ্ছাকৃতভাবে বা কারসাজি করে কেউ দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গতকাল সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আলী আজমের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

প্রধানমন্ত্রী  বলেন, পবিত্র রমজান মাসে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে থাকবে এবং বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামে লাগাম টানা সম্ভব হবে। দুর্নীতি দমনে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র কথা পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, দুর্নীতির কারণে দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। কেবল আইন প্রয়োগ ও শাস্তির মাধ্যমে দুর্নীতি রোধ সম্ভব নয়। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করা হবে। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, সেগুলোতে পর্যায়ক্রমে শহীদ মিনার স্থাপন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। বিরোধী দলের চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নুর অন্য এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার কাজ শুধু সরকারের একার নয়। এ ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিদেরও ভূমিকা আছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিনিয়ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা হচ্ছে এবং দায়ীদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। সবাই সহযোগিতা করলে, আর জনগণও সচেতন দৃষ্টি রাখলে কেউ মানুষের খাদ্য নিয়ে কারসাজি বা খেলার কোনো সাহস পাবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে পণ্য আমদানি করতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। জাহাজ ভাড়াও বেড়ে গেছে অনেক। আমি একটা কথা বলি, জানি না, রমজান তো হচ্ছে কৃচ্ছ্র সাধনের মাস। আমাদের অনেকটা দেখি রমজানের সময় যেন খাওয়াটা একটু বেড়েই যায়। আসলে সেই জন্য তো রমজান না। রমজান হচ্ছে সংযমের মাস। সংযম করতে হবে। এখন বিশেষ কোনো একটা জিনিস না খেলেই রমজান আর হবে না, রোজা রাখা যাবে না বা ইফতার খোলা যাবে না- এই মানসিকতাটাও বদলাতে হবে। আমাদের দেশে যা পাওয়া যায় সেটা দিয়েই কিন্তু রোজা করতে পারি। এটা না খেলে চলছেই না এরকম তো কোনো কথা নেই। অন্য সময় মানুষ কী খায় সেভাবেই খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তাহলে তো আর এই ধরনের একটা জিনিসের জন্য কান্নাকাটি শোনা যাবে না। তিনি বলেন, ইদানীং সবাই দেখেছেন প্রত্যেকটা জিনিসের দাম কিন্তু হ্রাস পেয়েছে, কমেছে, একেবারে কমে নাই তা না। যদি দাম বেশি কমে তাহলে কৃষক তার পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় না। আবার যদি দাম বেশি বেড়ে যায় তাহলে যারা নির্দিষ্ট আয়ের লোক তাদের জন্য কষ্ট হয়, ভোক্তার জন্য কষ্ট হয়। কৃষক যেন ন্যায্যমূল্য পায়, কৃষক যেন উৎপাদন বৃদ্ধি করে সেদিকে যেমন আমাদের লক্ষ্য রাখতে হয়, ভোক্তারাও যেন সহনশীল দামে কিনতে পারে সে ব্যবস্থার দিকেও দৃষ্টি দিতে হয়।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আবুল কালামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অনেক টাকা খরচ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। ভর্তুকি দিয়ে কম দামে বিদ্যুৎ দিচ্ছি। পবিত্র রমজানের সেহরি ও ইফতারের সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রচেষ্টা আছে। জ্বালানি ও এলএনজি সংকটের কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, এক সময় তো দেশের মানুষ বিদ্যুৎই পেত না। দিনে ১০-১২ ঘণ্টা লোডশেডিং হতো। এখন তো সে অবস্থা নেই। তবে আমি মনে করি মাঝে মধ্যে লোডশেডিং দেওয়া ভালো, নইলে মানুষ বুঝতে পারবে না আগে কী অবস্থায় ছিল, এখন কেমন অবস্থায় আছে।

মূল প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, বিশ্ববাজারের কারণে দেশে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ অনুভূত হচ্ছে। তবে রোজা উপলক্ষে সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। আশা করা যায়, খুব শিগগিরই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কৃষি বিপণন অধিদফতরের ওয়েবসাইটে  দৈনিকভিত্তিতে কৃষিপণ্যের বাজারদর প্রকাশ করা হচ্ছে। রমজান মাস উপলক্ষে নিম্নআয়ের মানুষের নিরাপদ প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে ঢাকা মহানগরীর ২৫টি স্পটে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে দুধ, মাংস ও ডিম বিক্রির পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, কৃষিপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য আমদানি বন্ধ না রেখে লিন পিরিয়ডে পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধিকল্পে প্রয়োজনে মৌসুমভিত্তিক শুল্ক আরোপের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে। দেশের দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির প্রভাব প্রশমনে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীর মাঝে ১৫ টাকা কেজি দরে এবং সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও জেলা শহরগুলোতে ৩০ টাকা কেজি দরে ওএমএস চাল বিক্রি করা হচ্ছে। কৃষি খাতে প্রদত্ত ভর্তুকি ও প্রণোদনা কৃষকের উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করে পরোক্ষভাবে কৃষিজাত পণ্যের মূল্য নিম্নমুখী রাখতে সহায়তা করে। তিনি জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি ভর্তুকি ও প্রণোদনা হিসেবে ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট যাতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে খাদ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে সে লক্ষ্যে প্রতিটি মিলের পাক্ষিক মিলিং ক্ষমতা ধানের ক্ষেত্রে পাঁচ গুণ থেকে কমিয়ে তিন গুণ করা হয়েছে। মজুত রাখার এ বিধান সংশোধন করায় বাজারে ধানের সরবরাহ বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে এবং অবৈধ মজুত রোধ করা সম্ভব হচ্ছে। চালকল মালিক এবং খাদ্যশস্য ব্যবসায়ীদের গুদাম নিয়মিত পরিদর্শন করা হচ্ছে। অটো রাইসমিলগুলো থেকে চালের বস্তার গায়ে ধানের জাতের নাম, প্রস্তুতকারক মিলের নাম-ঠিকানা, নিট ওজন, উৎপাদনের তারিখ এবং মিল গেটে চালের মূল্যের তথ্য লিখে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব পদক্ষেপের ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষ করে দরিদ্র পরিবার, বয়স্ক, বিধবা, স্বামী নিগৃহীতা মহিলাসহ নিম্নআয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় যেমন স্বস্তি আসবে, তেমনি পবিত্র রমজান মাসে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে থাকবে এবং বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামে লাগাম টানা সম্ভব হবে বলে আমি আশা করছি।

সর্বশেষ খবর