শনিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

জাহাজ সরিয়ে নিল জলদস্যুরা

ঈদের আগে দেশে ফিরতে চান নাবিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও চট্টগ্রাম

ভারত মহাসাগর থেকে জিম্মি করা বাংলাদেশি পতাকাবাহী ‘এমভি আবদুল্লাহ’ সোমালিয়ার উপকূলে নেওয়ার এক দিনের মাথায় আরেকটা এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে জাহাজটি আগের নোঙর করা এলাকা থেকে ৫০ নটিক্যাল মাইল উত্তরে এবং গোদবজিরান উপকূল থেকে চার নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করা হয়েছে। বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন গতকাল এ তথ্য জানিয়ে বলেন, এখন পর্যন্ত দস্যুরা কোনো পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।’ ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্স বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এমভি আবদুল্লাহর সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘অপারেশন আটলান্টা’ বাংলাদেশি পতাকাবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর জলদস্যুতার শিকার হওয়ার ঘটনাটি এখনো অনুসরণ করছে। এর অংশ হিসেবে তারা সোমালিয়া উপকূলে একটি জাহাজ মোতায়েন করেছে। ওই জাহাজটি বাংলাদেশি কার্গো জাহাজ আবদুল্লাহকে অনুসরণ করছে। ছিনিয়ে নেওয়ার সময় এমভি আবদুল্লাহতে ২০ জন সশস্ত্র জলদস্যুর উপস্থিতি থাকলেও এখন জাহাজে ১২ জন দস্যু আছে। কিছুদিন আগে ওই অঞ্চলে এমভি রুয়েন নামের আরেকটি জাহাজ জলদস্যুতার শিকার হয়েছিল। ওই জাহাজটি যারা ছিনিয়ে নিয়েছিল সেই একই জলদস্যু গ্রুপ এমভি আবদুল্লাহর ঘটনায় জড়িত বলে ধারণা করছে ‘অপারেশন আটলান্টা’। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সোমালি উপকূলের উত্তর, দক্ষিণ আর মধ্যাঞ্চলে সোমালিয়ার জলদস্যুদের তিনটি সম্ভাব্য ক্যাম্প চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব ক্যাম্প থেকেই জলদস্যুরা জাহাজ ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযানে সহায়তা করে থাকে। ‘অপারেশন আটলান্টা’ এমভি আবদুল্লাহকে ঘিরে তাদের কার্যক্রম এখনো চলছে উল্লেখ করে জানায়, ছিনতাই হওয়া জাহাজের পরিস্থিতি এখনো একই রকম আছে এবং জাহাজের নাবিকরা নিরাপদে আছে। ‘কার্যকর পদক্ষেপ’ নিতে অপারেশন আটলান্টা বাংলাদেশ ও সোমালি কর্তৃপক্ষ এবং ওই অঞ্চলের সমুদ্র নিরাপত্তায় কাজ করা অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বলেও সর্বশেষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। ব্রিটিশ মেরিটাইম সিকিউরিটি ফার্ম অ্যামব্রে বলেছে, সন্দেহ করা হচ্ছিল, অন্যান্য বাণিজ্যিক জাহাজে আরও হামলা চালানোর জন্য মাদারশিপ হিসেবে এমভি রুয়েন জাহাজটিকে ব্যবহার করা হতে পারে। অ্যামব্রের তথ্যানুসারে, রুয়েনকে সোমালিয়ার ইয়েলের ১৬০ নটিক্যাল মাইল (২৯৬ কিমি) দক্ষিণ-পূর্বে পূর্ব দিকে যাত্রা করতে দেখা গেছে। সংস্থাটি ওই এলাকার অন্যান্য জাহাজকে সতর্কতা বাড়ানোর পরামর্শও দিয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সোমালি জলদস্যুরা ২০১৮ সাল থেকে এক দশক ধরে গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক জলপথে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে রেখেছিল। এরপর তাদের কার্যক্রম কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়লেও গত বছরের শেষের দিক থেকে তাদের আক্রমণ আবারও বাড়তে শুরু করে। আগে ছিনতাই হওয়া জাহাজ ব্যবহার করে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশি জাহাজে জলদস্যুদের হামলার এই তথ্য সঠিক হলে তা এ দস্যুদের সেই কৌশলেই ফিরে আসাকে চিহ্নিত করবে যে, তারা আগের মতোই খুব সক্রিয় হয়ে উঠেছে। রয়টার্স বলছে, ২০১৭ সাল থেকে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর ব্যাপক তৎপরতার কারণে এডেন উপসাগর এবং ভারত মহাসাগরে ছিনতাই বন্ধ করে দেয় সোমালি জলদস্যুরা। এরপর থেকে গত বছরের ডিসেম্বরে মাল্টিজ-পতাকাবাহী বাল্ক কার্গো জাহাজ এমভি রুয়েন হাইজ্যাক করাই ছিল তাদের প্রথম সফল ছিনতাই। সেই ঘটনার পর কয়েক মাস পার হলেও রুয়েনের অপহৃত ক্রুদের মুক্তিপণ পরিশোধ করা হয়নি। জলদস্যুরা চিকিৎসার কারণে একজনকে ছেড়ে দিলেও ১৭ জন ক্রুকে এখনো ধরে রেখেছে। মেরিটাইম সিকিউরিটি সেন্টার- হর্ন অব আফ্রিকা, ইউন্যাভফরের পরিকল্পনা ও সমন্বয় কেন্দ্র থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের নভেম্বর থেকে এডেন উপসাগর এবং সোমালি উপকূলের চারপাশে ২০টিরও বেশি হাইজ্যাকিং বা জাহাজ হাইজ্যাক করার চেষ্টা করা হয়েছে।

