বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

রাতভর বিস্ফোরণের শব্দ

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপেছে টেকনাফের হ্নীলা ও খারাংখালী সীমান্ত। সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা যখন তারাবি নামাজ শেষে বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলেন, এ সময় বেশ কয়েকটি শক্তিশালী গ্রেনেড-বোমা ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তাদের। গতকাল ভোর ৫টা পর্যন্ত এ অবস্থা স্থায়ী ছিল। বিকট শব্দে সীমান্তে বসবাসকারীদের মাঝে দেখা দেয় গভীর আতঙ্ক।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানান, মংডু শহরের টাউনশিপের কোওয়ারবিল, নাকপুরা, বলিবাজার, পেরাংপুরু, সিকদারপাড়ায় থাকা সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) একাধিক সেক্টর ও সীমান্তচৌকি দখলের জন্য হামলা চালিয়েছে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। আরাকান আর্মিকে রুখতে তাদের অবস্থানের ওপর বিমান হামলা চালাচ্ছে সরকারি (জান্তা) বাহিনী। তাতে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। অন্ধকার রাতে মর্টার শেল বিস্ফোরণের আগুনের শিখা এপারের লোকজন দেখতে পায়। হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. আলম বলেন, রাত ১২টার পর থেকে খারাংখালী সীমান্তের পূর্বে মিয়ানমার অভ্যন্তরে কয়েকটি গ্রেনেড বিস্ফোরণ শুরু হয়, সাহরি খাওয়ার সময়ও কয়েকটি বিকট শব্দ আসে। বিকট শব্দে এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানান, রাত পৌনে ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত থেমে থেমে অন্তত ৫০-৬০টি শক্তিশালী বিস্ফোরণ শুনতে পেয়েছে এপারের লোকজন। এতে ঘরে ঘরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

নাইক্ষ্যংছড়িতে নীরবতা : বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্ত এলাকার ঘুমধুম থেকে দৌছড়ি ইউনিয়নের ৫১ নম্বর সীমান্ত পিলার পর্যন্ত গতকাল নীরব-নিস্তব্ধ ছিল। সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, সীমান্তের তুমব্রু-বাইশফাঁড়ি সীমান্তে নীরবতা বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষের মাঝে থাকা আতঙ্ক কিছুটা কেটেছে বলে সীমান্তে বসবাসরত অনেকেই জানায়।

এক সূত্রে জানা গেছে, রাখাইনের বুচিদং শহরের জান্তা বাহিনীর খেমার (৫৫২) ব্যাটালিয়ন দখলে নিতে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি (এএ) চার দিন ধরে চতুর্মুখী হামলা চালায়। এর আগে তারা (এএ) জান্তা সরকারের আরও তিনটি ব্যাটালিয়ন দখলে নেয়। সূত্র আরও জানান, বর্তমানে বলিবাজার, রাশিদং, বুচিদং, মংডু শহরের চারপাশে জান্তার সঙ্গে তাদের (এএ) প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে।

এখন স্থল অংশ তাদের আর জান্তা সরকার আকাশ ও নৌপথ দখলে রেখেছে।

এদিকে সীমান্তের জামছড়ি ও সাপমারাঝিরির ওপারে কয়েক দিন থেকে লাশের উৎকট গন্ধ ভেসে আসছে। মাঝেমধ্যে গ্রামের ভিতরেও এ গন্ধ ভেসে আসে বাতাসে।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, সীমান্ত এলাকা বর্তমানে ভালো আছে। মিয়ানমার থেকে গোলাবারুদ ফোটাফুটির শব্দ আসছে না।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক মুজাহিদ উদ্দিন পালিয়ে আসা জান্তা বাহিনীর ১৭৯ সদস্যের বিষয়ে বলেন, তাদের বায়োডাটাসহ সবকিছু যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে অল্প দিনের মধ্যে হয়তো তাদের বিষয়ে নির্দেশনা আসবে। তখন তাদের ফেরত দেওয়ার কাজ শুরু হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর