বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

সংগীতশিল্পী সাদী মহম্মদের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

সংগীতশিল্পী সাদী মহম্মদের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

রবীন্দ্রসংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী সাদী মহম্মদ তকিউল্লাহ (৬৯) আত্মহত্যা করেছেন। গত রাত ৮টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে তাজমহল রোডের সি-১২/১০ নম্বর নিজ বাসায় তিনি গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। গতকাল এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. আজিজুল হক। রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, শিক্ষক ও সুরকার সাদী মহম্মদের পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা আজিজুল হক জানান, বুধবার সাদী মহম্মদ তাঁর সংগীতচর্চার রুমে অবস্থান করছিলেন। একপর্যায়ে সেখানে নাইলনের রশি দিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস নেন।

সাদী মহম্মদের ভাই নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ জানান, সন্ধ্যায় তানপুরা নিয়ে তাঁর বড় ভাই সংগীতচর্চা করেছেন। সন্ধ্যার পর হঠাৎ দেখেন ঘরের দরজা বন্ধ। তখন দরজা ভেঙে তাঁর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেন। তাঁর লাশ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে।

আজ বাদ জোহর জানাজা হবে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দাফনের বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে কিছুই জানানো হয়নি। পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে জানানো হবে।

এদিকে সাদী মহম্মদের মৃত্যুর খবরে সংগীতাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। এ সময় অনেকেই তাঁর বাসায় ছুটে যান। নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপা জানান, গত বছরের ৮ জুলাই সাদী মহম্মদের মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ (৯৬) বার্ধক্যের কারণে মারা যান। মায়ের মৃত্যুর পর তিনি প্রায় ট্রমায় চলে যান। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং হতাশায় ভুগতে থাকেন। সম্ভবত মাকে হারানোর পর থেকে তিনি আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি।

জানা গেছে, সাদী মহম্মদ রবীন্দ্রসংগীতের ওপর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক ছিলেন। অসংখ্য সিনেমা ও নাটকে প্লেব্যাক করেছেন তিনি। ২০০৭ সালে ‘আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে’ অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০০৯ সালে তাঁর ‘শ্রাবণ আকাশে’ ও ২০১২ সালে ‘সার্থক জনম আমার’ অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্রসংগীতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৫ সালে সাদী মহম্মদ বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অনেক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

সাদী মহম্মদ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে শহীদ পিতার সন্তান। তাঁর বাবার নাম শহীদ সলিমউল্লাহ। ১৯৭১ সালে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের সি-১২/১০ বাড়িটি ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা সলিম উল্লাহর বাড়িতে নিয়মিত বৈঠকে আসতেন দলের শীর্ষ নেতারা, আসতেন বঙ্গবন্ধুপুত্র শহীদ শেখ কামালও। একাত্তরের ২৩ মার্চ তাজমহল রোডের সেই বাড়িতে সেজ ছেলে সাদী মহম্মদের আঁকা বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান বাবা সলিমউল্লাহ, সে পতাকা সেলাই করে দিয়েছিলেন সাদী-শিবলীর মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ। সে পতাকা ওড়ানোর সূত্র ধরে একাত্তরের ২৬ মার্চ অবাঙালি বিহারি ও পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে সলিমউল্লাহর বাড়ি। পুড়িয়ে দেওয়া হয় পুরো বাড়ি, গুলি করে মারা হয় সলিমউল্লাহকে। মোহাম্মদপুরে তাঁর নামে একটি সড়কের নামকরণ হয়।

সর্বশেষ খবর