ঈদের আগে ফিরতে চান নাবিকরা : জিম্মি হওয়া জাহাজ থেকে চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান তার ছোট ভাইকে পাঠানো ভয়েস মেসেজে ঈদের আগে দেশে পরিবারের কাছে ফিরতে আকুতি জানিয়েছেন। মেসেজে নাবিক বলেন, ‘বুধ ও বৃহস্পতিবার দুইটা নেভি জাহাজ এসে আমাদের রেসকিউ করতে চেয়েছিল। কিন্তু সম্ভব নয়, কারণ ওরা তখন আমাদের মাথায় গান ধরে জিম্মি করে রাখে। নেভি জাহাজ ফ্রিগেট আসলে তারা আমদের জিম্মি করে। জলদস্যুরা এখন পর্যন্ত কাউকে আঘাত করেনি। তবে আমি যেখানে ঘুমাই সেখানে পাশ ফিরলেই দেখতে পাই যে আমার দিকে বড় বড় মেশিনগান তাক করে রেখেছে। এ অবস্থায় ঘুম যা হওয়ার হচ্ছে। তারপরও মানসিকভাবে চাপে থাকলেও সুস্থ থাকার চেষ্টা করছি।’ তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, এখনো খাবার আছে। কিন্তু যেহেতু জলদস্যুরাও আমাদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করছে, আমাদের পানি ব্যবহার করছে, আমাদের খাবার আর কতদিন যাবে সেটা বলতে পারছি না। আর হয়তো ১০-১৫ দিন বড়জোর যেতে পারে। এরপর খাবার শেষ হয়ে গেলে আমরা খুব কষ্টে পড়ে যাব। পানি শেষ হয়ে গেলে খুব কষ্টে পড়ে যাব। আমি আশা করি শিগগিরই পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারব। ঈদের আগে যেন পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারি, সেটাই আমরা চাই।’ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়া পথে গত মঙ্গলবার দস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। কবির গ্রুপের মালিকানাধীন এস আর শিপিংয়ের জাহাজটি নৌপথে পণ্য পরিবহন করে। দস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার সময় এস আর শিপিং কর্তৃপক্ষ ও স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগও করেন নাবিকরা। মুক্তিপণ না দিলে দস্যুরা তাদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে বলেও জানান নাবিকরা। তবে এখন পর্যন্ত জলদস্যুদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ হয়নি জাহাজ মালিক বা বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের কারও।

সর্বশেষ খবর