বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বড় ইফতার পার্টি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন পবিত্র রমজানে সরকারিভাবে বড় করে ইফতার পার্টির আয়োজন  না করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে বেসরকারিভাবেও এ ধরনের ইফতার পার্টি আয়োজনকে নিরুৎসাহিত করার কথা বলেছেন তিনি। অপচয় রোধে সরকারপ্রধান এ নির্দেশনা দিয়েছেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। পরে বিকালে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বেসরকারিভাবেও বড় করে ইফতার আয়োজন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কারও যদি এ ধরনের অনুষ্ঠানের ইচ্ছা থাকে তাহলে সেই অর্থ দিয়ে খাদ্য কিনে গরিবদের বিতরণ করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের বুঝতে হবে অপচয় যেন না করি। লোকদেখানো কার্যক্রমে নিজেদের নিয়োজিত না করি। তার বদলে ওই টাকা যদি কারও কল্যাণে ব্যবহার করতে পারেন, সেটাই ভালো। আমি-আপনি বসে খেলাম, ওখানে অনেক খাদ্যের অপচয় হলো, অর্থের অপচয় হলো- এটা তো ধর্মীয় দিক থেকেও যুক্তিযুক্ত নয়।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে রমজানে অফিসের সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। রমজানে সরকারি-আধা সরকারি অফিস চলবে সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। জোহরের নামাজের জন্য ১টা ১৫ মিনিট থেকে দেড়টা পর্যন্ত বিরতি থাকবে। ব্যাংক ও আদালত নিজ নিজ সময় তারা নিজের মতো করে ঠিক করবে।

এ ছাড়াও ‘অফশোর ব্যাংকিং আইন ২০২৪’ এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ আইনের মাধ্যমে অনিবাসী ব্যক্তি বা বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠান যারা এখানে ইনভেস্ট করবে তারা অফশোর অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে। অফশোর ব্যাংকিং করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। আর যারা এই লাইসেন্স পেয়েছে তাদের নতুন করে আর লাইসেন্স নিতে হবে না। মার্কিন ডলার, পাউন্ড, ইউরো, জাপানি ইয়েন এবং চাইনিজ ইয়ান- এই পাঁচটি মুদ্রায় ব্যাংকিং কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে। এ আইনের আওতায় অফশোর ব্যাংকিং করার জন্য তফসিলি ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো লাইসেন্স গ্রহণ করবে। এরপর অনিবাসী বাংলাদেশে বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত গ্রহণ করতে পারবে, ঋণ দিতে পারবে। ওই আমানত স্বাভাবিক ব্যাংকিং পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে পারবে। বিদেশে যে বাংলাদেশি আছে তার পক্ষে তার কোনো আত্মীয় অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে, সহায়তাকারী হিসেবে অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে পারবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ঋণসীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। যে কোনো পরিমাণ ঋণ নিতে পারবে। সমসাময়িক আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থার সঙ্গে সংগতি রেখে অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। তিনি বলেন, ১৯৮৫ সালে এটি বাংলাদেশে প্রথম ইপিজেডে শুরু হয়, সেখানে কিন্তু কারেন্ট অ্যাকাউন্টের মতো, কোনো ইন্টারেস্ট দেওয়া হতো না। এখন অফশোর ব্যাংকিংয়ে ইন্টারেস্ট দেওয়া হবে। তিনি বলেন, বিদেশিরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যখন টাকা জমা রাখে তখন কিন্তু টাকা নিয়ে যেতে পারমিশন নিতে হয়। অফশোর হলে স্বাধীনভাবে এটা অপারেট করা যাবে। এখানে ব্যবসা করে যারা লাভবান হবেন তারা এখানে টাকা রাখতে আগ্রহী হবেন বলে আমরা আশা করছি।

এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুব হোসেন বলেন, শুধু রিজার্ভ বাড়াতেই এটি করা হচ্ছে না। অর্থনৈতিকভাবে আমরা লাভবান হব সেজন্য আমরা এটি করছি। তবে ব্যাংক কাকে লোন দেবে সেটি ব্যাংকের বিষয়। এসব অ্যাকাউন্টে যে লেনদেন হবে সেই সুদের ওপর কোনো শুল্ক আরোপ করা হবে না। ইকোনমির দিকে তাকিয়ে এটি চালু করা হচ্ছে। সরকার মনে করেছে এই পদ্ধতি অনুসরণ করে অনেক দেশ সুফল পেয়েছে। ওই অ্যাকাউন্টে কেউ টাকা রাখলে কোথা থেকে টাকা এসেছে তা কেউ জিজ্ঞাসা করবে না। ওই টাকার ওপর যে সুদ পাবেন তা নিয়ে যেতে পারবেন। যিনি ইনভেস্ট করবেন বা যে প্রতিষ্ঠান ইনভেস্ট করবে হয় সে বিদেশে থাকে নয়তো বিদেশি। সেভিং অ্যাকাউন্ট যেভাবে পরিচালনা করেন সেভাবেই এই অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করা যাবে। ওই অ্যাকাউন্টে শুধু বৈদেশিক মুদ্রা জমা দেওয়া যাবে।

এ ব্যাংকিং ব্যবস্থার কারণে সন্দেহজনক লেনদেন বা জঙ্গি অর্থায়ন সহজ হবে কি না, এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ওই অ্যাকাউন্ট থেকে বিদেশি মুদ্রাই তুলতে হবে, টাকা তোলা যাবে না।

সর্বশেষ খবর