শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একই মামলায় আরও সাত আসামির জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আস-সামছ জগলুল হোসেনের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন তারা। শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল মামুন শুনানি করেন। এদিন বেলা ২টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসেন ড. ইউনূস। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালক পারভীন মাহমুদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী।
জামিনের পর ড. ইউনূস সাংবাদিকদের বলেন, এটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা হয়ে থাকবে। এ ঘটনা শুধু দেশের মানুষ নয়, সারা দুনিয়ার মানুষ খেয়াল করছে। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পক্ষে লিখুন, বিপক্ষে লিখুন, কোনো অসুবিধা নেই। আজকের (গতকাল) ঘটনাটি ইতিহাসের অংশ।
ড. ইউনূস বলেন, একজন নোবেলজয়ীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে। মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে। কেবল আমি একা নই, আমার সঙ্গে আরও সাতজনের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্য অভিযুক্তদের বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ এখানে চাকরি করতে আসেননি। তাদের জীবন দানের জন্য এখানে এসেছেন। তারাও অর্থ আত্মসাৎ, জালিয়াতি এবং মানি লন্ডারিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত।এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। গতকাল এ মামলায় চার্জশিট আমলে নেওয়ার জন্য ধার্য ছিল। চার্জশিটভুক্ত ১৪ আসামি হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান, শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দফতর সম্পাদক কামরুল হাসান ও প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম।
গত বছরের ৩০ মে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ড. ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। সংস্থার উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল থেকে জামিন : এর আগে সকালে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের করা মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। ঢাকার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) এম এ আউয়াল (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) গতকাল এ আদেশ দেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। এ মামলায় পরবর্তী শুনানির জন্য ১৬ এপ্রিল দিন ঠিক করেছেন আদালত। ড. মুহাম্মদ ইউনূস শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন।