শনিবার, ৯ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

সুপ্রিম কোর্ট বারের ভোট গণনায় হট্টগোল-হাতাহাতি

ব্যালট পুলিশের কাছে, মামলা গ্রেফতার ১

নিজস্ব প্রতিবেদক

সুপ্রিম কোর্ট বারের ভোট গণনায় হট্টগোল-হাতাহাতি

সুপ্রিম কোর্ট বারে গতকাল ভোট গণনা কেন্দ্র করে মারামারি

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (সুপ্রিম কোর্ট বার) ২০২৪-২৫ সালের দুই দিনব্যাপী নির্বাচনে ভোট গণনা কেন্দ্র করে হট্টগোল ও হাতাহাতি হয়েছে। এমন ঘটনায় আইনজীবীদের মধ্যে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আইনজীবী পরিচয়ধারী একদল দুর্বৃত্ত ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে পুলিশ তা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ব্যালট বাক্স পুলিশের হেফাজতে ছিল। তবে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা নিয়ে। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দিনব্যাপী ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টা থেকে মাঝে এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলে ভোট গ্রহণ। দুই দিনে ৭ হাজার ৮৮৩ জন আইনজীবীর মধ্যে ৫ হাজার ৩১৯ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ব্যালট পেপার বাছাই প্রক্রিয়া শেষ হয়। স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে সম্পাদক প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথী এবং বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা রাতেই ভোট গণনার পক্ষে সোচ্চার হন। তারা নির্বাচন কমিশনকে ভোট গণনা শেষে ফল ঘোষণা করতে বলেন। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্পাদক প্রার্থী শাহ মনজুরুল হক শুক্রবার বিকাল ৩টায় দিনের আলোতে ভোট গণনা চাচ্ছিলেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়। শুক্রবার ভোরে মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন আইনজীবী আহত হন। সেখানে একজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলকে মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বহিরাগতরা এই হামলা চালিয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীরা জানিয়েছেন। তারা আরও বলেন, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট আবুল খায়ের। তিনি বলেন, ভোট গণনার সময় অন্য সম্পাদক প্রার্থী উপস্থিত না থাকায় সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হলো।

ফলাফল ঘোষণার বিষয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী শাহ মনজুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভোট তো গণনাই হয়নি। সকাল ৮টার পর পুলিশ পাহারায় আমি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ছেড়ে বাসায় চলে এসেছি। আমাদের নেতারা সার্বিক বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।’

বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভোটের পর আমরা ফলাফলের অপেক্ষায় ছিলাম। এখনো আমরা সেই অপেক্ষায় আছি। আমরা এখন ব্যালট বাক্সও খুঁজে পাচ্ছি না, নির্বাচন কমিশনকেও খুঁজে পাচ্ছি না।’ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শেখ আবু জাফর মানিক বলেন, দুই দিনব্যাপী শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। তবে ভোট গণনা নিয়েই যত সমস্যার সৃষ্টি হয়। নির্বাচন কমিশনও স্বীকার করেছে সদস্য পদে ১৫০টি ব্যালট বেশি পাওয়া গেছে। তিনি আরও বলেন, ‘নাহিদ সুলতানা যুথীকে নির্বাচিত ঘোষণা করার পর আইনজীবী পরিচয়ধারী একদল দুর্বৃত্ত ব্যালট ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছিল। অবশেষে পুলিশ তা উদ্ধার করে নিজেদের জিম্মায় নেয়। সুপ্রিম কোর্টের মতো জায়গায় এ ধরনের ঘটনা কলঙ্কজনক।’ ব্যালট বাক্স ছিনতাই প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা ব্যালট বাক্স নির্বাচন কমিশনের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছি। আমাদের সদস্যরা সার্বক্ষণিক পাহারায় রয়েছে। আমি নিজেও এখন পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় রয়েছি।’ এদিকে এ ঘটনায় স্বতন্ত্র সম্পাদক প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথী ও বিএনপি সমর্থিত সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ ২০ আইনজীবীকে আসামি করে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুর রহমান সিদ্দিকী (সাইফ) বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন। মামলার আসামি ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সর্বশেষ খবর