বুধবার, ৬ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

অবৈধ হাসপাতাল ফেলে পালাচ্ছেন মালিকরা

লাইসেন্সবিহীন, মানহীন ক্লিনিক সিলগালা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

সারা দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ব্লাডব্যাংক। অবৈধ হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হতেই নড়েচড়ে বসেছেন লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিকের মালিকরা। অভিযানের খবর পেলেই হাসপাতাল ফেলে পালিয়ে যাচ্ছেন মালিক, কর্মচারীরা। অনেকে তালাবদ্ধ করে রেখে সরে পড়ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. আলী হাসান বলেন, ‘গতকাল রাজধানীর মুগদা এলাকায় হাসপাতাল পরিদর্শনে বের হয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতরের টিম। এই হাসপাতালগুলো মুগদা জেনারেল হাসপাতালের ঠিক সামনে। আল আকছা হাসপাতাল, জমজম ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায় টেকনোলজিস্ট নেই, আণবিক শক্তি কমিশনের লাইসেন্স নেই। ল্যাবে কিছু অসংগতি রয়েছে। এ জন্য তাদের কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। তারা এই শর্তগুলো পূরণ করলে আবার চালু করা হবে। এগুলোতে অভিযানের খবর শুনে মেডিকাস ক্লিনিকের মালিক-কর্মচারীরা সব পালিয়ে গেছেন। আমরা গিয়ে দেখি হাসপাতালের সদর দরজা তালাবদ্ধ।’ স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ জানুয়ারি সারা দেশের অনিবন্ধিত হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ব্লাডব্যাংকের তথ্য পাঠাতে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ও সিভিল সার্জনদের নির্দেশ দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। উচ্চ আদালতের নির্দেশে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এ রকম অনিবন্ধিত ১ হাজার ২৭টি হাসপাতালের তালিকা তৈরির পাশাপাশি অভিযান শুরু করেছে অধিদফতর। গত দেড় মাসে ৮১টি হাসপাতাল সিলগালা করে বন্ধ করা হয়েছে। জরিমানা করে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে ৭৫টিকে। এর আগে রাজধানীর মিরপুর, শ্যামলী এলাকায় ১০টি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে তিনটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেগুলো হলো- মোহাম্মদপুর ইকবাল রোডের কেয়ার হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক, শ্যামলী এলাকার ঢাকা ট্রমা সেন্টার ও স্পেশালাইজড হাসপাতাল, উত্তরা হাইকেয়ার নিউরো ও কার্ডিয়াক হাসপাতাল। এগুলোর লাইসেন্স না থাকা ও সেবার মান সন্তোষজনক না হওয়ায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

শ্যামলী বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালকে শুধু তথ্য কর্মকর্তার নাম ও ছবি টানাতে বলা হয়েছে। কালার কোডেড বিন সঠিক না থাকায় ইসলাম ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। বিভিন্ন অনিয়মের কারণে শ্যামলী হাইকেয়ার অর্থোপেডিক্স ও জেনারেল হাসপাতালকে শোকজ করা হয়েছে। এ ছাড়াও শ্যামলী এলাকার এসবিএফ কিডনি কেয়ার সেন্টারে ফুল টাইম কিডনি কনসালট্যান্ট না থাকায় তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়োগ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযানের কথা শুনে এসব এলাকার অনেক ক্লিনিকের মালিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পালিয়ে যান। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাশাপাশি হাসপাতালে দালাল ঠেকাতে অভিযান চালাচ্ছে র‌্যাব। সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে এসব মানহীন ক্লিনিকে নিয়ে যান দালালরা। ২৮ ফেব্রুয়ারি শেরেবাংলা নগর এলাকার চারটি হাসপাতাল থেকে মোট ৪২ জন দালালকে আটক করে র‌্যাব। র‌্যাব-২ এর উপ-অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ নাজমুল্লাহেল ওয়াদুদ জানান, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, হৃদরোগ হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালে র‌্যাব-২ এর পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হয়। আমরা জানতে পেরেছি, রোগীরা যখন হাসপাতালে প্রবেশ করেন তখন দালালরা তাদের টার্গেট করেন এবং পিছু নেন। এরপর রোগীদের বোঝানো হয় এখানে ভালো ডাক্তার নেই, চিকিৎসা নেই। এসব বলে তাদের বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর