শনিবার, ২ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ায় শঙ্কায় আহতরা

♦ আহতরা কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়ায় ভুগছেন ♦ হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১২ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক

শঙ্কা কাটেনি রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হাসপাতালে ভর্তি থাকা ১২ রোগীর। কার্বন মনোক্সাইডের ধোঁয়ায় শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ায় এই রোগীরা ঝুঁকিতে রয়েছেন। আহত এই রোগীদের চিকিৎসার দায়িত্ব সরকার নিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।

গতকাল সকালে হাসপাতালে আহত রোগীদের চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে এসে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। আহতদের শারীরিক পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আহত ১২ জনের কেউ শঙ্কামুক্ত নন। আমাদের জানামতে, এখন পর্যন্ত ৪৬ জন মারা গেছেন। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ১০ জন, ঢাকা মেডিকেলে দুজন ভর্তি আছেন। যারা মারা গেছেন, সেটা কার্বন মনোক্সাইড পয়জনিংয়ের কারণে। এটা বদ্ধ ঘর থেকে বের হতে পারে না, তখন ওই ধোঁয়া শ্বাসনালিতে চলে যায়। (বেইলি রোডের আগুনের ঘটনায় ভুক্তভোগী) প্রত্যেকেরই তা হয়েছে। যাদের বেশি হয়েছে, তারা মারা গেছেন। যারা বেঁচে আছেন, তারা কেউ শঙ্কামুক্ত নন।’

গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে ভবনটিতে আগুন লাগে। এ সময় হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। মৃতদের বেশির ভাগেরই শরীরের বাইরের অংশে পোড়া কম ছিল। তবে কার্বন মনোক্সাইডের বিষক্রিয়ায় আহত ও মৃতদের ইন্টারনাল বার্ন হয়েছে বলে ধারণা করছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তানভীর আহমেদ। গতকাল ভর্তি রোগীদের শারীরিক অবস্থান বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান। ডা. তানভীর আহমেদ বলেন, আমাদের এখানে ১০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে একজন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রতে (আইসিইউ) ভর্তি। বাকিরা পোস্ট অপারেটিভ সেন্টারে রয়েছে। তাদের এক্সটারনাল বার্ন মারাত্মক নয়। তবে সবার শ্বাসনালি পুড়ে গেছে এবং ইন্টারনাল বার্ন হয়েছে। এই মুহূর্তে সবার অক্সিজেন সেচুরেশন ভালো রয়েছে। তবে ২৪ ঘণ্টা-৪৮ ঘণ্টা পার না হলে বোঝা যাবে না। তাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে কার্বন মনোক্সাইড শরীরে প্রবেশ করেছে। এটি মারাত্মক বিষাক্ত। এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রতঙ্গকে নষ্ট করে দেয়। অক্সিজেন গ্রহণে বাধা দেয়। ফলে যতক্ষণ না এই গ্যাস বের হচ্ছে রোগীরা শঙ্কামুক্ত নয়। যে কারণে আমরা স্পটে যাদের মৃত পেয়েছি তাদের এক্সটারনাল বার্ন খুব বেশি ছিল না। তিনি আরও বলেন, তরুণদের শরীর থেকে এটি দ্রুত বের হয়ে যায়। তবে কারও যদি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনি রোগ থাকে তাহলে তিনি সহজে কার্বন মনোক্সাইড মুক্ত হতে পারেন না। এর সেকেন্ডারি ইনফেকশনের জন্য যদি কোনো অঙ্গপ্রতঙ্গ অকেজো হয়ে যায় তখন তার বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে শুরু করবে। সে সময় তাদের আমরা মেডিসিন বিভাগে রেফার্ড করব। আমরা সর্বোচ্চ ভালোটা আশা করছি। তবে নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়।

কার্বন মনোক্সাইডের সম্ভাব্য উৎসের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের যে ইন্টেরিয়র ডিজাইন করা হয় তাতে হাইড্রো কার্বন থাকে। এ ছাড়া মিথেন গ্যাস পুড়ে কার্বন মনোক্সাইড ও ডাইঅক্সাইড তৈরি হয়। হাইড্রো কার্বন থেকে ডাই ও মনোক্সাইড তৈরি হয়। এটি মারাত্মক বিষাক্ত, এমনকি তাৎক্ষণিক মৃত্যুও হতে পারে। আমরা ধারণা করছি কার্বন মনোক্সাইডের কারণেই এত বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ও আমাদের এখানে ভর্তিদের অবস্থা দেখে এমন মনে হয়েছে। আমাদের এখানে সবাই অল্প পোড়া নিয়ে ভর্তি। এ ছাড়া বাকিরা যারা ছাড়া পেয়েছে তাদের হাতে বা অন্যান্য বহিঃঅঙ্গে সামান্য পোড়া ছিল বলেও জানান তিনি।

বোর্ড গঠন বিষয়ে ডা. তানভীর বলেন, শুক্রবার রাতেই আমাদের বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মেডিকেল বোর্ডের সবাই রোগীদের দেখে গেছেন। আমাদের সব সেটআপ রয়েছে। প্রতিদিন আমরা গড়ে ১২০ জন রোগীকে সেবা দিয়ে থাকি। বার্নের অনেকগুলো ধরন রয়েছে জানিয়ে এই সহযোগী অধ্যাপক বলেন, আমরা পানি ও আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে অভ্যস্ত ছিলাম। এখন আমাদের দেশে বৈদ্যুতিক বার্ন ও এ ধরনের বিষক্রিয়ার বার্ন বাড়ছে। এ ধরনের বার্ন শতাংশ দিয়ে বিবেচনা করলে হবে না। এক সময় অ্যাসিড বার্ন ছিল। অল্প অ্যাসিড ছুড়ে মারত, কিন্তু বিকৃতি হতো ভয়ানক পর্যায়ের। তেমনি বৈদ্যুতিক বার্নে বাইরে অল্প পোড়ে অথচ হার্ট, কিডনি ও লিভার পুড়ে যায়।

সর্বশেষ খবর