বুধবার, ২০ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

হে আল্লাহ রমজানের সম্মানে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা দান করুন

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

হে আল্লাহ রমজানের সম্মানে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা দান করুন

বর্তমানে পৃথিবীর চরম হতভাগা জনগোষ্ঠী ফিলিস্তিনের মুসলমান ভাইয়েরা। মাতৃভূমির স্বাধীনতা আর পবিত্র মসজিদ বাইতুল মুকাদ্দাসে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন তারা। আমাদের তরুণরা যখন বিসিএসের স্বপ্নে বিভোর, যখন তারা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ইউরোপ-আমেরিকায় বসতি গড়তে মরিয়া হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন; ঠিক তখনই ফিলিস্তিনের তরুণরা দেশের জন্য, ধর্মের জন্য বোমার আঘাতে পা হারাচ্ছেন, হাত হারাচ্ছেন, কেউবা জীবনই বিলিয়ে দিচ্ছেন। আমার আপনার শিশু যখন ঈদের শপিং করার জন্য বায়না ধরে আমাদের মধুর বিরক্তের কারণ হচ্ছে, ফিলিস্তিনের ফুটফুটে শিশুরা তখন বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে বিকট চিৎকারে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে তুলছে। আমাদের আনন্দ ঈদে সন্তানকে দামি পোশাক কিনে দেওয়ার মধ্যে, আর ফিলিস্তিনের বাবা-মায়ের আনন্দ সন্তানকে জীবিত দেখতে পেয়ে। যদিও আমাদের জীবনে ফিলিস্তিনিদের মতো ধ্বংসযজ্ঞ নেমে আসেনি, তাই বলে আমরা ফিলিস্তিনের ভাইদের কথা বেমালুম ভুলে আছি তা কিন্তু নয়। বাংলাদেশের প্রতিটি মুসলমানের দিলের দরিয়া থেকে ফিলিস্তিনি ভাইদের জন্য দোয়ার ঝরনা ঝরে প্রতিনিয়তই। ইফতার-সাহরি-তারাবি-তাহাজ্জুদে বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মুসলমানদের কথা বলে অঝোরে কেঁদে ওঠে বাংলাদেশের মসজিদগুলো। কখনো কখনো প্রতিবাদী মিছিল নিয়েও বেরিয়ে পড়েন বাংলাদেশের মুসলমানরা। বাংলাদেশের মানুষের বদনামের শেষ নেই। সবচেয়ে বড় বদনাম আমরা হুজুগে বাঙাল। অন্যভাবে বলা যায় পাগলাটে স্বভাবের। এই পাগলামিটা সবসময় খারাপ নয়। কখনো কখনো পাগলামিই পছন্দ করেন আল্লাহতায়ালা। ধর্মের ব্যাপারে আমরা যতটা আবেগপ্রবণ, যতটা হুজুগে; সেটা সবসময় ভালো না হলেও কখনো কখনো প্রশংসার দাবি রাখে। বিশেষ করে পুঁজিবাদের এই ঘনঘোর সময়ে সুদূর ফিলিস্তিনের ভাইদের জন্য শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই তাদের জন্য মোনাজাতে কাঁদা, রাস্তায় নামা, আড্ডায় তাদের কথা ভেবে আফসোস করা অনেক বড় নেক কাজ। অন্তত রসুলের (সা.) সে ঘোষণা এখনো আমরা জারি রেখেছি- ‘পৃথিবীর কোনো প্রান্তে মুসলমানরা আঘাতপ্রাপ্ত হলে অন্যপ্রান্তের মুসলমানরাও তাদের জন্য কাঁদবেন।’ তবে মোনাজাতে কেঁদে কিংবা এক আধাঘণ্টা আলোচনা করেই ফিলিস্তিনি ভাইদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব শেষ- এমনটা মনে করে আত্মতৃপ্তিতে ভোগার সুযোগ নেই। সবসময় নিজের ভিতর একটা অপরাধবোধ কাজ না করলে বুঝতে হবে আমার ইমান এখনো পাকা হয়নি। এক মুরব্বি সেদিন আমাকে বললেন, ‘হুজুর! ভিডিওতে দেখলাম দুই শিশু বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত। বাবা-মা কোথায় কিছুই জানে না। তীব্র যন্ত্রণায় চিৎকার করে কাঁদছে তারা। ওই ভিডিও দেখার পর থেকে আমি আর ঘুমাতে পারি না, ঠিকমতো খেতে পারি না। ২৪ ঘণ্টা মনে হয় ওই শিশুগুলো আমার মস্তিষ্কের ভিতর চিৎকার করে কেঁদে যাচ্ছে।’ আমি বললাম, ‘বাবা! এ মুহূর্তে আপনার আমার কিছুই করার নেই। এই যে আপনার মনে তাদের জন্য একটা দরদি ফিকির জাগাতে পেরেছেন, আশা করি আল্লাহ আপনাকে এর উত্তম বিনিময় দেবেন। চারপাশে তো কত মানুষ আছেন, ফিলিস্তিনের শিশুদের রোনাজারি-আহাজারির ভিডিও তো তারাও দেখেছেন; আবার একটু পরেই ভুলে যাচ্ছেন; আপনার মতো অনুভূতি অনেকের জাগে না। আল্লাহর কাছে শোকরিয়া করুন! মুসলমানদের জন্য আপনার দিলে দয়ার কান্না তিনি জারি করে দিয়েছেন।’ প্রিয় পাঠক! শুরু থেকে বাংলাদেশের মুসলমান ফিলিস্তিনি ভাইদের পক্ষে ছিল, এখনো আছে। তবে আমাদের যেভাবে ভূমিকা রাখতে হবে আমরা সেভাবে রাখতে পারছি না। বিশেষ করে মুসলিম বিশে^র নেতাদের এক জায়গায় বসে ফিলিস্তিনের স্বার্থে কথা বলার জন্য আমরা একটা অনলাইন প্ল্যাটফরম গড়ে তুলতে পারি। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে এটা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। ওই যে বলেছিলাম, আমরা হুজুগে বাঙাল। আমরা চাইলে বিশ্বও জয় করতে পারি। তবে সেটা চাওয়ার মতো চাইতে হবে। বিশ্বের আনাচকানাচে যেখানেই মুসলমান আছেন, আমরা সেখানেই ফিলিস্তিনি ভাইদের অধিকারের কথা আলোচনা করতে পারি। বিশেষ করে আমাদের দেশের বড় বড় আলেম ও রাজনৈতিক নেতাদের জন্য এ কাজ অনেক সহজ। আলহামদুলিল্লাহ! অনেকে সেটা করছেনও। আশা করি, খুব দ্রুত ফিলিস্তিনের মুসলমানরা সুখেশান্তিতে রোজা ও ঈদ করতে পারবেন। আল্লাহ আমাদের ও ফিলিস্তিনি ভাইদের কবুল করুন। আমিন।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি, পীর সাহেব, আউলিয়ানগর

www.selimazadi.com

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর