বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
মন্ত্রিসভায় খসড়া অনুমোদন

সড়ক আইনে জেল জরিমানা কমছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিভিন্ন ধরনের অপরাধে চালক ও তার সহকারীদের জেল-জরিমানার পরিমাণ কমিয়ে সড়ক পরিবহন সংশোধন আইন ২০২৪-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তবে মোটরযান মালিককে বিমা করতে হবে বলে একটি ধারা যোগ করা হয়েছে। গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে বৈঠক শেষে বিকালে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ তথ্য জানান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১২টি ধারায় আর্থিক জরিমানা কমানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিদ্যমান আইনের ভাড়ার চার্ট প্রদর্শন, টার্মিনালে ফি, মিটার ছাড়া চালানো, ট্রাফিক সিগন্যাল না মানা, ওভার লোড, পরিবেশ দূষণ, পার্কিং ছাড়া গাড়ি থামানো, সাধারণ নির্দেশনা না মানাসহ ১২টি ধারায় আর্থিক জরিমানা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আগে তিনটি ধারায় অপরাধ অজামিনযোগ্য রাখা হলেও সেখানে এখন একটি ধারা অজামিনযোগ্য রাখা হয়েছে বলেও জানান মাহবুব হোসেন। জামিন অযোগ্য ছিল ৮৪, ৯৮ ও ১০৫ ধারা। এখন শুধু ১০৫ ধারা জামিন অযোগ্য থাকছে। মাহবুব হোসেন বলেন, কারিগরি নির্দেশ না মানলে এতদিন তিন বছর জেল দেওয়ার বিধান ছিল। এই অপরাধের সাজা আগের মতো রাখা হলেও এটিকে অজামিনযোগ্য থেকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বা ওভারলোডে গাড়ি চালানোর পর দুর্ঘটনা হলে সেটিকে অজামিনযোগ্য থেকে জামিনযোগ্য অপরাধ করা হয়েছে। এখন শুধু দুর্ঘটনায় মারা গেলে বা গুরুতর আহত হলে তা অজামিনযোগ্য অপরাধ হবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। মাহবুব হোসেন বলেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর নেতৃত্বে সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল ২০১৮ সালের এই আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে আইন সংশোধন করা হচ্ছে। ৬৯ ধারায় ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রস্তুত সংক্রান্ত অপরাধ করলে এতদিন দুই বছর জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান ছিল, সেটিকে কমিয়ে দুই বছর জেল ও ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হচ্ছে। ১২ ধারায় লাইসেন্স বাতিলের পরও যানবাহন চালালে বর্তমান আইনে তিন মাস কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। এখন তা কমিয়ে তিন মাস জেল ও ১৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, লাইসেন্স ছাড়া কন্ডাক্টরের দায়িত্ব পালন করলে এক মাস কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানার সাজা বহাল রাখা হয়েছে। এই ধারায় এখন কন্ডাক্টরের সঙ্গে সুপারভাইজার শব্দটি যোগ করা হয়েছে। ৮০ ধারা অনুযায়ী ভাড়ার চার্ট না দেখালে বা বেশি ভাড়া নিলে এতদিন এক মাস জেল বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হতো। দুটো অপরাধ একসঙ্গে করলে এতদিন এই শাস্তি দেওয়া হতো। এখন চার্ট প্রদর্শন না করলে বা বেশি ভাড়া দাবি করলে এই সাজা দেওয়া হবে। মিটার টেম্পারিং করলে ছয় মাসের জেল, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হতো। এখন এই অপরাধের জন্য তিন মাসের কারাদণ্ড, ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে, সঙ্গে এক পয়েন্ট কাটা যাবে। সরকার নির্ধারিত হারের থেকে টার্মিনাল চার্জ বেশি নিলে তা চাঁদাবাজি হিসেবে আমলে নিয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। বর্তমান আইনে ট্রাফিক সাইন ও সংকেত না মানলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা কমিয়ে ২ হাজার টাকা করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ওজন বহন করলে তিন বছর জেল ও ৩ লাখ টাকা জরিমানা কমিয়ে এক বছর জেল, ১ লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা হচ্ছে। এর সঙ্গে চালকের এক পয়েন্ট কাটা যাবে। পরিবেশদূষণকারী মোটরযান চালালে তিন মাস জেল ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা কমিয়ে এক মাস জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করালে বর্তমান আইনে ৫ হাজার টাকা জরিমানার সঙ্গে চালকের ১ পয়েন্ট কাটা হতো। এটিকে বদলে শুধু ১ হাজার টাকা জরিমানার বিধান করা হচ্ছে। কী অবস্থায়, কীভাবে গাড়ি চালাতে হবে সেই নির্দেশনা অমান্য করলে তিন মাস জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান বদলে এক মাস জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান করা হচ্ছে। মোটরযান মালিককে বিমা করতে হবে বলে একটি ধারা যোগ করা হয়েছে। বিমা না করলে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। এ ছাড়াও মন্ত্রিসভার বৈঠকে খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট আইন (সংশোধন) ২০২৪ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট আইন (সংশোধন) ২০২৪ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট আইন (সংশোধন) ২০২৪-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট (সংশোধন) আইন ২০২৪ খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর