সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

নাবিকদের জিম্মি করায় জাহাজটি থামানো যায়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ সোমালীয় উপকূলে যাওয়ার সময় আটকানোর চেষ্টা করে ভারতীয় ও ইউরোপীয় দুটি যুদ্ধজাহাজ। এ সময় নাবিকদের জাহাজের ব্রিজে এনে তাদের দিকে বন্দুক তাক করলে ওই দুটি জাহাজকে সরে যেতে অনুরোধ করেন আবদুল্লাহর ক্যাপ্টেন। শনিবার রাতে জাহাজের চিফ   অফিসার আতিকুল্লাহ খানের পাঠানো অডিও বার্তায় এ তথ্য জানা যায়। কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘শনিবার রাতে নাবিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা সবাই সুস্থ আছেন। তবে দস্যুরা মুক্তিপণের দাবিতে ফোন করেনি। আমরা দ্রুত জিম্মি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছি।’ জানা যায়, এমভি আবদুল্লাহ জিম্মি করার পর কোনো না কোনো ভাবে মালিক পক্ষ ও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন নাবিকরা। কিন্তু শনিবার রাতের পর নাবিকদের সঙ্গে পুরোপুরি যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে পরিবার ও মালিক পক্ষের। সর্বশেষ শনিবার রাতে জাহাজের চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান অডিও বার্তা পাঠান।  ওই রেকর্ডে বলা হয়- ‘গতকাল (শুক্রবার) সকালে সোমালিয়ার উপকূলে অগ্রসর হওয়ার সময় ইউরোপ এবং ভারতীয় দুটি নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ সোমালিয়ার জলদস্যুদের থামতে বলেছে। ওয়ার্নিং দিয়েছে। ইঞ্জিন বন্ধ করতে বলেছে। এ সময় আশপাশে পানিতে গোলাগুলি করেছে। কিন্তু জলদস্যুরা নির্বিকার ছিল। এ সময় জলদস্যুরা মনে করেছিল বাংলাদেশের নাবিকরা ওদের ডেকে এনেছে। তাই ওরা (জলদস্যু) রাগ করে সবাইকে ব্রিজে নিয়ে বন্দুকের মুখে রেখেছিল। পরে ক্যাপ্টেন রেডিওতে ভারতীয় নৌবাহিনীকে যেতে বললে দস্যুরা শান্ত হয়।’

বাংলাদেশি মিডিয়ায় নজর দস্যুদের : এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করা জলদস্যুরা বাংলাদেশি গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ করছে। এ জন্য একজন দোভাষীও নিয়োগ দিয়েছে দস্যুরা। কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জলদস্যুরা বাংলাদেশের মিডিয়ার ওপরও নজর রাখছে। তাদের দোভাষী বাংলাদেশের টিভি আর মিডিয়ার ওপর চোখ রেখেছে সব সময়। মনে হচ্ছে, সরকারের যুক্ত হওয়া এবং মিডিয়ার আগ্রহের ওপর ভিত্তি করে মুক্তিপণ নির্ধারণ করবে দস্যুরা। তাই এটা নিয়ে গুজব কিংবা অতি বাড়াবাড়ি না করার অনুরোধ করেন ওই কর্মকর্তা।

বার বার অবস্থান পরিবর্তন করছে দস্যুরা : এদিকে এমভি আবদুল্লাহ বার বার অবস্থান পরিবর্তন করছে। গত রাতে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন জানান, জাহাজটি বর্তমানে গারাকাদ বন্দর থেকে ৪০ মাইল দক্ষিণে ও উপকূল থেকে চার মাইল দূরে নোঙর করা আছে। গত বৃহস্পতিবার সোমালিয়ার গারাকাদ বন্দর থেকে ২০ নটিক্যাল মাইল দূরে জাহাজটি প্রথম নোঙর করে। শুক্রবার আবার নোঙর তুলে ৪৫-৫০ নটিক্যাল মাইল উত্তর দিকে সরিয়ে সোমালিয়ার গদবজিরান উপকূল থেকে ৪ নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে। প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ মোজাম্বিকের মাপুতো থেকে কয়লা নিয়ে আবর আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে যাওয়ার পথে সোমালীয় জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’। জাহাজে ২৩ জন নাবিক রয়েছেন। যাদের সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। জলদস্যুদের কবলে পড়া জাহাজটি চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং করপোরেশনের। জাহাজটি সাধারণ পণ্য পরিবহন করে।

সর্বশেষ খবর