শিরোনাম
শুক্রবার, ২২ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

লাইসেন্স দিতে পারছে না বিআরটিএ

ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই লাখো চালক, বিপদে বিদেশগামীরা

শামীম আহমেদ

ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়গুলোতে জমা হচ্ছে আবেদনের স্তূপ। তবে স্মার্ট কার্ড সংকটে লাইসেন্স দিতে পারছে না সংস্থাটি। এতে চরম বিপদে পড়েছেন ড্রাইভিং ভিসায় বিদেশ গমনেচ্ছুরা। অনেকের ভিসা বাতিল হয়ে গেছে। অনেকের ভিসা বাতিলের পথে আছে। অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়ার আগে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। ফলে সেখানে গিয়ে পার্টটাইম কাজ পেতে বেগ পেতে হচ্ছে। এ ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া সড়কে নেমে পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে অসংখ্য মানুষকে।

বছরের পর বছর ঘুরলেও ড্রাইভিং লাইসেন্স হাতে না পেয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ ঢাকার বনানীতে বিআরটিএ’র প্রধান কার্যালয়ে ভিড় জমাচ্ছেন। তবে মিলছে না সমাধান। শুধু ‘শিগগিরই হয়ে যাবে’ এমন আশাবাদ নিয়ে ফিরতে হচ্ছে তাদের।

ড্রাইভিং পেশায় ইতালি যাবেন ফরিদপুরের মো. হেলাল হোসেন। ভিসাও পেয়ে গেছেন। তবে আবেদনের চার বছর পার হলেও পাননি তার পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স। এদিকে ভিসার মেয়াদও শেষের পথে। উপায়ন্তর না পেয়ে গতকাল ঢাকার বনানীতে বিআরটিএ’র প্রধান কার্যালয়ে আসেন। সেখান থেকে তাকে বলা হয়, স্মার্ট কার্ড সংকট আছে। লাইসেন্স জরুরি হলে ভিসা ও বিমানের টিকিট বুকিংয়ের ফটোকপিসহ বিআরটিএ চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করতে হবে। হেলাল হোসেন বলেন, ছয় মাস আগে একবার এসেছিলাম। তখন বলেছিল দুই মাসের মধ্যে পাব। এখন বলছে চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করতে। এদিকে ভিসার মেয়াদ শেষের পথে। মধ্যপ্রাচ্যের ভিসা হলে এতদিনে মেয়াদ শেষ হয়ে যেত। ইতালির ভিসার মেয়াদ এক বছর, তাই কিছুদিন সময় আছে। তিনি বলেন, লাইসেন্সের আবেদন করেছিলাম ২০২০ সালে। লাইসেন্স ইস্যু দেখাচ্ছে ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর। মেয়াদ শেষ হবে ২০২৭ সালের ১৯ অক্টোবর। পাঁচ বছর মেয়াদি লাইসেন্স হাতে পাওয়ার আগেই এক বছর পাঁচ মাস পার হয়ে গেছে।

