সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
মার্কিন সংস্থার প্রতিবেদন

মানসম্পন্ন হয়নি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মানসম্পন্ন হয়নি বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিক ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই)। গতকাল সংস্থা দুটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নির্বাচন-পরবর্তী বিশেষজ্ঞ মূল্যায়ন মিশন (টিএমএম)-এর প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করা হয়েছে। সরকারি ও বিরোধী দলের সহিংসতা, রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সহিংসতা, নাগরিক স্বাধীনতার সংকোচন, বাকস্বাধীনতা ও সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতার অবনতিকে দায়ী করেছেন তারা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন দলকে সুবিধা দিতে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা পরিষেবা এবং বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান অসমভাবে নির্বাচনি বিধি প্রয়োগ করেছে। বিরোধী দলের সদস্যদের গ্রেফতার এবং তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড সীমিত করার চেষ্টাও করেছে তারা। ফলে নির্বাচনের সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সম্পর্কে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ রয়েছে। এতে আরও বলা হয়, দেশব্যাপী কার্যকর নির্বাচনি প্রতিযোগিতার অনুপস্থিতি ও নিরাপত্তায় সরকারের বাড়তি নজরের কারণে পূর্ববর্তী নির্বাচনের তুলনায় সহিংসতা কম হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্ট স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতা ঘটেছে। নির্বাচনি প্রচার মিছিলে হামলা, প্রচার কার্যালয় ভাঙচুর, বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও হুমকির ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে বিএনপি নির্বাচন ঠেকাতে অহিংস আন্দোলনের কথা বললেও অগ্নিসংযোগ, শারীরিক হামলা, ভাঙচুরসহ নানা সহিংসতায় জড়িয়েছে। তাদের সহিংসতায় এক পুলিশ অফিসারের মৃত্যুও ঘটেছে। এ ছাড়াও সরকারের প্রতিশোধ নেওয়ার ভয়ের ফলে মিডিয়া স্ব-সেন্সরশিপ করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। সাংবাদিকরা নির্বাচনি প্রচারণা ও বিক্ষোভের সময় ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধীদের সহিংসতার শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশের আইনি কাঠামো লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শীর্ষ পর্যায়ের রাজনীতিবিদ ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব ও ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ নির্বাচনে মহিলা প্রার্থীদের অপমান ও হুমকি প্রদানের অভিযোগ উঠেছে প্রতিদ্বন্দ্বী পুরুষ প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর সহিংসহার ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনে ভোট প্রদানের জন্য তারা অর্থনৈতিক চাপেরও সম্মুখীন হয়েছে। এ ছাড়া উচ্ছেদ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার হুমকিও দেওয়া হয় তাদের। এ ছাড়াও পরবর্তী নির্বাচনের পূর্বে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে পাঁচটি নীতির ওপর ভিত্তি করে ২৮টি সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। নীতিগুলো হলো- প্রথমত, অহিংস নির্বাচনি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে রাজনৈতিক দল, সরকারি প্রতিষ্ঠান, নাগরিকসহ সবাইকে রাজনীতির নিয়ম অনুশীলনে ভূমিকা পালন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, নিরাপত্তাকর্মীদের জন্য আচরণবিধি প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচনি সহিংসতা সম্পর্কিত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তিকরণ। তৃতীয়ত, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা প্রশমন এবং সহিংসতা প্রশমনে সরকারকে পরামর্শ প্রদান। সর্বশেষ রাজনৈতিক দলগুলোর অহিংসার সংস্কৃতি গড়ে তোলা এবং নির্বাচনি সহিংসতায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা।

সর্বশেষ খবর