প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকে (বিসিজি) অতি-আধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তি জাহাজ ও হেলিকপ্টার দিয়ে সজ্জিত করে একটি আধুনিক ও ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে রূপান্তরিত করতে কাজ করছে সরকার। গতকাল সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে কোস্ট গার্ড সদর দফতরে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের ‘২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং কোস্ট গার্ড দিবস ২০২৪’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বর্তমান ও সাবেক কোস্ট গার্ড সদস্যদের অবদান ও সাহসিকতার জন্য তাদের মাঝে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পদক, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড (সেবা) পদক, রাষ্ট্রপতি কোস্ট গার্ড পদক এবং রাষ্ট্রপতি কোস্ট গার্ড (সেবা) পদক প্রদান করেন।

কোস্টগার্ডের অপারেশনাল সক্ষমতা বাড়াতে ভি-স্যাটনেট কমিউনিকেশন সিস্টেম এবং ছয়টি স্টেশন ও আউটপোস্ট এবং তাদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডে চারটি অফশোর প্যাট্রোল ভেসেলসহ বিভিন্ন আকারের ১৬টি জাহাজ ও ১৩৮টি বোট কোস্ট গার্ড বহরে সংযোজিত হয়েছে। গভীর সমুদ্রে কোস্ট গার্ডের যোগাযোগব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য আজ (গতকাল রবিবার) কোস্ট গার্ডের নবসংযোজিত ভি-স্যাটনেট সিস্টেম ও ঢাকা জোন, পূর্ব জোন এবং দক্ষিণ জোনের বিভিন্ন ভৌত অবকাঠামো নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য ৯টি প্রতিস্থাপক জাহাজ নির্মাণের লক্ষ্যে একটি নতুন প্রকল্পও অনুমোদন করা হয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৯৪ সালে জাতীয় সংসদের তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগের আনীত বিলের কারণেই ‘বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড’ একটি আধা-সামরিক বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এরপর ১৯৯৬ সালে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকার কোস্ট গার্ডের বিভিন্ন জোনের জন্য ভূমি বরাদ্দ, অবকাঠামো নির্মাণ এবং নতুন নতুন জলযান সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের অগ্রযাত্রায় বিশেষ অবদান রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের উপকূলীয় এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোস্ট গার্ডের স্টেশন ও আউটপোস্টসমূহে কোস্টাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টারসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পটুয়াখালী অঞ্চলে নিজস্ব প্রশিক্ষণ বেইস তৈরির মাধ্যমে কোস্ট গার্ডের জনবলের প্রশিক্ষণ সক্ষমতাও বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা পরবর্তীতে তিনি নিজেই ‘বিসিজি বেইস অগ্রযাত্রা’ নামে কমিশন করেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য ইনশোর প্যাট্রোল ভেসেল, ফ্লোটিং ক্রেন, টাগ বোট এবং বিভিন্ন ধরনের হাইস্পিড বোট তৈরি করা হয়েছে। এ বাহিনীর মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়ায় একটি ডকইয়ার্ড নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুনীল অর্থনীতি ও সমুদ্রে নিরাপত্তা প্রদানের জন্য এ বাহিনীর আধুনিকায়নে রূপকল্প ২০৩০ ও ২০৪১ অনুযায়ী বর্তমান জনবল ধাপে ধাপে বৃদ্ধি করে ১৫ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে জয়ী হয়ে বিশাল সমুদ্র এলাকায় দেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। স্থলভাগে সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দৃষ্টিও এখন দেশের সমুদ্র অঞ্চলের দিকে। সমুদ্রপথে আমাদের শতকরা ৯০ ভাগ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালিত হচ্ছে এবং সুনীল অর্থনীতির বিশাল ভা ার মজুত রয়েছে এই বঙ্গোপসাগরে। এ সম্পদের অন্বেষণ, আহরণ এবং সংরক্ষণ আমাদের দায়িত্ব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সমুদ্রসীমায় আমাদের যে বিশাল সম্পদ রয়েছে সেই সমুদ্র সম্পদ যাতে আমাদের অর্থনীতিতে কাজে লাগে সেজন্য ‘ব্লু ইকোনমি’ নীতি বাস্তবায়ন করছে সরকার। তাছাড়া সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটও আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি। কারণ গবেষণাটা একান্তভাবে দরকার।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার মৎস্য গবেষণায় জাহাজের ব্যবস্থা করেছে। সার্বিক সমুদ্র গবেষণার জন্য জাহাজ সংগ্রহের পদক্ষেপও সরকার নিচ্ছে এবং পর্যটন শিল্পকেও গড়ে তুলছে। দীর্ঘ ৮০ মাইল বালুকাময় সমুদ্র সৈকত আমাদের রয়েছে। যা অন্য কারও নেই। কাজেই এটিকে ব্যাপকভাবে কাজে লাগিয়ে পর্যটন শিল্পকে আরও উন্নত ও আকর্ষণীয় করাই তার সরকারের লক্ষ্য। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানটা এমন যেখানে আমরা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের একটি সেতুবন্ধন রচনা করতে পারি। সেভাবেই আমাদের দেশকে আমরা গড়ে তুলতে চাই। এজন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা আমাদের একান্তভাবে দরকার।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং কোস্ট গার্ড মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের একটি সুসজ্জিত চৌকষ দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে এবং রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। নবসংযোজিত কোস্ট গার্ড ভি-স্যাটনেট সিস্টেমের ওপর অনুষ্ঠানে একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়।