রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
লোকসভা নির্বাচনের তফসিল

ভারতে ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুন সাত দফায় ভোট

কলকাতা প্রতিনিধি

ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ৫৪৩টি আসনের জন্য ভোট নেওয়া হবে মোট সাত দফায়। আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে নির্বাচন, চলবে ১ জুন পর্যন্ত। দ্বিতীয় দফার ভোট হবে ২৬ এপ্রিল, তৃতীয় দফায় ৭ মে, চতুর্থ দফায় ১৩ মে, পঞ্চম দফায় ২০ মে, ষষ্ঠ দফায় ২৫ মে এবং সপ্তম দফার ভোট নেওয়া হবে ১ জুন। গণনা হবে ৪ জুন। গতকাল বিকালে দিল্লির বিজ্ঞান ভবনের প্লেনারি হলে সংবাদ সম্মেলন করে লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুই নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার এবং সুখবীর সিং সান্ধু। এইসঙ্গে ওড়িশা, সিকিম, অন্ধ্রপ্রদেশ ও অরুণাচল প্রদেশ রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনেরও তফসিল ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়াও দেশজুড়ে একাধিক রাজ্যের ২৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনও হবে। অন্ধ্রপ্রদেশে ১৭৫ আসনে এক দফায় ভোট নেওয়া হবে ১৩ মে। ওড়িশায় ১৪৭ আসনে চার দফায় আগামী ১৩, ২০, ২৫ মে এবং ১ জুন ভোট নেওয়া হবে সিকিমে ৩২ আসনে এক দফায় ১৯ এপ্রিল ভোট নেওয়া হবে এবং অরুণাচল প্রদেশে ৬০ আসনের জন্য ১৯ এপ্রিল ভোট হবে।

সাত দফায় নির্বাচন করানো নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘দেশের ভৌগোলিক চিত্র দেখুন, নদী থেকে পাহাড় মরুভূমি নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত নিরাপত্তা বাহিনীর কথা ভাবুন।

তাদের ওপর কী চাপ দেখুন? ২-৩ দিন সময়ের মধ্যে তাদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হবে। তার মাঝে দোল উৎসব, রামনবমীসহ একাধিক উৎসব রয়েছে। এসব কথা ভেবেই নির্বাচনের দিনক্ষণ স্থির করতে হয়েছে।’

গোটা দেশের মধ্যে অরুণাচল প্রদেশ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, অন্ধ্রপ্রদেশ, চণ্ডীগড়, দাদরা ও নগর হাভেলি, দিল্লি, গোয়া, গুজরাট, হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, কেরল, লাক্ষাদ্বীপ, লাদাখ, মিজোরাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, পদুচেরি, সিকিম, তামিলনাড়ু, পাঞ্জাব, তেলেঙ্গানা এবং উত্তরাখণ্ড- এই ২২ রাজ্যে এক দফায় ভোট নেওয়া হবে। কর্ণাটক, রাজস্থান, ত্রিপুরা ও মণিপুর এই ৪ রাজ্যে দুটি দফায় ভোট নেওয়া হবে। ছত্তিশগড় এবং অসম-এই ২ রাজ্যে তিনটি দফায় নির্বাচন হবে। ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ ও ঝাড়খণ্ড-এই ৩ রাজ্যে চারটি দফায় নির্বাচন হবে। মহারাষ্ট্র, জম্মু ও কাশ্মীরে পাঁচটি দফায় নির্বাচন হবে। সর্বাধিক সাত দফায় নির্বাচন নেওয়া হবে তিনটি রাজ্য-পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং উত্তর প্রদেশে। এ নিয়ে রাজীব কুমার বলেন, যে রাজ্যগুলোতে সাত দফায় নির্বাচন হচ্ছে সেখানে লোকসভা আসন সংখ্যা বেশি, কেন্দ্র বেশি।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে এবার গোটা দেশে নিবন্ধিত মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৯৭ কোটি। পুরুষ ভোটের সংখ্যা ৪৯.৭ কোটি, নারী ভোটারের সংখ্যা ৪৭.১ কোটি। নতুন ভোটার ১.৮২ কোটি এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৪৮ হাজার। দেশজুড়ে ভোট গ্রহণ কেন্দ্র খোলা হবে ১৯.৫ লাখের মতো। এ জন্য ৫৫ লাখ ইভিএমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভোটকর্মী এবং নিরাপত্তাকর্মী মিলিয়ে সংখ্যাটা ১.৫ কোটি। ৮৫ বছরের ঊর্ধ্বে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে আসতে না পারলে সে ক্ষেত্রে তাদের বাড়িতে গিয়ে ভোট নেওয়া হবে।

কমিশন পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন করতে কমিশন বদ্ধপরিকর এবং এই লক্ষ্যে কোনোরকম সহিংসতা রক্তপাত বরদাস্ত করা হবে না। দেশের কোনো প্রান্ত থেকে নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতার খবর এলেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন : রাজ্যের মোট ৪২ লোকসভার আসনে ভোট নেওয়া হবে সাত দফায়। ১৯ এপ্রিল প্রথম দফায় ভোট নেওয়া হবে জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে। ২৬ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় দার্জিলিং, রায়গঞ্জ ও বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রে। ৭ মে তৃতীয় দফায় মালদহ উত্তর, মালদা দক্ষিণ, জঙ্গিপুর, মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে। ১৩ মে চতুর্থ দফায় বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর, আসানসোল, বোলপুর, বীরভূম কেন্দ্রে। ২০ মে পঞ্চম দফায় বনগাঁ, ব্যারাকপুর, হাওড়া, শ্রীরামপুর, হুগলি, উলুবেরিয়া ও আরামবাগ কেন্দ্রে। ২৫ মে ষষ্ঠ দফায় তমলুক, কাঁথি, ঝাড়গ্রাম, ঘাটাল মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে। ১ জুন সপ্তম ও শেষ দফায় দমদম, বারাসাত, বসিরহাট, জয়নগর, মথুরাপুর, ডায়মন্ডহারবার, যাদবপুর, কলকাতা দক্ষিণ ও কলকাতার উত্তর কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হবে।

শেষবার ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় মোট ৭ দফায়- ১১ এপ্রিল থেকে ২৩ মে পর্যন্ত। যদিও তার আগে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৯ দফায়।

ইতোমধ্যেই বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিআইএম-সহ একাধিক দল বেশ কিছু আসনে তাদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। শুধু তাই নয় নির্বাচনি প্রচারণাও শুরু করে দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো।

সর্বশেষ খবর