শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
অর্থ মন্ত্রণালয়ে নির্বাচন কমিশনের চিঠি

সীমার অতিরিক্ত টাকা চায় ইসি

তিন বছরের জন্য ১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা দাবি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

সীমার অতিরিক্ত টাকা চায় ইসি

পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় মেটাতে নির্বাচন কমিশনকে যে বাজেট সিলিং (সীমা) দেওয়া হয়েছে, তার অতিরিক্ত ১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা দাবি করছে প্রতিষ্ঠানটি। কমিশন বলছে, আগামী তিন বছরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ উপনির্বাচন করতে অতিরিক্ত টাকা লাগবে; ডলারের দাম বাড়ায় কেনাকাটা করতে দুটি উন্নয়ন প্রকল্পেও বাড়তি বরাদ্দের প্রয়োজন হবে। এ পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত টাকার সংস্থান রাখতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় মেটাতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ১ হাজার ৯৩ কোটি; ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ১ হাজার ৩৬৫ কোটি; ২০২৬-২৭ অর্থবছরের জন্য ২ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ের সীমা বা সিলিং বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তবে স্থানীয় নির্বাচনসহ প্রকল্প বাস্তবায়নে বরাদ্দকৃত এ অর্থ যথেষ্ট নয় বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন। অর্থ মন্ত্রণালয় যে সিলিং বেঁধে দিয়েছে সে অনুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬২৬ কোটি; ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১৯৫ কোটি এবং পরের অর্থবছরে ৯২৩ কোটি টাকা ঘাটতি আছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কোন কোন খাতে এ ঘাটতি তারও হিসাব দেওয়া হয়েছে। কমিশন বলছে, আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পের ব্যয় বাড়ার কারণে প্রায় ৬২৬ কোটি টাকার ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ব্ল্যাঙ্ক স্মার্ট কার্ডের বাকি অর্থ পরিশোধে ব্যয় বাড়ার কারণে এ খাতে প্রায় ১৯৫ কোটি টাকার প্রয়োজন পড়বে। বাকি ৯২৩ কোটি টাকা অতিরিক্ত প্রয়োজন পড়বে নির্বাচন পরিচালনার কাজে। নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় যে বাজেট সিলিং বেঁধে দেয়, সেটা প্রতি বছর নিয়ম অনুযায়ী ১৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়; কিন্তু মন্ত্রণালয় বা সংস্থার ব্যয় এ নিয়ম মেনে চলে না। যে কোনো সময় অপ্রত্যাশিত বা জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে সিলিংয়ের অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হতে পারে। সে ব্যয় মেটাতে অতিরিক্ত বরাদ্দের বিষয়টিও অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিধানে আছে। আমরা সে বিধান মেনেই অর্থ বরাদ্দ চেয়েছি।’ সচিব আরও জানান, নির্বাচন কমিশনের নামে যে বরাদ্দ রয়েছে, তা নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। আগামী তিন বছরে স্থানীয়সহ বেশ কিছু নির্বাচন সম্পন্ন হবে। এ নির্বাচন করতেও অতিরিক্ত অর্থ লাগবে।

জানা গেছে, ২০২৬-২৭ অর্থবছরে প্রায় ৪ হাজার ৪৭৫টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এবং জাতীয় সংসদ ও অন্যান্য স্থানীয় সরকারের শূন্যপদে উপনির্বাচন সম্পন্ন করতে ১ হাজার ২৩১ কোটি টাকার বাজেট প্রাক্কলন করেছে নির্বাচন কমিশন। এ নির্বাচন সম্পন্ন করতে বাড়তি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ৯২৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০২০ সালে পাঁচ বছর মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করে নির্বাচন কমিশন। তবে করোনা মহামারির কারণে সে প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি খুবই কম। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে বাড়তি ৬২৬ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পটির আওতায় ব্ল্যাঙ্ক স্মার্ট কার্ড কেনার কথা থাকলেও তা কেনা হয়নি। ২ কোটি ৩৬ লাখ ব্ল্যাঙ্ক স্মার্ট কার্ড সংগ্রহে প্রায় ৪০৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এখন সেই কেনাকাটার জন্য বাড়তি আরও প্রায় ১৯৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ চাইছে নির্বাচন কমিশন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্মার্ট কার্ড কেনার কথা থাকলেও ডলারের দাম বাড়ায় তা কেনা যায়নি। তা ছাড়া প্রকল্পের আওতায় প্রবাসে নিবন্ধন টিম পাঠানো এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করা যায়নি। এসব কার্যক্রম শেষ করতে প্রকল্পটির বরাদ্দ বাড়ানো দরকার।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর আওতায় প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ খরচের সীমা (সিলিং) বেঁধে দেওয়া আছে। গুরুত্বপূর্ণ খাতে জরুরি প্রয়োজনে সেই সিলিংয়ের বেশি অর্থ ব্যয়ের অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালায় বা সংস্থাকে ব্যয়ের উপযুক্ত কারণ দেখাতে হবে।

 

সর্বশেষ খবর