মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

বেহাল শেয়ারবাজারে নিঃস্ব হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা

আলী রিয়াজ

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে লাখো বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছেন। শেয়ারের দাম কমতে কমতে একেবারে তলানিতে নেমেছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হারিয়ে দিশাহারা পরিস্থিতির মুখে পড়েছে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও একইভাবে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের ইক্যুইটি এখন নেতিবাচক। দিন যত যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের অবস্থা তত বেশি নাজুক হচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন, কারসাজি চক্রের দৌরাত্ম্য, নানা ধরনের গুজব শেয়ারবাজারে চরম আস্থাহীনতার সৃষ্টি করেছে। লোকসান কমাতে দিশা খুঁজে পাচ্ছে না সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হচ্ছে। সমাজমাধ্যমে শেয়ারবাজার নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে নানা গুজব। বাজারে সাপোর্ট দেওয়ার দায়িত্বে থাকা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) টাকার অভাবে পড়েছে। ব্যাংক, মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো শেয়ার কেনার বদলে বিক্রির চাপ বাড়াচ্ছে। আবার কিছু খাতের প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। সবকিছু মিলিয়েই শেয়ারবাজারে টানা দরপতন চলছে। বড় রকমের আস্থার সংকট চলছে শেয়ারবাজারে। বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য যে অবকাঠামো থাকা উচিত তা গত কয়েক বছরে নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে ধরে রাখা যাচ্ছে না বাজারের নিয়ন্ত্রণ। জানতে চাইলে অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, দীর্ঘ দরপতনের মুখে পড়েছে শেয়ারবাজার। ১০-২০টি কোম্পানি ঘুরে সিন্ডিকেট ট্রেড হচ্ছে। বাজারে যেসব অনিয়ম বা সিরিয়াল ট্রেড করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। বিভিন্ন গুজব ছড়াচ্ছে একটি পক্ষ। তাদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নিতে হবে। সিন্ডিকেটের সুবিধা করে দিয়েছে বাজার কর্তৃপক্ষ। কয়েকটি জাঙ্ক শেয়ার নিয়ে তারা মুনাফা করছে। বাজার নিয়ে ভালো কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। লিজিং কোম্পানির শেয়ারে মানুষ বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে না। মিউচুয়াল ফান্ডের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগে যদি বিশেষ সুবিধা থাকত তবে হয়তো কিছুটা ভালো হতো বাজারের জন্য। কিন্তু তা কখনো করা হয়নি। আইসিবি বাজারে সাপোর্ট দেওয়ার কথা। তাদের হাতে কোনো টাকা নেই। অর্থাৎ এটা এখন অকার্যকর একটি সংস্থায় পরিণত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ব্যাংক সুদের হার বেড়েছে অনেক। বড় বড় ইনভেস্টর, মার্চেন্ট ব্যাংকার, অ্যাসেট ম্যানেজার তারা তাদের টাকা বন্ড ও এফডিআরে খাটাচ্ছেন। ফলে শেয়ারবাজার দাঁড়াতে পারছে না। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, শেয়ারবাজার অস্থিতিশীলতা দীর্ঘদিনের। দেশের আর্থিক খাতে যে সংকট চলছে তার সার্বিক প্রভাব শেয়ারবাজারে পড়েছে। সবাই এক ধরনের আতঙ্ক থেকে শেয়ার বিক্রি করছে বা করতে চাইছে। এতে বাজার ইক্যুইটি কমছে। আস্থার সংকট বড় কারণ। এ ছাড়া বিভিন্ন রকম গুজবে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাব শেয়ারবাজারে পড়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।

সর্বশেষ খবর