মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

আগুনের কারণ অনুসন্ধানে কমিটি

তিন রিটের শুনানি নিয়ে আদেশ হাই কোর্টের

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেইলি রোডসহ অতীতের বিভিন্ন অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাই কোর্ট। আগামী চার মাসের মধ্যে কমিটিকে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রতিনিধি সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকা শহরের আবাসিক, বাণিজ্যিক ভবন-স্থাপনায় পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আছে কি না, আইন-বিধি অনুসারে প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে। পাশাপাশি রাজধানীর অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের চিহ্নিত আবাসিক, বাণিজ্যিক ভবন-স্থাপনার সামনে দৃশ্যমান জায়গায় ‘সতর্কতা নোটিস’ টাঙাতে বা প্রদর্শন করতেও নির্দেশ দিয়েছেন হাই কোর্ট। বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জনস্বার্থে করা দুটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গতকাল বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন-২০০৩ ও বিধি অনুসারে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ার নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, রাজউক চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে পৃথক আরেকটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বেইলি রোডের আগুনে নিহতদের পরিবার ও আহতদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাই কোর্ট। মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ২৯ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিচ্ছেন আহত বেশ কয়েকজন। ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ, অগ্নিকাণ্ডের কারণ এবং অগ্নিকাণ্ডে দায়ীদের খুঁজে বের করতে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে গত রবিবার হাই কোর্টে জনস্বার্থে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ ও আইনজীবী ইসরাত জাহান সান্ত্বনা। আদালতে রিটের পক্ষে তাঁরা নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।

আদেশের পর অমিত দাশগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে আইন অনুসারে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাই কোর্ট। সেই সঙ্গে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। এ কমিটিকে চার মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন-২০০৩ ও বিধি অনুসারে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না, আবাসিক-বাণিজ্যিক ভবন-স্থাপনায় পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে এ কমিটি। পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে নিরাপত্তামূলক আরও কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে বিষয়ে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে হবে কমিটিকে।

গত বছরের অগ্নিকাণ্ডের হিসাব জানতে চান হাই কোর্ট : এদিন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং ওই অগ্নিকাণ্ডে নিহত তানজিনা নওরীনের পরিবারের সদস্যের করা আরেক রিটে আদেশ দেন হাই কোর্টের আরেকটি বেঞ্চ। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাই কোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত ঢাকা শহরে বহুতল ভবন, কারখানা ও স্থাপনায় কয়টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে, এতে কতজন হতাহত হয়েছে, জানমালের কী কী ক্ষতি হয়েছে এবং অগ্নিকাণ্ডে দায়ীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়েছেন হাই কোর্ট। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে এ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

প্রতিটি বহুতল ভবন, কারখানা, স্থাপনায় অগ্নিনিরাপদ কক্ষ ও সিঁড়ি নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন-২০০৩ ও বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড-২০২০-এর বিধান অনুসারে প্রতিটি বহুতল ভবন, কারখানা ও স্থাপনায় অগ্নিনিরাপদ কক্ষ ও সিঁড়ি যুক্ত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং ঢাকা শহরের আবাসিক এলাকায় ব্যবসাবাণিজ্য চালানোর নির্বিচার অনুমতি কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। এ রিটে শুনানি করেন আইনজীবী সারা হোসেন, আনীক আর হক। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. শাহীনুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ। আইনজীবী সারা হোসেন পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ আদালত যে প্রতিবেদন চেয়েছেন, সে প্রতিবেদন এলে তার পরিপ্রেক্ষিতে আরও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা আদালতের কাছ থেকে পাব বলে আশা করছি।’

সর্বশেষ খবর