সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর কাছাকাছি অবস্থান নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেভাল ফোর্সের একটি যুদ্ধজাহাজ। জিম্মি জাহাজটি ঘিরে ইইউ নেভির একটি হেলিকপ্টারকেও চক্কর দিকে দেখা গেছে। তবে তারা কোনো অভিযান পরিচালনা করেনি। এদিকে জাহাজটির মালিকপক্ষ কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেছেন, ‘কোনো ধরনের অভিযান আমরা সমর্থন করছি না। নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জিম্মিদশার অবসান চাই। সে লক্ষ্যেই কাজ করছি। দস্যুরা আর ফোন করেনি। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে নাবিকদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে।’

জানা গেছে, সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যু দমনে ‘অপারেশন আটলান্টা’ নামে কার্যক্রম পরিচালনা করছে ইইউর নেভাল ফোর্সের যুদ্ধজাহাজটি। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় গভীর রাতে ‘অপারেশন আটলান্টা’ তাদের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ঘিরে তাদের কার্যক্রমের ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, ইইউ নেভাল ফোর্সের অপারেশন আটলান্টার মোতায়েন করা যুদ্ধজাহাজটি থেকে বাংলাদেশের জিম্মি জাহাজটি দেখা যাচ্ছে। নেভাল ফোর্সের দুই সদস্য জাহাজটির দিকে তাকিয়ে আছেন। ছবি দেখে বোঝা যাচ্ছে যুদ্ধজাহাজটি এমভি আবদুল্লাহর কাছাকাছি রয়েছে। অন্য দুটি ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায় ইইউ নেভাল ফোর্সের একটি হেলিকপ্টার জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশি জাহাজটি তিন দিন ধরে সোমালিয়ার গোদবজিরান উপকূল থেকে মাত্র দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে আছে। ইইউ নেভাল ফোর্সকে অভিযান থেকে বিরত রাখতে জিম্মি নাবিকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে। ইইউ নেভাল ফোর্সের চাপে নাবিকদের এখন ২৪ ঘণ্টাই জাহাজের ব্রিজে থাকতে বাধ্য করছে জলদস্যুরা। মাঝেমধ্যে ভিএইচএফ ব্যবহার করে নৌবাহিনীকে অনুরোধও জানাতে হচ্ছে যেন কাছে না আসে। তবে জাহাজের মালিকপক্ষ ও সরকার নাবিকদের নিরাপত্তাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। আগেও নেভাল ফোর্স জিম্মি জাহাজটি উদ্ধারে অভিযানের কথা জানালে তাতে সম্মতি দেয়নি সরকার ও মালিকপক্ষ। গতকাল জিম্মি জাহাজের নাবিক ও ক্রুদের উদ্ধারে আলোচনা চলমান জানিয়ে নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশের অনুমতি ছাড়া সোমালিয়া জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজে কারও অভিযান চালানোর সুযোগ নেই। এমভি আবদুল্লাহর কাছাকাছি এলাকায় ইইউ নেভির যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি জিম্মিদের মুক্তির আলোচনায় প্রভাব ফেলবে না বলে জানান তিনি। প্রসঙ্গত, ১২ মার্চ মোজাম্বিকের মাপুতো থেকে কয়লা নিয়ে আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে যাওয়ার পথে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। জাহাজে ২৩ নাবিক রয়েছেন, যাদের সবাই বাংলাদেশি। জাহাজটি চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং করপোরেশনের। ২০ মার্চ দুপুরে জলদস্যুদের প্রথম ফোন পায় মালিকপক্ষ। এর পর থেকে যোগাযোগ বন্ধ আছে।