বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে বসছেন অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে বসছেন অর্থমন্ত্রী

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের অর্থনীতিবিদ ও অর্থনৈতিক চিন্তকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বসতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। যদিও কাগজে কলমে বলা হচ্ছে এটি একটি প্রাক্‌বাজেট আলোচনা; যা প্রতিটি বাজেটের আগে নিয়মিতভাবে করে থাকেন অর্থমন্ত্রীরা।

তবে এবারের প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। একদিকে দীর্ঘায়িত অর্থনৈতিক সংকট। দ্বিতীয়ত বিগত কয়েক বছর প্রাক্‌বাজেট আলোচনাগুলো হয়েছে দায়সারাভাবে। সেসব বৈঠকে খুব বেশিসংখ্যক বিশেষজ্ঞকেও যুক্ত করা হয়নি। অনেক দিন পর এবার বিস্তৃত আকারে অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে সরাসরি প্রাক্‌বাজেট আলোচনা হতে যাচ্ছে। অর্থ বিভাগের সূচি অনুযায়ী বৈঠকটি ১০ মার্চ সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় হওয়ার কথা। একই দিনে সকালে ব্যবসায়িক চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে বসবেন অর্থমন্ত্রী। অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। অর্থ বিভাগের আমন্ত্রণপত্রের নথিসূত্রে জানা গেছে, প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান, ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, মামুন রশীদ, ড. মুস্তাফিজুর রহমান, আহসান এইচ মনসুর, বিনায়ক সেন, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ও অধ্যাপকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর আগে আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রী থাকাকালে করোনা মহামারি বাধা, অর্থমন্ত্রীর অসুস্থতা ও বৈরী পরিস্থিতির কারণে প্রাক্‌বাজেট আলোচনা সীমিত করা হয়। বেশির ভাগ সভাই তখন অনলাইনে জুম প্ল্যাটফরমে অনুষ্ঠিত হয়। এতে অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ দেওয়ার সুযোগও ছিল কম। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ১০ মার্চের এ প্রাক্বাজেট আলোচনা শুধুই বাজেটকেন্দ্রিক নয়। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কথাও উঠে আসবে আলোচনায়। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক সংকট সমাধানে অর্থনীতিবিদদের কাছ থেকে পরামর্শ আহ্বান করা হবে। দীর্ঘায়িত ডলার সংকট কাটানোর পথ খোঁজার পরামর্শও আসতে পারে এখান থেকে। এ ছড়া বাজেট বাস্তবায়ন, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, করকাঠামোর পুনর্বিন্যাস, ব্যাংক খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি এসব বিষয়েও পরামর্শ আসতে পারে বলে জানা গেছে। অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু করেছেন নতুন অর্থমন্ত্রী। যদিও অর্থনীতির হালনাগাদ হালচাল বোঝা ও সামষ্টিক অর্থনীতির চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে তিনি এখনো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ইস্যুভিত্তিক ব্রিফ নিচ্ছেন। এজন্য তিনি আরও কিছুটা সময়ও চেয়েছেন।

এদিকে বর্তমানে অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে মূল্যস্ফীতির উচ্চচাপ। মূল্যস্ফীতির চাপ ফেব্রুয়ারি শেষে ১০ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে। মূল্যস্ফীতির এ চাপ টানা ১২ বছরে সর্বোচ্চ। দুই বছরের বেশি সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে মূল্যস্ফীতির চাপ। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন মূল্যস্ফীতির প্রকৃত চাপ আরও বেশি। এদিকে করোনা মহামারি-পরবর্তী ডলার সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। এখনো সে সংকট চলমান। বাজারে এমনকি ব্যাংকেও ১২০ টাকার কমে ডলার পাওয়া যায় না। আমদানি খাত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেও সংকট কমানো যায়নি। অতিপ্রয়েজনীয় জিনিসপত্রের আমদানির এলসি পর্যন্ত খুলতে বেগ পেতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাচার রোধ করতে না পারায় ডলারের সংকট বেড়েছে। পাচার বন্ধ হওয়া দূরের কথা, বরং কয়েক বছরের ব্যবধানে ডলার পাচার আরও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। এদিকে সরকারের রাজস্ব আদায়েও ঘাটতি পড়েছে। যার প্রভাবে চলতি হিসাবে বিশাল ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে দেখা দিয়েছে হতাশাজনক পরিস্থিতি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্যয় সাশ্রয়ের প্রভাব পড়েছে উন্নয়ন কার্যক্রমে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২৭ শতাংশ। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় অর্থ ব্যয়ের এ হার গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, অগ্রাধিকার ছাড়া অন্য প্রকল্পগুলোর কার্যক্রমে ধীরগতির কারণেই মূলত বাস্তবায়নের অগ্রগতি কম হয়েছে। অনেক বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পেও ব্যয় সাশ্রয়ী নীতি অনুসরণ করায় চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। প্রাক্‌বাজেট আলোচনার মাধ্যমে মূলত চলতি বাজেটের দুর্বলতা খোঁজা হয় এবং একই সঙ্গে আসছে বছরের বাজেটের নীতি, বরাদ্দ ও পরিকল্পনার পরামর্শ নেওয়া হয়; যা অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা ও বাজেটের ওপর প্রতিফলিত হয়।

সর্বশেষ খবর