রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

রোজা ফরজ হওয়ার আলোচনা

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

রোজা ফরজ হওয়ার আলোচনা

আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম সাধনা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। আশা করা যায় তোমরা মুত্তাকি হতে পারবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বদর যুদ্ধের এক মাস আগে রোজা ফরজ হয়। আর বদর যুদ্ধ হয় দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান।

এ হিসেবে দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসের ১৭ তারিখে রোজা ফরজ হওয়ার আয়াত নাজিল হয়েছে। জগৎবিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) রজমজানের সিয়াম ফরজ হওয়ার আয়াত সম্পর্কে একটি চমৎকার বর্ণনা তার মুসনাদে উল্লেখ করেছেন। জলিলে কদর সাহাবি মুয়াব বিন জাবাল (রা.) বলেন, ‘দয়াল নবীজি (সা.) যখন মদিনায় এসেছেন তখনো মাহে রমজানের সিয়াম ফরজ হয়নি। তখন মদিনার ইহুদিরা মহররম মাসের ১০ তারিখে আশুরা এবং প্রতি মাসের ১৩-১৫ তারিখ নিয়মিত রোজা রাখতেন। এই রোজা তারা ফরজ হিসেবে পালন করতেন। রসুলও (সা.) ইহুদিদের দেখাদেখি আশুরার রোজা রাখার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতের মাধ্যমে রমজান মাসের রোজা ফরজ করা হলে আশুরার রোজাসহ অন্যান্য মাসের রোজা নফল হয়ে যায়।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নম্বর ২২১২৪)।

আল্লামা কাজি সানাউল্লাহ পানিপথি (রহ.) তার তাফসিরে বুখারি-মুসলিমের সূত্রে উল্লেখ করেন, ‘আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে রসুল (সা.) আশুরার রোজা রাখার ব্যাপারে জোর দিতেন। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর আশুরার রোজা ঐচ্ছিক হয়ে যায়।’

বুখারি-মুসলিম সূত্রে আরেকটি হাদিস তাফসিরে মাজহারির লেখক উল্লেখ করেছেন, ‘হজরত সালমা বিন আকওয়া (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে- মহররম মাসের ১০ তারিখে রসুল (সা.) একজন ঘোষককে ডেকে বলতেন, মানুষকে জানিয়ে দাও আজ আশুরার দিন। যারা সকাল থেকে কিছু খায়নি তারা যেন রোজা রাখে। আর যারা কিছু খেয়ে ফেলেছে তারাও যেন সন্ধ্যা পর্যন্ত না খেয়ে থাকে।’ (তাফসিরে মাজহারি, প্রথম খন্ড, ৩৫৮ পৃষ্ঠা)। রোজা ফরজ হওয়ার বিষয়ে বুখারি শরিফের বিখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, ‘আশুরার রোজা আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরজ ছিল না। বরং রসুল (সা.) নিজে এ রোজাকে খুব গুরুত্ব দিতেন। হজরতের ইচ্ছা ছিল রোজার ব্যাপারে আসমানি কোনো বিধান নাজিল হোক।

তবে বুখারি-মুসলিমে এসেছে, আয়শার (রা.) এক বর্ণনা থেকে জানা যায়, জাহেলি যুগে মক্কার কোরাইশরাও আশুরার রোজা রাখত। নবুওয়তের আগে রসুল (সা.) নিজে মক্কা ও মদিনায় আশুরার রোজা রাখতেন। যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো তখন রসুল (সা.) আশুরার রোজা রাখা ছেড়ে দিলেন।’ (তাফসিরে মাজহারি, প্রথম খ , ৩৫৮ পৃষ্ঠা)।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর