সোমবার, ৪ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
ডিসি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

মজুতদারির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

♦ ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড অনুসরণ নিশ্চিত করুন ♦ কিছু ব্যবসায়ী সবসময় মজুতদারি করে, পণ্যের দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটতে চায়

প্রতিদিন ডেস্ক

মজুতদারির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষ করে মাঠপর্যায়ের প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে রমজানকে সামনে রেখে যে কোনো ধরনের খাদ্য মজুত ও ভেজালের বিরুদ্ধেও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

গতকাল তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) চার দিনব্যাপী বার্ষিক সম্মেলন উদ্বোধনকালে তিনি এ নির্দেশ দেন। খবর বাসসের

জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

বিভাগীয় কমিশনারদের পক্ষে বক্তব্য দেন ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম এবং জেলা প্রশাসকদের পক্ষে বক্তব্য দেন চট্টগ্রামের ডিসি আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ও গাইবান্ধার ডিসি কাজী নাহিদ রসুল। অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্ভাবন, সেবা এবং সার্বিক উন্নয়নের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, বিল্ডিং কোড অনুসরণ করে সঠিকভাবে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে কি না তা সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শুধু সিটি করপোরেশন এলাকায় নয়, দেশের অন্যান্য স্থানেও এটি অনুসরণ করতে হবে। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস সরবরাহের ব্যবস্থা, বৃষ্টির পানি       সংরক্ষণের ব্যবস্থা রেখেই নির্মাণ করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের ফসলি জমিকে রক্ষা করতে হবে। সরকার দেশের উন্নয়ন করছে, পাশাপাশি দেশের মানুষের অধিকারও নিশ্চিত করা দরকার।

শেখ হাসিনা বলেন, কভিড-১৯ মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া  যুদ্ধের প্রভাব  বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়েছে। পৃথিবীতে এখন এমন দেশও রয়েছে যেখানে মূল্যস্ফীতি ৪০ ভাগে উঠে গেছে। বাংলাদেশও এর থেকে দূরে নয়, যদিও বাংলাদেশে এখনো মূল্যস্ফীতি ১০ ভাগের নিচে রয়েছে। তারপরও সমস্যা রয়ে গেছে। আমাদের সব সময় লক্ষ্য রাখতে হবে বাজার পরিস্থিতি কেমন রয়েছে। তিনি বলেন, সামনে রমজান মাস আসছে। এ সময় কিছু কিছু ব্যবসায়ী সব সময় মজুতদারি করে, পণ্যের দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটতে চায়। সেদিকে আমাদের নজর দিতে হবে, কেননা এটি আমাদের আশুকরণীয় কাজ। তিনি বলেন, কোথাও যেন ভোক্তাদের কোনোরকম হয়রানির শিকার হতে না হয়। আমাদের দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে। পরনির্ভরশীলতা কমাতে হবে, আর এটা যে আমরা করতে পারি সেটা কিন্তু আমরা অনেক ক্ষেত্রে প্রমাণ করেছি। সেদিকে একটু নজর দেওয়া একান্তভাবে দরকার। শেখ হাসিনা বলেন, আরেকটি বিষয় হচ্ছে সরবরাহ। সেটা নিয়েও সমস্যার সৃষ্টি হয় অথবা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। কেউ কেউ মজুতদারি করে। পণ্য পচিয়ে ফেলবে তবু বাজারে ছাড়বে না। সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়ে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। তিনি বলেন, রমজান মাসকে সামনে রেখেই এ কথাগুলো আমি সবার আগে বললাম। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যথাযথভাবে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দিকে সবাইকে নজর দিতে হবে। তিনি খাদ্যে ভেজাল দেওয়া প্রতিরোধেও জেলা প্রশাসকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, রোজা এলেই এ সমস্যাগুলো বেশি পরিমাণে দেখা দেয়। এগুলোর দিকেও নজর দেওয়া একান্তভাবে দরকার।

