শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

৫০০ টাকায় কোটি টাকার সোনা বহন

ধরাছোঁয়ার বাইরে চোরাকারবারিরা

বিশেষ প্রতিনিধি ঢাকা ও কলকাতা প্রতিনিধি

মাত্র ৫০০ টাকার জন্য ১ কোটি ৭৭ লাখ ৩২ হাজার ৯৬১ রুপি মূল্যের সোনা বহন করছিলেন রিপন নামে এক যুবক। এ সোনা পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল এক ভারতীয় নাগরিকের কাছে। তার আগেই বিএসএফ তাকে আটক করে। জব্দ করে   সোনা। আটক রিপনের বাড়ি বাংলাদেশের সাতক্ষীরায়। জব্দ সোনা ও আটক ব্যক্তিকে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার তেঁতুলিয়া কাস্টম অফিসে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএসএফ। রিপন গ্রেফতার হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন সোনা চোরাচালানের মূলহোতারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে চোরাচালানের সোনা প্রবেশ করছে বাংলাদেশে। আবার বাংলাদেশ থেকে এসব সোনা পাচার হয়ে যাচ্ছে পাশের দেশ ভারতে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোকে সোনা চোরাকারবারিরা নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নিয়েছেন। কখনো পায়ুপথে, কখন সোনার ডিম তৈরি করে কিংবা নেবুলাইজার মেশিনের ভিতরে করে নতুন নতুন কৌশলে বিমানবন্দর দিয়ে সোনা চোরাচালান করা হচ্ছে। আর এসব ক্ষেত্রে গ্রেফতার হচ্ছেন বাহক। বাহকের মধ্যে প্রবাসী, বিমান ক্রু, পাইলটসহ নানা পেশার লোকজন রয়েছেন। চোরাচালানে জড়িত বাহকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয় না। মূলহোতারা সব সময় টাকার প্রভাবে থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এসব ঘটনায় মামলা হলেও শনাক্ত হন না মূলহোতারা। টাকার লোভে পড়ে সোনা বহন করেন যারা, তারাই চাকরি হারিয়ে কারাগারে থাকেন অন্তরিন।

জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ১০২ ব্যাটালিয়নের অধীন উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার সীমান্তচৌকি গোবর্ধা থেকে ২৪টি সোনার বার উদ্ধার করা হয়; যার আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ৭৭ লাখ ৩২ হাজার ৯৬১ রুপি। বিএসএফ জানিয়েছে, বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে এক ব্যক্তি ভারতের দিকে প্রবেশ করছিলেন। তার গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় ধাওয়া করে আটক করা হয়। তল্লাশি করে তার কাছে ২৪টি সোনার বার পাওয়া যায়। বিএসএফের দেওয়া তথ্যমতে, আটক রিপন হাসানের বাড়ি সাতক্ষীরার বাইকারি গ্রামে। জিজ্ঞাসাবাদে রিপন জানান, বুধবার বিকাল ৫টা ৪০ মিনিট নাগাদ হাসান গাজী নামে এক বাংলাদেশি নাগরিকের কাছ থেকে ওই সোনা গ্রহণ করেন। এক ভারতীয় চোরাকারবারির কাছে তা পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। এজন্য পারিশ্রমিক হিসেবে ৫০০ বাংলাদেশি টাকা পাওয়ার কথা ছিল রিপনের। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছেন, নতুন নিয়মে বিদেশ থেকে একজন যাত্রী শুল্ক পরিশোধ করে ১১৭ গ্রাম ওজনের একটি সোনার বার আনতে পারবেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে বিশেষ করে দুবাই থেকে প্রবাসীরা যখন দেশে ফিরে আসেন, তখন সোনার বার নিয়ে আসেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের শহর দুবাইয়ে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা, বিমানবন্দর, শপিং মলসহ বিভিন্ন জায়গায় বাংলাদেশে সোনার বার নিয়ে যেতে প্রবাসীদের নানাভাবে লোভ দেখান চোরাকারবারিরা। তারা একটি বারের জন্য ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা দেবেন বলে চুক্তি করেন।

 অনেক প্রবাসী এমন লোভে পড়ে চোরাচালানের কয়েক কোটি টাকার সোনা বহন করে নিয়ে আসেন। এদের অনেকেই আটকও হন। এদের খবর আর চোরাকারবারিরা নেন না। প্রবাসী এসব যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এভাবে দুবাই থেকে প্রতিদিন সোনা আসছে বাংলাদেশে। এসব সোনা যাত্রী দিয়ে বহন করলেও দেশে পৌঁছানোর পর চলে যায় কারবারিদের হাতে। দুবাইয়ের সোনা বহনকারী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক প্রবাসী ভিজিট বা ট্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশ থেকে চাকরির জন্য দুবাই আসেন। ভিসা না থাকায় তারা চাকরি পান না। চাকরি পেলেও ট্যুরিস্ট ভিসা থাকায় অনেক কম টাকা বেতন পান। সোনা ব্যবসায়ীরা এসব প্রবাসীকে টার্গেট করেন। তাদের অর্থের লোভ দেখিয়ে নিজেদের এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেন। মৌখিকভাবে নিয়োগ পাওয়া এসব প্রবাসী দুবাইয়ে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা ও ট্যুরিস্ট স্পটে ঘুরে বেড়ান। বাংলাদেশি পর্যটকদের সঙ্গে দেখা হলেই ‘ভাই বার নেবেন’ বলে সোনা নেওয়ার অফার দেন। এভাবেই ফাঁদে পড়ছে সাধারণ মানুষ।

সর্বশেষ খবর