বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

জাবিতে দেয়াল নিয়ে রাতভর সংঘর্ষে তিন হলের শিক্ষার্থীরা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শহীদ রফিক-জব্বার হল সংলগ্ন রাস্তায় নির্মিত দেয়াল ভাঙাকে কেন্দ্র করে তিন হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৭টায় সংঘর্ষ শুরু হয়ে চলে গভীর রাত পর্যন্ত। পরে রাত ২টার দিকে সাভার-আশুলিয়া থানা পুলিশের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, গত বছরের ২৭ জানুয়ারি ৪ দফা দাবিতে শহীদ রফিক-জব্বার হল ছাত্রলীগের নেতৃত্বে হল-সংলগ্ন রাস্তাটিতে স্থায়ী দেয়াল নির্মাণ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে যাতায়াতে অসুবিধাসহ নানা ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ও শেখ রাসেল হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের। সর্বশেষ গত সোমবার থেকে দেওয়ালটি ভাঙার দাবিতে গণস্বাক্ষর গ্রহণ কর্মসূচি শুরু করে ওই দুই হলের শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি জানাজানি হলে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে দেওয়ালটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি আঁকার চেষ্টা চালায় রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা। সে সময় শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীরা এতে বাধা দিলে দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাজউদ্দীন আহমদ হলের শিক্ষার্থীরা যুক্ত হয়ে রফিক জব্বার হলের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয়। পরে উভয়পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় ইটপাটকেল ও পেট্রল বোমা নিক্ষেপ, পটকা ফুটানো, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে লাঠিসোঁটাসহ দেশি অস্ত্রশস্ত্র দেখা গেছে। একপর্যায়ে তাজউদ্দীন আহমদ ও শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীরা দেওয়ালটির অর্ধেকের বেশি অংশ ভেঙে ফেলে। এদিকে দেওয়ালটি ভাঙার প্রতিক্রিয়ায় তিন হলের মধ্যবর্তী রাস্তায় গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে একটি পুকুর খনন করে রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা। তখন উভয়পক্ষের মধ্যে পুনরায় ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে এ পর্যন্ত উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে রফিক জব্বার হলের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী রেজাউল ও সবুজ গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত বাকিদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া শেখ রাসেল ও রফিক-জব্বার হলের অর্ধশতাধিক কক্ষে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে।

সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অলক কুমার পাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হল-সংলগ্ন রাস্তায় স্থায়ী দেওয়াল নির্মাণের ফলে প্রায় ১ কিলোমিটার পথ ঘুরে বটতলায় দুই হলের শিক্ষার্থীদের খাবার খেতে যেতে হয়। পাশাপাশি ক্লাস করতে যাওয়াসহ বিভিন্ন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। আসন্ন রমজান মাসে এ ভোগান্তি লাঘবের জন্য আমরা একাধিকবার প্রশাসনের কাছে দেওয়ালটি ভাঙার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু দেওয়ালটি যাতে ভাঙা না যায় সেজন্য রফিক জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃৃতি আঁকা শুরু করে। এর ফলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। আমাদের দাবি অনতিবিলম্বে দেওয়ালটি ভেঙে দুই হলে বসবাসরতদের ভোগান্তি কমাতে হবে। একই কথা জানিয়েছেন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হল ছাত্রলীগ নেতা মহিবুর রহমান শুভ। তবে ৪ দফা দাবিতে দেওয়ালটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানায় শহীদ রফিক জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো- শহীদ রফিক জব্বার হলের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও খেলার মাঠ নির্দিষ্টকরণ, হলের স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা সংস্কার ও মসজিদে স্থায়ী ইমাম নিয়োগ, ডাইনিংয়ের অব্যবস্থাপনা দূরীকরণ ও কমনরুমের প্রয়োজনীয় উপকরণ নিশ্চিতকরণ এবং তাজউদ্দীন আহমদ ও শেখ রাসেল হলের জন্য বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করা।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, দেওয়াল নির্মাণ ও সংঘর্ষের ঘটনায় ভাঙচুর, রাস্তা কেটে গর্ত করা সবই ছাত্রশৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ড। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নেওয়ার পাশাপাশি যে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম।

 

সর্বশেষ খবর