সোমবার, ১১ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

বেসরকারি খাত প্রসারিত হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেসরকারি খাত প্রসারিত হবে

জাতীয় বাজেটের কাঠামোগত পরিবর্তনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি বলেন, এতে বেসরকারি খাতের প্রসারে আরও সুযোগ তৈরি হবে। বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ও প্রসারে নিরলসভাবে কাজ করছে সরকার। তবে কিছু কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়নে সময় প্রয়োজন। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই), সমকাল ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোর আয়োজিত প্রাক বাজেট আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ এমপি, জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান প্রমুখ। দেশের অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের অবদান ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার বেসরকারি খাতকে দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে বিবেচনা করে। বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য আমরা বরাবরই সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছি। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রেও বেসরকারি খাতের মতামত ও প্রত্যাশাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের লক্ষ্য হলো ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও টেকসই স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। এই লক্ষ্য অর্জনে বেসরকারি খাতের অংশীদারি অপরিহার্য। আমরা বিশ্বাস করি, বেসরকারি খাতের উন্নয়নের মাধ্যমেই দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন সম্ভব।

আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, সরকার বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ও প্রসারে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আয়কর, মুসক ও শুল্ক সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন ও সংস্কারের মাধ্যমে কর কাঠামোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, অটোমেশন, কর প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণ, ঋণের সুদ হার যৌক্তিক করা, অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং ব্যবসায়ীদের জন্য নানা ধরনের প্রণোদনার ব্যবস্থা। তিনি আরও বলেন, এই পদক্ষেপগুলো আরও কী করে সুচারুভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশা করি পদক্ষেপগুলো বেসরকারি খাতের উন্নয়নে সহায়ক হবে। আমরা চাই বেসরকারি খাত আরও বেশি বৃদ্ধি পাক এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরও বেশি ভূমিকা পালন করুক।

অর্থমন্ত্রী বলেন, পাইকারি পণ্য ও সেবা পর্যায়ে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (ইএফডিএমএস) মাধ্যমে মুসক জাল সম্প্রসারণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রাথমিক পর্যায়ে ৭ হাজার এবং ক্রমান্বয়ে ৩ লাখ ইএফডিএমএস মেশিন স্থাপনের জন্য চুক্তি করা হয়েছে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।

তিনি আরও বলেন, এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য রাজস্ব বৃদ্ধি, সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, দেশের আর্থিক খাতের সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আমদানির বিকল্প শিল্পপ্রতিষ্ঠাসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডকে এ বছর বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হবে। আমরা আশা করি এ পদক্ষেপগুলো বেসরকারি খাতের প্রসারসহ আমাদের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

আগামী জাতীয় বাজেট হবে বেসরকারি খাতের জন্য একটি উৎসাহব্যঞ্জক বাজেট। আমরা বেসরকারি খাতের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনার মাধ্যমে তাদের সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার পূর্বাভাস অনুযায়ী আমাদের প্রধান রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ এবং বাণিজ্য সহযোগী অন্যান্য দেশে সামনের দিনগুলোয় জিডিপির প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক থাকবে। এটা একটা ভালো সংবাদ আমাদের জন্য। বিশ্বব্যাপী এবং প্রতিবেশী দেশগুলোয় ২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও ২০২৪ সালে তা ৫ দশমিক ৮ শতাংশে নামবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

আবুল হাসান মাহমুদ আলী আরও বলেন, অর্থনীতির গতিধারা তো একটা চলমান প্রক্রিয়া। এখন ভালো আছে। পূর্বাভাসটা ভালো আছে। আমাদের কাজে এটা সাহায্য করবে। ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী ছিল। যা বর্তমানে ৮২ দশমিক ৫ ডলারে নেমে এসেছে। কাজেই জ্বালানি তেলের মূল্য স্থিতিশীল থাকবে বলে যে পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে, সেটা আমাদের কাজের জন্য সাহায্য করবে বলে আমরা আশা করছি। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা (সরকার) কাজ শুরু করেছি মাসখানেক হলো। আমরা বেশ বাধার সম্মুখীন হচ্ছিলাম। কিন্তু ইতোমধ্যে আমরা নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছি। রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক রয়েছে। যদিও ২০২৩ পর্যন্ত চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ১ দশমিক ৯৩ ডলার ঘাটতি রয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত রেমিট্যান্স আয় হয়েছিল ১২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রয়েছে এবং সর্বশেষ ৬ মার্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে আরেকটি প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নেন অর্থমন্ত্রী। যেটি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আসছে বাজেটের নানাদিক ও চলমান অর্থনৈতিক সংকট সমাধানের করণীয় নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

সর্বশেষ খবর