‘চা চুমুক’ নামে দোকানের একটি ইলেকট্রিক কেটলি থেকে গ্রিন কোজি কটেজের আগুনের সূত্রপাত। ক্রমেই তা ভয়ংকর হয়ে ওঠে। অল্প সময়ের ব্যবধানে ছড়িয়ে পড়ে ভবনটির বিভিন্ন ফ্লোরে। নির্মম মৃত্যু হয় ৪৬ তাজা প্রাণের। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হওয়া চারজনের মধ্যে দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য পেয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। পুলিশ জানায়, দুই দিনের রিমান্ড শেষে চারজনকে গতকাল আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাদের আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত কাচ্চি ভাইয়ের ম্যানেজার জেইন উদ্দিন জিসান, চা চুমুকের মালিক আনোয়ারুল হক ও শফিকুর রহমান রিমন এবং গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের ম্যানেজার হামিমুল হক বিপুলের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একই সঙ্গে তাদের জামিন শুনানির জন্য মঙ্গলবার (৫ মার্চ) দিন ধার্য করেন।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আগুনের ঘটনায় গ্রেফতার চারজনের মধ্যে ভবনটির নিচ তলার চা চুমুকের মালিক আনোয়ারুল হক ও শফিকুর রহমান রিমন রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য আরও যাচাইবাছাই করা হবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ এ মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পাচ্ছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
ফের হাসপাতালে ভর্তি আরও একজন : চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেলেও ফের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ফারদিন নামে একজন। নতুন করে শারীরিক (শ্বাসকষ্ট) সমস্যা দেখা দেওয়ায় তাকে পুনরায় গতকাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক মো. তরিকুল ইসলাম। বাকি পাঁচজনের অবস্থাও ‘ভালোর দিকে’ জানিয়েছেন তিনি।গতকাল বার্ন ইনস্টিটিউটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে আহত চারজন ভর্তি আছেন। তারা হলেন রাকিব (২৫), মেহেদী হাসান (২২), সুমাইয়া আকতার (৩১) ও ফারদিন (১৮)। সার্জন তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে বৃহস্পতিবার রাতে আমাদের এখানে ১৪ জন রোগী এসেছিলেন। এখানে চারজন এখন পর্যন্ত ভর্তি আছেন। তাদের সবারই অল্প অল্প শ্বাসকষ্ট, কাশি ও বুকে ব্যথা আছে। আমরা পুরোপুরি কনফার্ম না হওয়া পর্যন্ত কাউকে ছাড়ছি না। তারা সম্পূর্ণ সুস্থ হলেই ছাড়ব।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একেবারে সুস্থ হয়ে বাড়ি না যাওয়া পর্যন্ত কাউকেই আমরা শঙ্কামুক্ত বলতে পারছি না। এটা আসলে বাহ্যিক বার্ন নয়, এটা রক্তে কার্বন মনোক্সাইড পয়জনিংয়ের জন্য। একটা নির্দিষ্ট সময় পার না হওয়া পর্যন্ত আবার ফেরত আসতে পারে। তাদের অবস্থা আগে থেকে ভালো হচ্ছে। আমরা আশাবাদী তারা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবেন।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জুবায়ের আহমেদ (২৫) ও ইকবাল হোসেন (২৩) নামে দুজন চিকিৎসাধীন আছেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এখানে দুজন রোগী ভর্তি আছেন। তারা সুস্থতার দিকে, অবজারভেশনে আছেন।’
ডিএনএ নমুনা দিলেন বৃষ্টির বাবা : বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে নিহত সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রী ওরফে বৃষ্টি খাতুনের পরিচয় নিশ্চিতে তার বাবা দাবি করা সবুজ শেখ ডিএনএ নমুনা দিয়েছেন। সবুজ শেখ বলেন, ‘মেয়ের মৃতদেহ নিশ্চিতের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার ডিএনএ নমুনা নেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে শিগগির ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট জানা যাবে।’
ডিএমপির রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম জানান, পরিচয় নিশ্চিতে মেয়েটির বাবা দাবি করা ব্যক্তির ডিএনএ নমুনা নেওয়া হয়েছে। ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট পেতে কিছুটা সময় লাগে। সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রী ওরফে বৃষ্টি খাতুনের পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। এর ফলে মৃতদেহ হস্তান্তরে দেখা দেয় জটিলতা। এ অবস্থায় এখনো মর্গের হিমঘরে পড়ে আছে তার মৃতদেহ। ওই নারীর মৃতদেহ নিতে কুষ্টিয়ার খোকসা থেকে বাবা ও মা দাবি করা সবুজ শেখ ও বিউটি বেগম ছাড়া অন্য কেউ আসেননি। এরই মধ্যে অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর ফিঙ্গারপ্রিন্ট পরীক্ষা করা হয়। ফিঙ্গারপ্রিন্ট পরীক্ষায় দেখা যায় এনআইডিতে তার নাম বৃষ্টি খাতুন হিসেবে নিবন্ধিত। বাবার নাম সবুজ শেখ, মায়ের নাম বিউটি বেগম। বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বনগ্রাম গ্রামে।