শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
জাহাজের সর্বশেষ অবস্থা

মধ্যস্থতাকারীর খোঁজে জাহাজ মালিক

সোমালিয়া উপকূলে এমভি আবদুল্লাহ, নাবিকরা আছেন অক্ষত, পূর্ব অভিজ্ঞতায় উদ্ধারে আশাবাদী সরকার

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

মধ্যস্থতাকারীর খোঁজে জাহাজ মালিক

ভারত মহাসাগরে জিম্মি করা বাংলাদেশি পতাকাবাহী ‘এমভি আবদুল্লাহ’কে সোমালিয়ান উপকূলে নিয়ে গেছে জলদস্যুরা। গতকাল দুপুর ১টা নাগাদ জাহাজটি সোমালিয়ার গ্যারাকাদ নোঙর এলাকা থেকে ৭ নটিক্যাল মাইল দূরে রাখা হয়েছে। জিম্মি করা জাহাজটি নিজেদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নিয়ে গেলেও এখনো মুক্তিপণ ও কোনো দাবির কথা জানায়নি সোমালিয়ান জলদস্যুরা।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ  আলম বলেন, ‘ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুর কবলে পড়া বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ২৩ বাংলাদেশি নাবিক সুস্থ আছেন। তাদেরসহ জাহাজ ফেরত আনাই আমাদের প্রথম লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্য থেকে আমরা বিচ্যুত হব না।’ মুক্তিপণ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এখনো কোনো মুক্তিপণ তারা চায়নি। মুক্তিপণের ব্যাপারে কোনো যোগাযোগও করেনি।’ কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার জাহাজটি সোমালিয়ান উপকূলে নোঙর করা হয়েছে। ইফতারের আগ মুহূর্তে জাহাজের চিফ অফিসার মোহাম্মদ আতিকুল্লাহ খানের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। সব নাবিক সুস্থ আছেন। জিম্মি করার পর সবাইকে এক কেবিনে রাখা হলেও বৃহস্পতিবার বিকালে যার যার কেবিনে যেতে দেওয়া হয় নাবিকদের। এখনো পর্যন্ত জলদস্যুদের কাছ থেকে কোনো ধরনের ফোন পাইনি। বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়ার উপকূল থেকে ৭ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছে। জাহাজের সব নাবিক নিরাপদে রয়েছে। জাহাজ মালিকপক্ষ দস্যুদের সঙ্গে আলাপ করে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে। তাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার সব পদক্ষেপ নিচ্ছেন।’ জানা যায়, সোমালিয়া উপকূলের গ্যারাকাদ থেকে ৭ নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করার পর অপর একটি জলদস্যু গ্রুপের কাছে হস্তান্তর করা হয় এমভি আবদুল্লাহকে। দুপুর ১টার দিকে এ হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ হয়। এরপর জাহাজের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয় নতুন একটি গ্রুপকে। এ গ্রুপে ১৯ সদস্য রয়েছে। তাদের সবার হাতে রয়েছে ভারী অস্ত্র। নতুন দায়িত্ব নেওয়া দস্যুকে কোনো নাবিকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেনি। বরং বন্দি নাবিকদের এক কেবিন থেকে বের করে যার যার কেবিনে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। বন্দি নাবিকদের সাহরি এবং ইফতার দেওয়া হচ্ছে যথা সময়ে। একটি ইউরোপীয় জাহাজ থেকে আবদুল্লাহর ওপর নজর রাখার কথা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্স-ইইউএনএভিএফওআর। তাদের কার্যক্রম অপারেশন আটলান্টা হিসেবে পরিচিত। ইউরোপীয় নৌ নিরাপত্তা বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে- অপারেশন আটলান্টার অংশ হিসেবে তারা সোমালিয়া উপকূলে একটি জাহাজ মোতায়েন করেছে। ওই জাহাজটি বাংলাদেশি কার্গো জাহাজ আবদুল্লাহকে অনুসরণ করছে।

মধ্যস্থতাকারীর খোঁজে মালিকপক্ষ : সোমালিয়ান জলদস্যুতের হাতে জিম্মি ‘এমভি আবদুল্লাহ’কে মুক্ত করতে বিশ্বস্ত মধ্যস্থতাকারীকে খুঁজছে এসআর শিপিং করপোরেশন। এরই মধ্যে সোমালিয়ান জলদস্যু সর্দার লিয়ান। কারণ এ লিয়ানই বিগত ২০১১ সালে এসআর শিপিং করপোরেশনের ‘এমভি জাহান মনি’কে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করার সহায়ত করেছি। লিয়ান ছাড়াও আরও কয়েকটি মাধ্যমে এমভি আবদুল্লাহকে দস্যুদের হাত থেকে মুক্ত করার চেষ্টা চলছে। প্রতিষ্ঠানটির মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, সোমালিয়ান জলদস্যু গ্রুপগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে মধ্যস্থতা করে। আমরা চেষ্টা করছি সঠিক মাধ্যমে যোগাযোগ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নাবিক ও জাহাজকে জিম্মি দশা থেকে মুক্ত করতে।

পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে উদ্ধারে আশাবাদী সরকার : জিম্মিদের মুক্ত করার বিষয়ে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়। এতে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নেন। পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম বলেন, জাহাজ চলাচলের নানা ঝুঁকির রুট থাকে। আমাদের এই জাহাজটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ রুট দিয়ে যায়নি। তারপরও জলদস্যুরা অপেক্ষায়ই ছিল বা এ নিয়ে ভিন্নমত আছে। জলদস্যুরা জাহাজটির দখল নিয়ে সোমালিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে বৃহস্পতিবার ভোর নাগাদ সোমালিয়ার কাছাকাছি তারা নোঙর করেছে। জলদস্যুরা আমাদের সঙ্গে এখনো কোনো যোগাযোগ করেনি। বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা খবর রাখছি, জলদস্যুদের প্রায় ৬০ জন জাহাজে অবস্থান নিয়েছে এবং বাংলাদেশি ২৩ নাবিক সুস্থ আছেন। সচিব বলেন, এ বিষয়ে আমাদের আগের অভিজ্ঞতা আছে।

আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম বলেন, যারা জাহাজটি হাইজ্যাক করেছে, আমরা এক্সপেক্ট (আশা) করছি তারা কোনো না কোনো সময় আমাদের কনসার্ন অথরিটি অথবা জাহাজের মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তারপর আমরা স্ট্র্যাটিজি সেট করব যে কীভাবে তাদের সঙ্গে নেগোসিয়েশন বা অন্যান্য কিছুতে যাব। আপাতত আমরা চিন্তা করছি জাহাজের যারা ক্রু আছেন তারা যেন সেফ থাকেন।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ মোজাম্বিকের মাপুতো থেকে কয়লা নিয়ে আবর আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে যাওয়ার পথে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’। জাহাজে ২৩ নাবিক রয়েছেন। যাদের সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। জলদস্যুদের কবলে পড়া জাহাজটি চট্টগ্রাম ভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং করপোরেশনের। জাহাজটি সাধারণ পণ্য পরিবহন করে।

সর্বশেষ খবর