মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

কোরআনে লুকিয়ে আছে সুখী জীবনের রহস্য

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

কোরআনে লুকিয়ে আছে সুখী জীবনের রহস্য

খোদার বিধান আর মানুষের বিধানের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক আলোচনায় বলেছিলেন, প্রভুর বিধানে কোনো জটিলতা নেই। কুটিলতা নেই। আর মানুষের বিধানে সহজ বলতে কিছু নেই। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এক চিলতে আলোর জন্য প্রথমে একটি কুপি বানাতে হয়। সে কুপির জন্য সলতের প্রয়োজন। প্রয়োজন তেলের। তারপর দিয়াশলাই ঘষে কুপিতে আগুন জ্বালাতে  হয়। ছোট্ট একটি কুপি ও দিয়াশলাই দুটোই তৈরি হয় কারখানায়। হাজার হাজার শ্রমিক সেখানে কাজ করেন। লাখ লাখ গাছ কাটা পড়ে দিয়াশলাই বানানোর জন্য। মনকে মন টিন ব্যববহার হয় কুপির কারখানায়। এত প্রচেষ্টার পর যখন তুমি কুপি জ্বালাও তখন যেটুকু আলো পাওয়া যায় তা নিতান্তই সামান্য। হয়তো পড়ার টেবিল কিংবা খাবার ঘরের এক অংশ আলোকিত হয়। মানুষের কত জটিল চেষ্টার পর একবিন্দু আলো পাওয়া গেল। কিন্তু খোদার আলো পাওয়ার জন্য কোনো জটিল কিংবা কঠিন পরিশ্রমের প্রয়োজন নেই। শুধু ঘরের জানালাটা খুলে দাও। পুরো ঘর আলোয় ফকফক করবে। রোজার আলোচনা করতে গিয়েও আল্লাহতায়ালা সে কথাই বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, কঠিন করতে চান না।’ (সুরা বাকারাহ, আয়াত ১৮৫)। নামাজ-রোজাসহ ইসলাম যত ইবাদত ও অভ্যাসের নির্দেশ মানুষকে দিয়েছে, কারও কারও কাছে সেগুলো বোঝা মনে হতে পারে। আসলে আমাদের চিন্তারাজ্যের বড় এলাকাজুড়ে শয়তানের কর্তৃত্ব। কেউ কেউ হয়তো ভাবতে পারেন, এত বিধি নিষেধের কী প্রয়োজন? ইচ্ছা হলে খাব, ইচ্ছা হলে খাব না। নিয়ম করে কেন এক মাস রোজা রাখতে হবে? কেন নিয়মিত পাঁচবেলা নামাজ পড়তে হবে? নিজের উপার্জনের একটা অংশ কেন মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিতে হবে? এ ধরনের প্রশ্ন মনে জাগতেই পারে। কিন্তু গভীরভাবে ভেবে দেখলে বোঝা যাবে, ধর্ম নিয়ে যেসব আপত্তি তোলা হয় তার কোনোটিই বিজ্ঞান কিংবা যুক্তির আলোকে সঠিক নয়। উদহারণস্বরূপ রোজার কথাই বলা যাক। আজকের বিশ্বে নিত্যনতুন যত রোগ আবিষ্কার হচ্ছে তার বেশিরভাগই অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাসের কারণে হচ্ছে। একটা সময় ছিল খাবারের অভাবে মানুষ মারা যেত। আর এখন বেশি খেয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। ঢাকাসহ দেশের অলিগলিতে যত ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে, সবই রোগীতে ঠাসা। আবার রাজধানীর অলিগলি থেকে শুরু করে অভিজাত এলাকা সবখানেই গজিয়ে উঠেছে মুখরোচক বাহারি খাবারের দোকান-রেস্টুরেন্ট। সংক্ষেপে বলতে চাচ্ছি, অতিরিক্ত খাবারই আজকের মানব সভ্যতার জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইসলামসহ সব ধর্মই রোজা বা উপবাসের বিধান দিয়েছে। নির্ধারিত সময় খাওয়া বন্ধ রাখ। বন্ধ রাখ অন্যসব ভোগ-বিলাসও। অচিরেই চিকিৎসকরা ঘোষণা করে দেবেন, দিনের বা মাসের নির্দিষ্ট সময় মানুষকে ডিভাইস থেকে দূরে থাকতে হবে। অবশ্য ইতোমধ্যেই অনেক আধ্যাত্মিক প্রতিষ্ঠান ডিভাইস থেকে দূরের থাকার বিষয়টি চর্চা শুরু করে দিয়েছে। প্রসঙ্গত একটি কথা বলে রাখি, মানুষের কল্যাণে কোনো অভ্যাস চর্চা প্রথম শুরু হয় সুফিদের হাত ধরে। তার অনেক পরে চিকিৎসা বিজ্ঞান স্বীকৃতি দেয়। সম্প্রতি ডাক্তাররা বলছেন, ভুল লাইফস্টাইল ফলো করার কারণে যেসব অসুখ হয়, সেগুলো এতকাল ওষুধ দিয়ে সারানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এটা সঠিক পদ্ধতি ছিল না। লাইফস্টাইলজনিত রোগ সারানোর জন্য সঠিক লাইফস্টাইল চর্চা করতেই হবে। এ ছাড়া বিকল্প কোনো সমাধান নেই। অথচ আমাদের সুফিয়ানে কেরাম এ কথা হাজার বছর আগ থেকেই বলে আসছেন। আলোচনা শুরু করেছিলাম, খোদার বিধান সহজ এ বিষয় নিয়ে। খোদার বিধানে কোনো জটিলতা নেই। কেউ যদি কোরআনের দেওয়া লাইফস্টাইল মেনে চলে সে বড় কোনো অসুস্থতায় পড়বে না। অথচ চিকিৎসা বিজ্ঞানের সহায়তায় কেউ যদি সু¯স্থ থাকতে চায় তাহলে তাকে বিপুল অর্থ খরচের পাশাপাশি পোহাতে হবে অনেক ভোগান্তিও। এক ভিডিওতে দেখেছিলাম, কৃত্রিম হার্ট সংযোজন করে এক ব্যক্তিকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। ঘটনা সত্য মিথ্যা জানি না। হার্টের সাইজ খুবই বড়। লোকটি কেবল শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে। আর কিছু না। সারাক্ষণ শুয়ে থাকে। এ জন্য তাকে গুনতে হয় অনেক টাকা। এখান থেকেও আমরা বুঝতে পারি আল্লাহর দেওয়া পদ্ধতিই মানুষের জন্য সহজ ও ঝামেলাহীন। একইভাবে মানব রচিত মতবাদ দূরে ফেলে আল্লাহর কোরআনের মতে যদি আমরা ফিরে আসতে পারি তাহলে আমাদের সমাজ থেকে সব অন্যায়-অশান্তি-হানাহানি বন্ধ হয়ে যাবে। ফিরে আসবে খোলাফায়ে রাশেদিনের সেই আলোকিত বসুন্ধরা। আল্লাহ আমাদের বোঝার তৌফিক দিন। আমিন।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি

পীর সাহেব, আউলিয়ানগর www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর