শিরোনাম
সোমবার, ৪ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

হাসপাতালে অভিযান সারা বছর

► চিকিৎসাসেবায় গাফিলতিতে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি ► ডিসিরা বললেন নানা সীমাবদ্ধতা ও জনবল সংকটের কথা চিকিৎসক নার্সের তুলনায় রোগী বেশি কম বরাদ্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অবৈধ ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান আরও জোরদার করা হবে। এ অভিযানে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সার্বিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডিসি সম্মেলন ২০২৪ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী পর্র্ব শেষে বিকাল থেকে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে কার্য অধিবেশন শুরু হয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে। চার দিনব্যাপী এই সম্মেলনে আলোচনার জন্য ৩৫৬টি প্রস্তাব দিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিরা।

মন্ত্রী-সচিবদের উপস্থিতিতে এসব প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে এবং আলোচনা করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কার্য অধিবেশন শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন  বলেন, আমরা সম্প্রতি একটি অভিযান শুরু করেছি অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাধ্যমে আমরা সারা দেশেই অভিযান পরিচালনা করছি। ডিসি সম্মেলনে এ অভিযানগুলোতে ডিসিদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর থেকে অভিযানে যে টিম যাবে তাদের যেন সর্বাত্মক সহায়তা করা হয়। কারণ মন্ত্রণালয়ের তো জুডিশিয়াল ক্ষমতা নেই, সেটা ডিসিদের রয়েছে। এ অভিযান যাতে সুষ্ঠুভাবে হয়, কোনো ধরনের প্রতারণা না হয় এবং এ কাজে কোনো ধরনের বাধা এলে আমাদের অবহিত করেন। এটাই ছিল তাদের কাছে মূল বিষয়, যাতে সারা বছর সুষ্ঠুভাবে অভিযানটা পরিচালনা করতে পারি।

মন্ত্রী আরও বলেন, জেলা প্রশাসকরা আমাদের চিকিৎসাসেবায় নানা সীমাবদ্ধতা ও জনবল সংকটের বিষয়ে জানিয়েছেন। বিশেষ করে তাদের এলাকার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক-নার্সের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি, এমনকি হাসপাতালগুলোতে রোগী অনুপাতে টাকা বরাদ্দ নেই, যার ফলে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তাদের বলেছি, আমার পক্ষ থেকে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব সমস্যাগুলো সমাধানের। ডিসি সম্মেলনে জনবল সংকটের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ছিল কি না জানতে চাইলে সামন্ত লাল বলেন, জনবল আমরা নিয়োগ করছি। একবারে তো সবকিছু সম্ভব নয়, পর্যায়ক্রমে করা হবে। এজন্য সময় লাগবে। হাসপাতালে বেডের থেকে রোগী বেশি থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এতে হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে, ডাক্তাররা হিমশিম খাচ্ছেন এত রোগী নিয়ে। আমরা পর্যায়ক্রমে আস্তে আস্তে সমাধানের দিকে এগিয়ে যাব।

এ সময় নতুন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী রোকেয়া সুলতানা বলেন, চিকিৎসাসেবায় গাফিলতি করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকার বিষয়ে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় ডাক্তার থাকে না, ঠিক আছে। তবে হাসপাতালে বেডে ও মেঝেতে যেসব রোগী থাকে তাদের সবাইকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ডাক্তাররা যে সার্ভিসটা দিচ্ছেন সেটাও বলতে হবে। যাতে করে তারা উৎসাহিত হন। তবে চিকিৎসাসেবায় গাফিলতি করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রান্তিক অভিভাবক ও শিক্ষকরা নতুন কারিকুলামকে গ্রহণ করেছেন :  শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ডিসিদের দিকনির্দেশনা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, জেলা প্রশাসকরা অনেক বিষয়ই তুলে এনেছেন। তবে ভালো দিক হচ্ছে, আমাদের নতুন শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে তারা কোনো নেতিবাচক অভিজ্ঞতার কথা জানাননি। অর্থাৎ মাঠপর্যায়ে প্রান্তিক অভিভাবক ও শিক্ষকরা নতুন কারিকুলামকে সাদরে গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, কারিগরি শিক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি করার কথা তারা উল্লেখ করেছেন। শিক্ষায় এখন যে ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে, তার সঙ্গে জেলা প্রশাসনের একটা সমন্বয় গড়ে ওঠে, সে বিষয়টিও উঠে এসেছে। এ সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রুমানা আলীসহ সংশ্লিষ্ট সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, অনিবন্ধিত কওমি মাদরাসার নিবন্ধনের বিষয়ে আলোচনা করা হবে, সেই সঙ্গে সাধারণ শিক্ষাক্রম যেন প্রাথমিক পর্যায়ে পড়ানো হয় সেটা নিয়ে বেফাকের সঙ্গে আলোচনা হবে। অনিবন্ধিত মাদরাসার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জেলা প্রশাসকরা এ বিষয়ে বলেছেন। অনুমোদনের বাইরে যেসব মাদরাসা খোলা হচ্ছে সেটা মোটেও উচিত নয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে। নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে। আমরা অনিবন্ধিত মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসব। ইতোমধ্যে আমরা বসেছিও।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কারিগরি শিক্ষা শুধু মাদরাসা পর্যায়ের জন্য নয়, এটা সবার জন্যই প্রযোজ্য। এখানে প্রশিক্ষকের প্রয়োজন রয়েছে। সেক্ষেত্রে যারা ডিপ্লোমা শিক্ষার্থী রয়েছে, তাদের কীভাবে প্রশিক্ষিত করতে পারি, সে বিষয়ে কাজ চলছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেখানে নির্যাতন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে, কমিটি থাকুক বা না থাকুক, পুলিশ তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অনেক ক্ষেত্রে এটা হয় যে কমিটি তদন্ত করছে, এই অজুহাতে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। প্রচলিত আইনের কার্যক্রম চলমান থাকে, তদন্ত কমিটির অজুহাতে যাতে বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত না হয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কিন্ডারগার্টেন নিয়ে নীতিমালা হয়েছে উল্লেখ করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। এতে সামনে নজরদারিতে আসবে বলেও জানান তিনি। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডিসি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সম্পর্কিত কার্য অধিবেশনে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানিযোগ্য পণ্য বহুমুখীকরণ, চামড়াজাত শিল্পের উন্নয়ন ও চামড়া রপ্তানির বিষয়ে গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে রোজার মাস সামনে রেখে তেল, চিনি ও চালের দাম নিয়ন্ত্রণ, প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করা এবং সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানানো হয়।

সর্বশেষ খবর