বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

জীবনে সংযমের লাগাম পরাতে আসে রোজা

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

জীবনে সংযমের লাগাম পরাতে আসে রোজা

মাওলার কুদরতি কদমে অসংখ্যবার লুটিয়ে পড়ে কৃতজ্ঞতা জানা”িছ এজন্য যে, তিনি আমাদের প্রেমের মাস রমজানে এনে দাঁড় করিয়েছেন। রমজান এসেছে মৃত আত্মাকে জাগিয়ে দিতে। রমজান এসেছে রুহের ঘরে আলো জ্বালিয়ে দিতে। রমজান এসেছে প্রেমপ্রদীপের পুড়ে যাওয়া সলতায় তেল দিতে। যাদের আত্মার দরজা খোলা থাকে, যাদের ভাগ্যে হেদায়াত থাকে, যারা সঠিক পথের সন্ধান করেন- রমজান তাদের নিয়ে যায় আলোর ঠিকানায়। তারা পেয়ে যান দিদারে এলাহীর টিকিট। জান্নাতের সার্টিফিকেট। মাবুদ তাদের আত্মায় দান করেন রহমত। মাগফেরাত-ক্ষমা, নাজাত বা চির মুক্তিতে তারা হন মহিয়ান। রাসূল (সা.) বলেন, ঈমানী চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে যে ব্যক্তি সিয়াম আদায় করবে, তার আগের সব পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (বুখারি, মুসলিম) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, রমজানের প্রথম রাত এলে শয়তান ও অবাধ্য জিনদের শিকলবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর কোনো দরজা আর খোলা হয় না। জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। এরপর কোনো দরজা আর বন্ধ করা হয় না। আর একজন ঘোষক ঘোষণা করেন, হে কল্যাণ প্রার্থী, তুমি এগিয়ে এসো। আর হে অকল্যাণ প্রত্যাশী, তুমি নিবৃত্ত হও। এ মাসে আল্লাহ অনেককে মুক্তি দেবেন। প্রতিটি রাতে এভাবে ঘোষণা চলতে থাকে। রমজান মুমিনের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা। ১১ মাস দুনিয়ার কর্মব্যস্ততায় যাদের ঈমানের প্রদীপ নিষ্প্রভ হয়ে এসেছে। যাদের আত্মায় পাপাচারের কালো দাগ পড়েছে, কঠিন মরিচা ধরেছে যাদের কলবে- রমজান এলো এই মরিচা আর দাগ দূর করতে। খোদার রহমতের পানি দিয়ে ধুয়ে মুছে পরি”ছন্ন করতে, রুহের ঘরে জমে থাকা সব ধুলা-বালু আর আবর্জনাকে সাফ করতে। তাই রমজানের প্রথম থেকেই খোদার রহমতের তালাশে নিজেকে সর্বোতভাবে প্র¯‘ত করে নেয়া হবে মুমিনের একমাত্র কাজ। মাহে রমজানের এই খোদায়ী প্রশিক্ষণ কর্মশালার প্রধান বিষয়বস্তু হল আত্মসংযম। আমাদের সমাজে রোজাদারের অভাব নেই, কিন্তু সংযমী লোকের বড়ই অভাব। শুধু উপবাস বা পেটের সংযমে আমরা শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি সফল হলেও জিহ্বার সংযম, হাত-পায়ের সংযম, যৌনাঙ্গের সংযম, প্রবৃত্তির সংযম, আত্মা বা রুহের সংযম, অর্থনৈতিক সংযমে আমরা শতভাগই বিফল। আমাদের ধারণা সকাল-সন্ধ্যা না খেয়ে থাকার নামই সিয়াম। কিন্তু আমার জিহ্বাকে অশ্লীল ও অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা থেকে, আমার হাত এবং পাকে অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে, আমার জীবিকাকে অবৈধ উপার্জন থেকে হেফাজত করাই যে প্রকৃত সিয়াম তা আমরা কজনে উপলব্ধি করি! আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, নবীজী (সা.) ইরশাদ করেন, অনেক সিয়াম পালনকারী এমন রয়েছে যাদের ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত থাকা বৃথা যায়। (ক্ষুৎপিপাসার কষ্ট ছাড়া কিছুই পায় না তারা) তেমনি অনেক ইবাদতকারী এমন যাদের বিনিদ্র রাত কাটানো ছাড়া আর কিছুই অর্জন হয় না। (ইবনে হিব্বান/মুসনাদে আহমদ) নবীজী (সা.)-এর এই হাদিসটি আত্মসংযমের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করছে। তাই রহমতের এই মাসে আত্মসংযমের প্রতি বিশেষভাবে মনোনিবেশ করতে হবে আমাদের। তাহলেই আমরা হতে পারব প্রকৃত সিয়াম সাধক। আমরা পাব আল্লাহর নৈকট্য। রমজানের রহমতে বদলাবে আমাদের জীবন ও সমাজ। আল্লাহ আমাদের রমজানের প্রতিটি মুহূর্তের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে আত্মসংযমী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন!!!

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি, পীর সাহেব, আউলিয়ানগর, www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর