সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে। সরকারের বাজেট ঘাটতি কমেছে ঠিক; কিন্তু ঘাটতি নিরসনে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে। বছরজুড়ে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে। এ ছাড়া রপ্তানি, রিজার্ভ, প্রবাসী আয়, বিদেশি বিনিয়োগসহ বহিস্থ খাতের প্রায় সব সূচকে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে গতকাল ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন- উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ে ধীরগতির কারণে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা হারিয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ হবে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। তিনি বলেন- এই বাজেট চ্যালেঞ্জিং সময়ে প্রণীত হতে যাচ্ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব আহরণ নিম্নগতি, বহিস্থ খাতের খারাপ অবস্থার কারণে আমরা সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা হারিয়ে ফেলেছি। এই স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করাই হবে আগামী বাজেটের মূল উদ্দেশ্য। মূল্যস্ফীতির চাপ কমানো ও বিনিময় হার স্থিতিশীল করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। ফাহমিদা খাতুন বলেন, জিডিপির প্রবৃদ্ধির ওপর নজর না দিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় মনোযোগ দিতে হবে। রাজস্ব ও মুদ্রানীতি একসঙ্গে চলতে হবে। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দেওয়ার পর যদি রাজস্ব আয়ের অপচয় করা হয় তাহলে মুদ্রানীতি কাজ করবে না। সুতরাং এই দুটির মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। স্বল্প মেয়াদি সমস্যার পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদি সমস্যার দিকে নজর দিতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত সংস্কারে এখনই উদ্যোগ নিলে সমস্যাগুলোর সমাধান মিলবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন- প্রতিষ্ঠানটির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষক মুনতাসীর কামাল প্রমুখ।
মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, নির্বাচনি ইশতেহারে মূল্যস্ফীতি কমানো ছিল বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। তা বাস্তবায়নে সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু কেউ বাজারকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে সাত দিনে ৫০ কোটি টাকা লাভ করতে পারলে ৫০ লাখ বা ১ কোটি টাকা জরিমানা করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। সে জন্য বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে এবং তা দৃশ্যমান হতে হবে। তিনি বলেন, ব্যাংক একীভূত করা হচ্ছে- এটি ইতিবাচক। কিন্তু যেসব কারণে ব্যাংক একীভূত করা হবে, সে কারণগুলো বের করে সমাধান করতে হবে। তা না করে শুধু একীভূত করা হলে কার্যকর কিছু হবে না। খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য লক্ষ্যভিত্তিক যে কর্মচাঞ্চল্য থাকা প্রয়োজন ছিল, তা দেখা যায়নি। সংস্কার কোথায় দরকার, তা বহুবার বলা হয়েছে; এখন বাজেটে তার প্রতিফলন প্রয়োজন।