চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার ইছানগর এলাকায় এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজের গুদামে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ড ৩০ ঘণ্টায়ও নেভানো সম্ভব হয়নি। গত সোমবার গুদামটিতে আগুন লাগার পর গতকাল রাত ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গুদামের ভিতরে থাকা অপরিশোধিত চিনি জ্বলতে থাকে। ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অগ্নিকাণ্ডের প্রভাবে চিনির বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। গতকাল সকালে ওই চিনি কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তখনো একাধিক পাইপ দিয়ে গুদামের ভিতরে পানি ছিটিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কোনোভাবেই আগুনের লেলিহান শিখা নিয়ন্ত্রণে আসছে না। আগুনে গুদামটির টিনের ছাদ পুড়ে গলে গলে পড়ছে। আর গুদামের ভিতরে থাকা অপরিশোধিত চিনিগুলো পুড়ে লাভায় পরিণত হয়ে আবার জ্বলে উঠছে। জ্বলন্ত লাভার ওপর ক্রমাগত পানি ছিটানোর ফলে সেগুলো কালো রঙের ক্যারামেলের আকার ধারণ করে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে।
যে কারণে নিভছে না আগুন : ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের উপপরিচালক জসিম উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অপরিশোধিত চিনির যে কাঁচামাল, সেটা এক ধরনের দাহ্য পদার্থ। এসব কাঁচামাল মূলত অক্সিজেন, হাইড্রোজেন ও কার্বনের একটি যৌগ। কার্বন ও অক্সিজেনের কারণে আগুনের তীব্রতা কমছে না। কাঁচামালগুলো পুড়ে গিয়ে যৌগগুলো ভাগ হয়ে অধিক তাপমাত্রার কারণে এক ধরনের কেমিক্যালে পরিণত হয়ে আবার নতুন করে জ্বলছে। যতক্ষণ পর্যন্ত এগুলো পুড়ে শেষ না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আগুন নিভবে না। তবে আগুন ছড়িয়ে পড়ার কোনো শঙ্কা নেই।
বাড়বে না চিনির দাম : গুদামটিতে ১ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনি পুড়ে যাওয়ার দাবি করলেও এতে চিনির বাজারে কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন এস আলম গ্রুপের জিএম (এইচআর) মোহাম্মদ হোসেন। তিনি বলেন, আমরা ৪ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি করেছিলাম। এর মধ্যে এখানে ছিল ১ লাখ মেট্রিক টন। আরও ৩ লাখ আছে। এর সঙ্গে ২৫ হাজার টন রেডি চিনি আছে। রোজায় সারা দেশে চিনির চাহিদা সর্বোচ্চ ১ লাখ মেট্রিক টন। ফলে চিনির দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।তদন্ত কমিটির পরিদর্শন : ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গতকাল দুপুরে তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রহমান বলেন, আমরা পরিদর্শন শেষে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। সিসিটিভি ফুটেজ নিয়েছি। যেহেতু আগুন নেভেনি, ভিতরের পরিস্থিতি বুঝতে পারছি না এখনো। আগামীকাল বৃহস্পতিবার আবার বসব। এখানে কি গাফিলতি ছিল, নাকি দুর্ঘটনা- তা এখনো স্পষ্ট নয়। সবকিছু বুঝতে সময় লাগবে। আমরা সাত দিনের মধ্যে অগ্নিকাণ্ডের কারণ খুঁজে বের করব। এরপর পরবর্তী করণীয় ও সুপারিশ পেশ করব।
পরিবেশের ক্ষতির শঙ্কা নেই : গুদামটিতে থাকা বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত চিনি পুড়ে কালো রঙের ক্যারামেলের আকার ধারণ করে কারখানার ড্রেন হয়ে যাচ্ছে কর্ণফুলী নদীতে। এতে করে নদীর ওই এলাকার পানি বিবর্ণ হয়ে পড়ছে। এতে নদীর পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন অনেকে। যদিও ফায়ার সার্ভিস কর্তারা বলছেন, কার্বন ও অক্সিজেন কোনোটাই পানির জন্য ক্ষতিকারক নয়। তবে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি বলছে, এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদফতরের সঙ্গে আলাপ করবেন তারা।