সোমবার, ৪ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

তীব্র লড়াই রাখাইনে, গুলির শব্দে নির্ঘুম সীমান্তবাসী

মিয়ানমারে যুদ্ধ

কক্সবাজার ও টেকনাফ প্রতিনিধি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ চলছে। আবারও মুহুর্মুহু গোলাগুলি আর মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দে অজানা আতঙ্ক ভর করেছে টেকনাফের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। নির্ঘুম রাত কাটছে সীমান্তবাসীর। পরিস্থিতি নাজুক হওয়ায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ডের টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ছাড়া পাশের উপজেলা উখিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাননি সীমান্তের বাসিন্দারা।

কোস্টগার্ড চট্টগ্রাম পূর্ব জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তাহসিন রহমান বলেন, ওপারের চলমান যুদ্ধের পরিস্থিতিতে নাফ নদ দিয়ে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা থেকে আমরা টহল জোরদার রেখেছি। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, মংডুর আশপাশের গ্রামে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটলেও রবিবার পর্যন্ত টেকনাফ সীমান্তে গুলি এসে পড়ার খবর পাওয়া যায়নি। সীমান্ত এলাকার লোকজনকে নিরাপদ দূরত্বে সতর্ক অবস্থায় থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, টেকনাফের চারটি ইউনিয়ন হোয়াইক্যং, হ্নীলা, টেকনাফ সদর ও সাবরাং এবং উখিয়ার পালংখালীর বিপরীতে নাফ নদের ওপারে শত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে রাখাইন রাজ্য। উত্তর-দক্ষিণ লম্বা রাখাইন                রাজ্যের মধ্যভাগে (টেকনাফ পৌর শহরের বিপরীতে) মংডু টাউনশিপের অবস্থান। মংডুর পশ্চিমে নাফ নদ, পেছনে আকাশছোঁয়া কালাদান পাহাড়। তিন দিন ধরে মংডু শহরের উত্তর দিকের কুমিরখালী, নাইচাডং, কোয়াচিদং, শিলখালী, বলিবাজার, কেয়ারিপ্রাং, পেরাংপুরু গ্রামে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। সেখানে সীমান্তচৌকি দখল এবং পুনরুদ্ধার নিয়ে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, মংডুর রাচিডং-বুচিডং টাউনশিপেও সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির তুমুল সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে। আরাকান আর্মি মংডু শহরকে তিন দিক থেকে ঘিরে হামলা চালাচ্ছে। রাখাইন রাজ্যের পশ্চিম দিকের নাফ নদ অংশের নিয়ন্ত্রণ এখনো সরকারি বাহিনীর হাতে আছে। উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আরাকান আর্মি মংডু টাউনশিপের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ দিক ঘিরে রেখেছে। এখন তারা মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া। অন্যদিকে সরকারি বাহিনীও আরাকান আর্মিকে রুখতে সর্বশক্তি নিয়োগ করছে। তাতে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল আকার ধারণ করছে। গত শনিবার সারা রাত কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যং ও হ্নীলা ইউনিয়ন সীমান্তে থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ ভেসে এসেছে। গতকাল সকালেও শোনা যায় মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ। রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও জান্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে মর্টার শেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দে নাফ নদের এপারে টেকনাফ পৌর শহর, হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নে সীমান্তবাসীর মাঝে অজানা আতঙ্ক ভর করেছে। নাফ নদের তীরে টেকনাফের নাইট্যপাড়ার পাহাড়ের নিচে ছোট্ট বসতঘরে সপরিবার থাকেন ইজিবাইক চালক অলি আহমদ। শনিবার গভীর রাতে যখন ওপারে বিকট শব্দে মর্টার শেলের বিস্ফোরণ ঘটে, তখন তিনি নদীর তীরে এসে দেখেন ওপারে আগুনের ফুলকি, আকাশে কালো ধোঁয়া। অলি আহমদ বলেন, তিন দিন ধরে মংডু শহরের উত্তরের কয়েকটি গ্রামে সবচেয়ে বেশি মর্টার শেল বিস্ফোরণ হচ্ছে। তবে কারা এগুলো নিক্ষেপ করছে তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। সীমান্তে বসবাসকারী লোকজন বলছেন, তিন দিন সীমান্ত পরিস্থিতি শান্ত থাকার পর গত বৃস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে নতুন করে শুরু হয় গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপ। তবে দিনের চেয়ে রাতে যুদ্ধের তীব্রতা বাড়ে অনেক। তখন আকাশপথে হামলার পাশাপাশি মর্টার শেল ছোড়া হয়। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধের কারণে নাফ নদে নেমে স্থানীয় বাংলাদেশি লোকজনের মাছ ও কাঁকড়া আহরণ বন্ধ রয়েছে। হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলম বলেন, সীমান্তে গোলাগুলি বাড়ায় স্থানীয়দের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। টেকনাফ পৌরসভার নাফ নদের কাছাকাছি বসবাসকারী ইবনে আমিন বলেন, গত শনিবার সন্ধ্যা থেকে রবিবার ভোর পর্যন্ত মংডুর আশপাশের কয়েকটি গ্রামে ২০-২৫টি মর্টার শেলের বিস্ফোরণ ঘটে। অনেক সময় ভারী শব্দে মনে হয় ভূমিকম্প হচ্ছে। এদিকে শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া না গেলেও এখনো দ্বীপের জেটিতে মানুষ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার দোকানদার আবদুল শুক্কুর। তিনি বলেন, নাফ নদে কোস্টগার্ড এবং সীমান্তে বিজিবির টহল অব্যাহত রয়েছে। জেটি বন্ধ থাকায় আমাদের ব্যবসায় ব্যাপক লোকসান হচ্ছে। এখনো মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা।

সর্বশেষ খবর