এদিকে ড্রাইভিং লাইসেন্স না পাওয়ায় সৌদি আরবে যাওয়ার স্বপ্ন ভঙ্গের পথে নোয়াখালীর সোহাগ হোসেনের। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামী রবিবারের (২৪ মার্চ) মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স হাতে না পেলে ভিসা বাতিল হয়ে যাবে। গত নভেম্বরে ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন করেছিলাম। বার বার বিআরটিএ অফিসে যোগাযোগ করেও লাভ না হওয়ায় গত ৩ মার্চ ভিসা, পাসপোর্টসহ অন্যান্য তথ্য দিয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেছি। দুই সপ্তাহ পার হলেও এখনো লাইসেন্স হাতে পাইনি। এদিকে ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের জন্য গত বছরের ২০ আগস্ট ছবি তোলা ও ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়াসহ সব কাজ সম্পন্ন করেন গাইবান্ধার গোলাম রশিদ (ছদ্মনাম)। লাইসেন্সের রেফারেন্স নম্বর উঝ৮৫৮৮৮ঘচ। লাইসেন্স পাওয়ার কথা গত ২৪ ডিসেম্বর। প্রায় তিন মাস অতিবাহিত হলেও লাইসেন্স পাননি। গতকাল বনানী বিআরটিএ প্রধান কার্যালয়ে গেলে তাকে জানানো হয় লাইসেন্স এখনো প্রিন্ট হয়নি। ঈদের পর পেতে পারেন। তবে এ সময়ে গাড়ি চালানোর জন্য তাকে কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া গিয়ে স্লিপের মেয়াদ বাড়িয়ে আনতে বলা হয়। গোলাম রশিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইকুরিয়া যেতে হলে অফিস থেকে একদিন ছুটি নিতে হবে, যেটা সম্ভব নয়। বিআরটিএ থেকে কাগজের অস্থায়ী অনুমোদনপত্রে কিউআর কোডের মাধ্যমে একটি ই-লাইসেন্স দেওয়া হলেও তা দেখালে অনেক সময় ট্রাফিক পুলিশ বুঝতে চায় না। এরই মধ্যে কয়েকবার হেনস্তা হতে হয়েছে। এ ছাড়া বৃষ্টিতে কাগজের স্লিপ নিয়ে ঘোরা যায় না। এ ছাড়া সেই অনুমোদনপত্রের মেয়াদও শেষ। এ মেয়াদ বাড়াতে ইকুরিয়া যেতে হবে। আমাকে কেন এ ভোগান্তি সইতে হবে?

এ সংকটের ব্যাপারে বিআরটিএর পরিচালক (অপারেশন) লোকমান হোসেন মোল্লার কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কার্ড সংকটের কারণে লাইসেন্স দিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আমার নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্সও দেড় বছর ধরে আটকা। আমি সিরিয়াল ভঙ্গ করে নেইনি। তবে এয়ারপোর্টে ৩ লাখ কার্ড চলে এসেছে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের পর সামনের সপ্তাহে কার্ডগুলো ঢুকলে প্রিন্ট শুরু হবে। ঈদের পরপরই অধিকাংশ আবেদনকারী কার্ড পেয়ে যাবেন। কী পরিমাণ আবেদন জমা আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা কিছুটা বেশি আছে। চার লাখের মতো। তবে দেশের মধ্যে চালানোর জন্য আমরা তো ই-লাইসেন্স দিচ্ছি। এটা দেখলে পুলিশের ঝামেলা করার কথা নয়।

বিআরটিএ সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ডুয়েল ইন্টারফেস পলিকার্বনেট স্মার্ট কার্ড তৈরির জন্য মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স (এমএসপি) প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে ২০২০ সালের ২৯ জুলাই চুক্তি করে বিআরটিএ। ওই দিন থেকে ২০২৫ সালের ২৮ জুলাই পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ৪০ লাখ কার্ড প্রিন্ট করে সরবরাহ করার কথা রয়েছে। চুক্তির দিন থেকে পরবর্তী তিন বছরে সরবরাহ করার কথা ২৪ লাখ কার্ড। কিন্তু সাড়ে তিন বছরে কার্ড সরবরাহ করেছে ১৬ লাখের মতো। ফলে ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৮ লাখ কার্ড। গত বছর ৫ লাখ কার্ড এনে কিছুটা চাপ সামাল দেওয়া হয়। সেই স্টকও শেষ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে বিআরটিএ চেয়ারম্যানের সুপারিশে জরুরি প্রয়োজনে কাউকে কাউকে কার্ড দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে প্রতিদিন নতুন আবেদন জমা পড়ছে। গত এক বছরে শুধু চট্টগ্রাম মেট্রো কার্যালয়ে ১৯ হাজার ৫৪টি ও জেলা কার্যালয়ে ৯ হাজার ৪৩৬টি আবেদন জমা পড়ে।

 

 

সর্বশেষ খবর