সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

আল্লাহর ওলি হওয়ার মাস রমজান

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

আল্লাহর ওলি হওয়ার মাস রমজান

মাহে রমজানের মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘রমজান মাস হলো সেই মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন- যা মানুষের জন্য হেদায়াত এবং সত্য পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ; আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী।’ (সুরা বাকারাহ, আয়াত ১৮৫)।

আয়াতে আরবি শব্দ এসেছে- ‘শাহরু রামাদান’। ‘শাহরুন’ অর্থ হলো প্রসিদ্ধ। অর্থাৎ রমজান একটি প্রসিদ্ধ বা পরিচিত মাস। কীসের জন্য প্রসিদ্ধ? দুটি কারণে। একটি হলো- গুনাহ মুক্ত হয়ে আল্লাহর ওলি হওয়ার জন্য এ মাসটি প্রসিদ্ধ। আরবি ‘রমজ’ ধাতু থেকে রমজান শব্দটি এসেছে। রমজ অর্থ কোনো কিছু জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছাই করে ফেলা। প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইসফাহানি (রহ.) তার তারগিব গ্রন্থে আনাস (রা.) সূত্রে উল্লেখ করেছেন, ‘রসুল (সা.) বলেছেন, গুনাহ জ্বালিয়ে ছাই করে দেয় বলেই মাসটির নাম রমজান রাখা হয়েছে।’

মুফাসসির ইবনে কাসির (রহ.) তার তাফসিরে লিখেন- ‘বুজুর্গদের থেকে বর্ণিত আছে, শুধু ‘রমজান’ বলা মাকরুহ। বলতে হবে রমজান মাস। কেননা আল্লাহ নিজেও শুধু রমজান বলেননি। তিনি বলেছেন, শাহরু রমজান। শাহর শব্দের অন্য অর্থ মাস। শাহরু রমদান অর্থ রমজান মাস। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘তোমরা শুধু রমজান বল না। রমজান হলো আল্লাহর একটি নাম। তোমরা বলবে রমজান মাস।’ অবশ্য ইমাম বুখারি (রহ.) এ মতের বিপক্ষে ফতোয়া দিয়েছেন। তিনি একটি অধ্যায়ে এ সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণনা করেছেন যেখানে রমজান শব্দটি স্বাভাবিকভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে। রমজান মাসটি প্রসিদ্ধ হওয়ার দ্বিতীয় কারণ হলো- এ মাসেই কোরআন নাজিল হয়েছে। আরবি করনুন শব্দ থেকে এসেছে কোরআন। অর্থ একত্রিত করা বা বিচিত্র বিষয়ের সমাহার ঘটানো। পবিত্র কোরআনে মানুষের প্রয়োজনীয় যত বিষয় আছে সব বিষয়ের সমহার হয়েছে এ গ্রন্থে। এখানে হালাল আছে, আছে হারামও। ইতিহাস, বিজ্ঞান, সমাজ, রাষ্ট্র, মনোবিজ্ঞান, পরিবেশ, প্রত্নতত্ত্বসহ সব ধরনের বিষয়ের আলোচনার সমাহার ঘটেছে। ভাষাতাত্ত্বিকরা কোরআন শব্দের বিশ্লেষণে আরেকটি মত দিয়েছেন। আরবি কিরাত থেকে এসেছে কোরআন। এ হিসেবে কোরআন শব্দের অর্থ বারবার পড়ার যোগ্য বিষয়। কোরআন এমন এক গ্রন্থ যা প্রতিনিয়ত পড়তে হয়, চর্চা করতে হয়; কোরআন নামকরণের এও যৌক্তিক কারণ বলে মনে করেন কেউ কেউ। তবে ইমাম শাফেয়ি (রহ.) মনে করেন, কোরআন শব্দটি তাওরাত, জাবুর ইঞ্জিলের মতোই একটি নাম। অন্য কোনো শব্দ থেকে এ নাম গ্রহণ করা হয়নি।

সুরা বাকারায় আল্লাহ বলেছেন, ‘রমজান মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে।’ সুরা কদরে বলা হয়েছে, ‘লাইলাতুল কদরে নাজিল হয়েছে কোরআন।’ আবার সুরা দুখানে বলা হয়েছে, ‘লাইলাতুল মোবারাকায় কোরআন নাজিল হয়েছে।’ অন্য আয়াতে এসেছে, ‘বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে কোরআন নাজিল হয়েছে।’ কোরআন নাজিলের বিষয়ে এত বিভিন্ন রকমের আয়াত সম্পর্কে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের (রা.) কাছে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে তিনি বলেন, ‘রমজান মাসে লাইলাতুল কদরে লওহে মাহফুজ থেকে পৃথিবীর নিকটতম আকাশে বাইতুল ইজ্জতে সম্পূর্ণ কোরআন একসঙ্গে নাজিল হয়েছে। তারপর বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রয়োজন অনুযায়ী অল্প অল্প করে দীর্ঘ ২৩ বছরে পুরো কোরআন পৃথিবীবাসীর ওপর নাজিল হয়েছে।’ দাউদ ইবনে হিন্দ বলেন, আমি শাবিকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আল্লাহ বলেছেন রমজান মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে। তার মানে কি অন্য কোনো মাসে কোরআন নাজিল হয়নি?’ জবাবে শাবি বলেন, ‘অবশ্যই অন্যান্য মাসেও কোরআন নাজিল হয়েছে। তবে রমজান মাস বিশেষভাবে উল্লেখের কারণ হলো- বছরজুড়ে যে কয়টি আয়াত নাজিল হতো, জিবরাইল (আ.) রমজান মাসে সব হুজুরকে (সা.) শোনাতেন। এরমধ্যে আল্লাহর যতটুকু ইচ্ছা ততটুকু রাখতেন বাকিটুকু তিনি ভুলিয়ে দিতেন।’ 

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি, পীর সাহেব, আউলিয়ানগর,www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর