শিরোনাম
শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

সংযমী হোন প্রযুক্তি ব্যবহারেও

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

সংযমী হোন প্রযুক্তি ব্যবহারেও

আলহামদুলিল্লাহ! একে একে তিনটি সিয়াম শেষ। আজ আমরা চতুর্থ সিয়াম পালন করছি। সিয়াম শব্দের বিশ্লেষণে বলেছিলাম, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোনো কাজ বন্ধ রাখা বা থামিয়ে দেওয়া কিংবা বিরত থাকা। তবে সিয়াম কেবল খাওয়া অথবা যৌনাচার বন্ধ রাখার নাম নয়। আল্লাহ থেকে দূরে রাখে এমন সব কাজ থেকে দূরে থাকার নামই সিয়াম। আল্লাহ থেকে দূরে রাখে এমন সব কিছু থেকে নিজেকে দূরে রাখা সহজ বিষয় নয়। এটা রীতিমতো সাধনা। এ কারণেই আমরা বলি সিয়ামসাধনা। সাধনা কীভাবে হয়? কাক্সিক্ষত বস্তু লাভের উদ্দেশ্যে সাধক আরামের বিছানা ছেড়ে ঘরের বাইরে পা রাখেন। নাওয়া-খাওয়া ভুলে দেশ বিদেশের জানা-অজানা পথঘাট চষে বেড়ান। চলার পথে কোনো ভয় তাকে কাবু করতে পারে না। ক্ষুধা কিংবা শারীরিক কোনো কষ্ট তার কাছে কষ্ট মনে হয় না। কোনো কোনো সাধক লোকালয় ছেড়ে গভীর জঙ্গলে একধ্যানে বসে যুগের পর যুগ সাধনা করেন। আবার কেউ কেউ হিমালয়ের চূড়ায় উঠে খালি গায়ে ধ্যানে বসে কাক্সিক্ষত বিষয়ে তপস্যা করেন। সম্প্রতি এক সংবাদে দেখেছি, চাঁদের বিশেষ অ্যাংগেলে ছবি তোলার জন্য একজন আলোকচিত্রী দীর্ঘ ছয় বছর অপেক্ষা করেছেন। রাতের পর রাত সাধনার ফল তিনি পেয়েছেন ছয় বছর মানে প্রায় ১ হাজার ২০০ দিন নিরবচ্ছিন্ন সাধনার পর। যারা ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি করেন, তারা একটি বিশেষ আলোকচিত্র ধারণের জন্য যুগের পর যুগ কাটিয়ে দিয়েছেন এমন ইতিহাসও রয়েছে। বলছিলাম, সিয়ামের উদ্দেশ্য অর্জন করার জন্য কঠোর সাধনা প্রয়োজন। কেবল খাওয়া কিংবা যৌনাচার নয়-বাদ দিতে হবে মিথ্যা, গিবত, অন্যের সম্পদ বেদখল, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, হারাম উপার্জনের মতো গর্হিত কাজগুলো। এসব কাজ এক দিন বা এক সপ্তাহে বাদ দেওয়া সম্ভব নয়। প্রয়োজন দীর্ঘ সময়। এ জন্যই মাহে রমজান এক মাসের পূর্ণাঙ্গ কোর্স নিয়ে হাজির হয়েছে মুমিনের দুয়ারে। সব ধরনের অন্যায়ের পাশাপাশি বদলে ফেলতে হবে প্রযুক্তির অপব্যবহারের মতো ভয়ংকর অভ্যাসও। আফসোস! ছোট থেকে বুড়ো সবাই আজ প্রযুক্তির নেশায় বুঁদ হয়ে আছে। ভিডিও দেখা ছাড়া দুধের শিশুকে খাওয়ানো যায় না। ঘুম পাড়ানো যায় না কোলের শিশুকেও। যুবকদের অবস্থা আরও নাজুক। কোথাও বসে আছে কিংবা রাস্তায় হাঁটছে- কোনো প্রয়োজন নেই তবুও ঘোরগ্রস্ত মানুষের মতো মাথা নিচে দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল স্ক্রল করে যাচ্ছে। খাওয়ার সময়ও মোবাইল, পড়তে বসলেও মোবাইল, বাবা-মা কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কোনো বৈঠকেও মোবাইল থেকে চোখ সরে না এ প্রজন্মের।

বয়স্কদের অবস্থা তরুণদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভালো-মন্দ সব ভিডিওতেও চোখ আটকে যায় তাদের। কোথায় ছোটরা তাদের দেখে আদব-লেহাজ শিখবে, উল্টো বয়স্করা ছোটদের থেকে মোবাইল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ইন্টারনেট ব্রাউজিং শিখছে। শেখাটা যদি কাজের হতো, ইবাদতের হতো তাহলে বলার কিছু ছিল না। কিন্তু প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছে তা আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

প্রিয় ভাই! এভাবে অযথা সময় নষ্ট করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। তাও আবার রমজানের মতো মূল্যবান মাসে মোবাইল দেখে দেখে বেগার সময় পার করার কথা কল্পনা করতেও কষ্ট হয়। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, এ মাসে একটি নফল আমল ফরজের সমান, একটি ফরজ আমল সত্তরটি ফরজের সমান। সেখানে আমরা যদি মোবাইলে বুঁদ হয়ে থাকি তাহলে আমাদের ইমানি জজবা নিয়ে প্রশ্ন তোলা কি খুব অস্বাভাবিক ঠেকবে? কোথাও যদি ঘোষণা হয়, বাদশাহী ধনভান্ডার খুলে দেওয়া হয়েছে, যার যত খুশি নিয়ে নাও। এমন সময় কেউ যদি মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে, একটার পর একটা ভিডিও দেখে দেখে সময় কাটিয়ে দেয়, প্রয়োজন নেই তবুও একই পেজ বারবার স্ক্রল করে, তাকে যেমন মানুষ পাগল বলবে, তার মানসিক সুস্থতার বিষয়ে যেমন সবাই প্রশ্ন করবে; ঠিক একইভাবে মাহে রমজানে আল্লাহর ধনভান্ডার খুলে দেওয়ার পরও যারা অহেতুক প্রযুক্তির নোংরা ডোবায় ডুবে রয়েছে, তাদের ইমানি জজবা এবং কলবের সুস্থতা নিয়েও প্রশ্ন তোলার সময় এসেছে। আল্লাহতায়ালা আমাদের দীনের সঠিক বুঝ দিন। আমিন।

সর্বশেষ খবর