সমাজে কিশোর গ্যাং সমস্যা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাবে এবং পড়াশোনা করবে সেই সময় এ সমস্যাটা দেখা দেয়। এটি কভিড-১৯ চলার সময় বিস্তার লাভ করেছে। এজন্য এলাকাভিত্তিক নজরদারি বাড়াতে হবে। যারা লেখাপড়া করবে তারা তা না করে কেন বিভিন্ন অসামাজিক কাজে জড়াবে। এ ব্যাপারে কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকদের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভিভাবকদের নিয়ে সবার মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, যেন কারও ছেলেমেয়ে এ ধরনের কিশোর গ্যাং, জঙ্গি, সন্ত্রাস ও মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়তে না পারে। সেজন্য প্রতিটি পরিবারকে নিজের সন্তান-সন্ততিদের প্রতি নজরদারি বাড়াতে হবে। প্রতিকারের থেকে প্রতিরোধের দিকে মনোনিবেশের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পরিবারগুলোকে একটু সচেতন করতে হবে, শুধু গ্রেফতার করে বা ধরে লাভ নেই। সে ক্ষেত্রে সেখানে থাকা বড় অপরাধীদের সংস্পর্শে এসে এরা আরও বড় কোনো ধরনের অপরাধ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যেতে পারে। সে কারণে গোড়া থেকেই আমাদের ধরতে হবে এবং পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে। তিনি মাঠপর্যায়ের প্রশাসনকে জনগণকে কর প্রদানে উৎসাহিতকরণ ও সচেতনতা সৃষ্টি, সার্বজনীন পেনশন স্কিম গ্রহণ, সমবায়ের মাধ্যমে কৃষিকে উৎসাহিতকরণ, সেচ কাজে সোলার প্যানেলের ব্যবহার নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ ও সমন্বিত বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলার এবং দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।

পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সচেতনতা সৃষ্টি, ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার রোধ করে ভূ-উপরিস্থ জলাধার সংরক্ষণ ও এর ব্যবহার নিশ্চিত করা, লবণাক্ততা প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় খননকাজ চালানো, জনগণের সুপেয় পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে পানি শোধনাগারগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচিগুলো সম্পর্কে তদারকি নিশ্চিত করা ও যথাযথ প্রাপ্যরাই এর সুবিধা পাচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করা, আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোর উপকারভোগীদের খোঁজখবর নেওয়া ও তাদের সমস্যার সমাধান, যুবসমাজকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠায় সরকারের সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগানোয় উৎসাহিত করার এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী করে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে কারিগারি শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যত বেশি ছেলেমেয়ের খেলাধূলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাে  অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে তত বেশি সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, মাদকসহ তাদের মাঝে বিভিন্ন অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে। এজন্য তিনি উপজেলা-ভিত্তিক মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রকল্পগুলার দ্রুত বাস্তবায়ন এবং বছরজুড়ে শিক্ষার্থীদের জন্য নানারকম প্রতিযোগিতার আয়োজনে জেলা প্রশাসনকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান। সরকারের প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও মাঠপর্যায়ের প্রশাসনকে নজর রাখার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না এবং এগুলো কতটুকু স্থানীয় জনগণের কাজে আসবে সে বিষয়ে প্রয়োজনে তাঁকে সরাসরি রিপোর্ট দেওয়ার আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছে। এখন লক্ষ্য ২০৪১ সাল নাগাদ জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা। তিনি ১৯৭২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে জাতির পিতার ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরে সরকারি কর্মচারীদের জনগণের সেবায় আরও আত্মনিয়োগের আহ্বান জানান। জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘সরকারি কর্মচারী ভাইয়েরা আপনাদের জনগণের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। এখন থেকে অতীতের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করে নিজেদের জনগণের খাদেম বলে বিবেচনা করতে হবে।’ তিনি বলেন, এই জনগণের অর্থেই তো আপনারাও চলেন, আর আমরা যারা এখন মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী তারাও চলি। কাজেই জনগণের সেবা করাটাই আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। তাদের সেবা করতে হবে। সেটা মাথায় রেখেই সব কাজ আমাদের হাতে নিতে হবে এবং সম্পন্ন করতে হবে। ‘সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধারাবাহিকভাবে সরকারে আছি তার মানে এই নয় যে, ক্ষমতাকে শুধু ভোগ করতে এসেছি। তিনি বলেন, ‘আমি আমার বাবার মতোই বলতে চাই- আমি জনগণের সেবক। জনগণকে সেবা দিতে এবং তাদের জন্য কাজ করতে এসেছি। লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত আমাদের পতাকা, আমাদের স্বাধীনতা। একথা আমাদের ভুললে চলবে না।’

সর্বশেষ খবর