সোমবার, ৪ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

বেইলি রোডের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রিট

তিনজন এখনো আশঙ্কাজনক, জরিমানার পরও টনক নড়েনি গ্রিন কোজি কটেজ মালিকের যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের শোক সমবেদনা পুনরাবৃত্তি রোধের দাবি ৪৮ নাগরিকের

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটে দোষীদের খুঁজে বের করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রিটে সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আদালতে দাখিল করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

গতকাল জনস্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইসরাত জাহান সান্ত¡না এ রিট দায়ের করেন। অন্যদিকে বেইলি রোডসহ সব আবাসিক স্থাপনায় রেস্টুরেন্ট বন্ধের নির্দেশনা জারির আর্জি জানিয়ে পৃথক আরেকটি রিট আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউনূস আলী আকন্দ। এই রিটে বেইলি রোডের অগ্নিকান্ডে প্রকৃত দায়ীদের গ্রেফতার এবং হতাহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে।

৫ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ চেয়ে লিগ্যাল নোটিস : বেইলি রোডে আগুন লেগে ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের প্রত্যেককে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে লিগ্যাল নোটিস পাঠানো হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. সোলায়মান (তুষার) গতকাল সংশ্লিষ্টদের ডাকযোগে এ আইনি নোটিস পাঠান।

জরিমানার পরও টনক নড়েনি গ্রিন কোজি কটেজ মালিকের : নিয়ম ভঙ্গের অপরাধে রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবন মালিককে জরিমানা করেছিল রাজউক (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ)। ভেঙে দেওয়া হয়েছিল ভবনের একটি অংশ। তবুও টনক নড়েনি তাদের। ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের তিন দফা চিঠি তাদের ছায়াও স্পর্শ করতে পারেনি। ভবন মালিকদের এহেন অপকর্ম ও ঔদ্ধত্যের বলি হয়েছেন ৪৬ জন নিরীহ মানুষ। হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন আরও পাঁচজন। এ ছাড়া জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তিনজন রয়েছেন।

রাজউক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি অভিযান চালিয়ে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের একটি অংশ ভেঙে দিয়েছিল রাজউক। সে সময় ভবনের অননুমোদিত অংশ ভেঙে দেওয়া হয়। এবার ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর রাজউক জানিয়েছে, ভবনটিতে অফিস করার অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল। রেস্তোরাঁ করতে নয়। অথচ গ্রিন কোজির বিভিন্ন তলায় গোটা দশেক রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকান ছিল। নিচতলার একটি চা-কফির দোকান থেকেই আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের শোক ও সমবেদনা : রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকান্ডে প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান। গতকাল ভিন্ন ভিন্ন বার্তায় দুই দেশের পক্ষ থেকে এই শোক জানানো হয়। গতকাল ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের বার্তায় উল্লেখ করা হয়, ‘বেইলি রোডে মর্মান্তিক অগ্নিকান্ডে নিহতদের পরিবার এবং আহতদের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা। হৃদয়বিদারক এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে আমরা স্মরণ করছি।’ উল্লেখ্য, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার বেইলি রোডের একটি রেস্টুরেন্টে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।

অন্যদিকে, জাপান দূতাবাস জানায়, অগ্নিকান্ডের পর জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামিকাওয়া ইয়োকো এক শোক বার্তায় বলেছেন, ‘ঢাকার একটি শপিং মলে বড় ধরনের অগ্নিকান্ডে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতিতে আমি ভীষণ মর্মাহত। ওই ঘটনার ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের জন্য আমার প্রার্থনা রইল। শোকাহত পরিবারগুলোর প্রতি জানাচ্ছি গভীর শোক-সমবেদনা। বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে আমি গভীর সমবেদনা জানাই।

৪৮ নাগরিকের বিবৃতি : দেশে একের পর এক অগ্নিকান্ড হচ্ছে। কিন্তু অগ্নিদুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার বা প্রতিকার ভুক্তভোগীরা এখনো পাননি। এ ধরনের অব্যবস্থা, বিচারহীনতা, প্রতিকারবিহীন অবস্থা অব্যাহতভাবে চলতে পারে না। সম্প্রতি বেইলি রোডে অগ্নিকান্ডে মৃত্যুদের প্রতি শোক জানিয়ে ও এর পুনরাবৃত্তি রোধে ব্যবস্থা দাবি করে গতকাল ৪৮ বিশিষ্ট নাগরিক এক বিবৃতি দিয়েছেন।

বিবৃতিতে তারা বলেছেন, অগ্নিকান্ডে ২০১০ সালে নিমতলীতে ১২৪ জন, ২০১৯ সালে চকবাজারে ৭১ জনসহ আরও প্রাণ হারিয়েছেন। এর আগে যে ঘটনা ঘটেছে, তা থেকে বেইলি রোডের অগ্নিদুর্ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন করে ভাবার উপায় নেই। আগের অগ্নিদুর্ঘটনারই ধারাবাহিকতা। আগের অগ্নিদুর্ঘটনা থেকে জানা গেছে, এর জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের এবং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তব্যে চরম অবহেলাই মূলত দায়ী।

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন মানবাধিকারকর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, নিজেরা করির সমন্বয়ক খুশী কবির, মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদের সচিব আলী ইমাম মজুমদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর