বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অনুমোদন দিতে হবে

ড. খন্দকার সাব্বির আহমেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অনুমোদন দিতে হবে

বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি স্থপতি প্রফেসর ড. খন্দকার সাব্বির আহমেদ বলেছেন, আইনি ব্যত্যয় পাওয়া গেছে বলেই রেস্তোরাঁগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করা হচ্ছে। এটার প্রয়োজন আছে। তবে শুধু বন্ধ করলেই হবে না, একটা সমাধানের পথও দেখাতে হবে। অন্যথায় অনেক মানুষের কর্মসংস্থান নষ্ট হবে। অর্থনীতিতে ধাক্কা লাগবে। এ ছাড়া একটা শহরে থাকার জায়গা, অফিস, ক্লিনিক, সিনেমা হল, আর্ট গ্যালারি, শপিং সেন্টার ইত্যাদি যেমন দরকার, তেমনি রেস্তোরাঁও দরকার। এটা নাগরিক চাহিদা। তাই কীভাবে আইনের মধ্যে থেকে সব প্রতিষ্ঠান চালিয়ে রাখা যায় এবং নাগরিকদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা যায় সেটা দেখতে হবে। বেইলি রোডে অগ্নি দুর্ঘটনার পর ঢাকার বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা শহরকে নিয়ে শুরুতে যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তখন হয়তো যেখানে অফিস চিন্তা করা হয়েছিল, সেখানে হয়তো অফিসের চাহিদাই ছিল না। আবার চাহিদাও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়। একটা এলাকার বাসিন্দাদের চাহিদার ভিত্তিতেই সেখানে হোটেল, রেস্তোরাঁ, হাসপাতালের মতো বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এখন একজন বাড়ির মালিক অনেক কষ্ট করে একটা ভবন তৈরি করেছেন অফিস করার উদ্দেশ্যে। দেখলেন সেখানে অফিসের ভাড়াটিয়া পাচ্ছেন না। তখন তিনি কী করবেন? চাহিদা অনুযায়ী ভাড়াটিয়া খুঁজবেন। তখনই হচ্ছে সমস্যা। রাজউক যে উদ্দেশ্যে অনুমোদন দিয়েছে আর বাড়ির মালিক যে উদ্দেশ্যে ভাড়া দিতে চাচ্ছেন তার মধ্যে পার্থক্য তৈরি হচ্ছে। আইনের ব্যত্যয় ঘটছে। এমন পরিস্থিতিতে বাড়ির মালিকের প্রয়োজন ছিল ডিসি অফিস, রাজউক, সিটি করপোরেশন বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ভবনের ব্যবহারিক পরিবর্তন চেয়ে আবেদন করা। তখন রাজউক বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সবকিছু যাচাই করে সন্তুষ্ট হলে অনুমতি দেবে। যদি কোনো কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজন মনে করে, সেটাও জানিয়ে দেবে। সেই অনুমোদন না নিয়ে নতুন কিছু করায় ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এ কারণেই দুর্ঘটনা ঘটছে।

ড. সাব্বির বলেন, এক সময় মতিঝিল ছিল অফিস পাড়া। সেটা এখন বদলে কারওয়ানবাজার, গুলশান, উত্তরায় চলে যাচ্ছে অফিসগুলো। এটা স্বাভাবিক। এ জন্য পরিকল্পনাবিদদের সার্বক্ষণিক পরিকল্পনায় থাকতে হবে। কোনো এলাকার ব্যবহারিক চাহিদা পরিবর্তন হলে রাজউক আগেই জানিয়ে দেবে যে, আমরা এখন এই এলাকায় এই জিনিসগুলোর অনুমোদন দিচ্ছি, কেউ চাইলে আবেদন করতে পারেন। আবার একজন বাড়ির মালিক নিজেও আবেদন করতে পারেন। পরিবর্তন হতে থাকবে, আইনের ভিতরে থেকে নিরাপত্তা বজায় রেখে সেই পরিবর্তনটা মসৃণ রাখতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সচল রাখা, ঢাকার অর্থনীতিকে সচল রাখা, ঢাকার বাসিন্দাদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে চাইলে এই সুযোগগুলো দিতে হবে। ভবন একটা উদ্দেশ্যে ব্যবহারের তৈরি হতে পারে, তবে উদ্দেশ্য পরিবর্তন হলেও আইনের মধ্যে থেকে যেন ভবন ব্যবহার করা যায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। অনেক ভবন চাইলেও ভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যাবে না। ভবনটির কাঠামো হয়তো সেই লোড নিতে পারবে না। সেগুলোর অনুমোদন দেওয়া যাবে না। রাজউক যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেবে। এই পরিবর্তন যদি কেউ করতে চায়, তাকে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে একটা সমাধান দিতে হবে। দিনের পর দিন ঘুরানো যাবে না। এই ব্যবসায়ীগুলোই যদি ব্যবসা করেন তাদের ট্যাক্সের পয়সা তো আমাদের সরকারি কোষাগারে ঢুকবে। বন্ধ করে দিলেই তো সমাধান হবে না। অভিযান চলতে হবে, সমান্তরালে এর সমাধানও করতে হবে।

অনুমোদন পেতে হয়রানি দূর করার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ছোট ছোট রেস্টুরেন্ট, হোটেল বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নিতে গেলে ১২-১৩ জায়গায় ঘুরতে হয়। কোনো কোনো জায়গায় টাকা-পয়সাও দিতে হয়। এই অনুমোদনের বিষয়গুলো ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে একটা জায়গা থেকে দিতে হবে। একজন ব্যবসায়ীকে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হবে কেন? ছয় মাস বসে থাকতে হবে কেন? তিনি তো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ কারণেও অনেক ক্ষেত্রে অনুমতি না নিয়েই অনেক কিছু হচ্ছে। পথও দেখাতে হবে, আইনগত চাপও দিতে হবে। পথ না দেখিয়ে শুধু আইনগত চাপ দিলে অর্থনীতিতে ধাক্কা লাগবে। অনেক মানুষের কর্মসংস্থান নষ্ট হবে।

 

সর্বশেষ খবর