সোমবার, ২৫ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

জনসংখ্যা ১৭ কোটি ১৫ লাখ

নিজস্ব প্রতিবেদক

জনসংখ্যা ১৭ কোটি ১৫ লাখ

জনশুমারি ও গৃহগণনার ২০২২-এর ভিত্তিতে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি প্রাক্কলিত জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার। বাংলাদেশে সর্বশেষ চূড়ান্ত জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। সেই হিসাবে ১৭ লাখ ৬১ হাজার ৮৯ জন বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর অডিটোরিয়ামে ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩’ ফলাফল             প্রকাশ অনুষ্ঠানে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। এদিকে ২০২৩ সালে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭৩ দশমিক ৩ বছরে, যা ২০২২ সালে ছিল ৭৩ দশমিক ৪ বছর। দেশে এক বছরে সিজারিয়ান ডেলিভারির হার ৯ শতাংশের বেশি বেড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। প্রতিবেদনে বলা হয়, জনশুমারি ও গৃহগণনার ২০২২-এর ভিত্তিতে ১ জানুয়ারি ২০২৪ সালে প্রাক্কলিত জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার। যেখানে নারী ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৯০ হাজার এবং পুরুষ ৮ কোটি ৪২ লাখ জন। সেই হিসাবে দেশে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি। আদমশুমারি ও গৃহগণনা ২০১১ সালের ভিত্তিতে ১ জানুয়ারি ২০২৪ সালে প্রাক্কলিত জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৩.৫২ মিলিয়ন। যেখানে নারী ৮৮.৩৭ মিলিয়ন এবং পুরুষ ৮৫.১৫ মিলিয়ন। পাশাপাশি জনশুমারি ও গৃহগণনার ২০২২-এর ভিত্তিতে ১ জানুয়ারি ২০২৪ সালে প্রাক্কলিত জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭১.৫৯ মিলিয়ন। যেখানে নারী ৮৭.৩৯ মিলিয়ন এবং পুরুষ ৮৪.২০ মিলিয়ন। অনুষ্ঠানে পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপত্বিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু।

বয়সভিত্তিক জনসংখ্যার বিন্যাস মধ্যে : ০-৪ বছর বয়সী ১০.২২ শতাংশ, ৫-১৪ বছর বয়সী ১৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ, ১৫-২৪ বছর বয়সী ১৮.৬৭ শতাংশ, ২৫-৩৯ বছর বয়সী ২২ দশমিক ২৮ শতাংশ, ৪০-৪৯ বছর বয়সী ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ, ৫০-৫৯ বছর বয়সী ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ, ৬০-৬৪ বছর বয়সী ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং ৬৫+ বছর বয়সী ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ।

এদিকে গড় আয়ু কমলেও জরিপের কর্মকর্তারা বলছেন ২০২৩ সালে জন্মের সময় প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল পরিসংখ্যানিকভাবে অপরিবর্তিত রয়েছে। ২০২২ সালে গড় আয়ু ছিল ৭২.৪। যা ২০২৩ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৭২.৩ বছর। জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার ১.৩৩% যা ২০২২ সালে ছিল ১.৪০%। লিঙ্গ অনুপাত কিছুটা নিম্নমুখী, যা ২০২৩ সালে দাঁড়িয়েছে ৯৬.৩% এবং নির্ভরশীলতার অনুপাত ৫৩.৭%। প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ১ হাজার ১৭১ জন। প্রতি হাজার জনসংখ্যায় স্থূল জন্মহার ১৯.৪, যা ২০২২ সালে ছিল ১৯.৮।

দেশে এক বছরে সিজারিয়ান ডেলিভারির হার ৯ শতাংশের বেশি বেড়েছে। স্বাভাবিক পদ্ধতিতে সন্তান প্রসবের হার ২০২২ সালের (৫৮.৬%) তুলনায় হ্রাস পেয়ে ২০২৩ সালে হয়েছে ৪৯.৩ শতাংশ এবং অস্ত্রোপচার পদ্ধতিতে প্রসবের হার ২০২২ সালের (৪১.৪%) তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩ সালে হয়েছে ৫০.৭ শতাংশ। প্রতি হাজার জনসংখ্যায় স্থূল মৃত্যুহার ৬.১, যা ২০২২ সালে ছিল ৫.৮। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ৩৩ এবং প্রতি লাখ জীবিত জন্ম শিশুর বিপরীতে মাতৃমৃত্যুর অনুপাত ১৩৬ জন, যা ২০২২ সালে ছিল ১৫৩ জন। মৃত্যুর শীর্ষ ১০ কারণের প্রথম কারণ-হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুর হার ১.০২% এবং দ্বিতীয় কারণ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মৃত্যুর হার ০.৬৪%। পুরুষদের প্রথম বিবাহের গড় বয়স ২৪.২ বছর এবং নারীদের ১৮.৪ বছর। প্রতি হাজার জনসংখ্যায় অভ্যন্তরীণ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে পল্লীতে আগমনের হার ২০.৪ এবং শহরে আগমনের হার ৪৩.৪। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অভিগমন প্রতি হাজারে ৬.৬১ জন থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৮.৭৮ জন।

আন্তর্জাতিক আগমন বহিরাগমন প্রতি হাজারে ২.৯৭ থেকে হ্রাস পেয়ে হয়েছে ২.৩৭ জন। ২০২৩ সালে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০২২ সালের (৬৩.৩%) তুলনায় কিছুটা হ্রাস পেয়ে ২০২৩ সালে হয়েছে ৬২.১ শতাংশ, জন্মনিয়ন্ত্রণের অপূর্ণ চাহিদা ২০২২ সালের (১৬.৬২%) তুলনায় হ্রাস পেয়ে ২০২৩ সালে ১৫.৫৭ শতাংশ হয়েছে। খানার আকার ২০২২ সালের ন্যায় ২০২৩ সালেও অপরিবর্তিত রয়েছে, যা ৪.২ জন। তবে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে নারী খানাপ্রধানের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালে এটি ছিল ১৭.৪%, যা ২০২৩ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৮.৯%। অপরদিকে পুরুষ খানাপ্রধান ২০২২ সালে ছিল ৮২.৬%, ২০২৩-এ হার হ্রাস পেয়ে হয়েছে ৮১.১%।

২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৭.৫৩ শতাংশে। সাত বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী জনসংখ্যার সাক্ষরতার হার ২০২৩ সালে হয়েছে ৭৭.৯ শতাংশ এবং ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের ক্ষেত্রে এ হার ২০২২ সালের (৭৪.৪) তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৫.৬ শতাংশ।

এ ছাড়া শিক্ষা, কর্মে কিংবা প্রশিক্ষণে নেই এমন তরুণের সংখ্যা ২০২২ সালের (৪০.৬৭%) তুলনায় হ্রাস পেয়ে ২০২৩ সালে ৩৯.৮৮ শতাংশ হয়েছে। ৫+ বয়সী মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী জনসংখ্যার হার ২০২৩ সালে হয়েছে ৫৯.৯ শতাংশ। তবে ১৫+ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে এ হার ২০২২ সালের (৭৩.৮) তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৪.২ শতাংশ। ২০২৩ সালে ১৫+ বছর বয়সীদের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হার ৫০.১%। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, পূর্বের চেয়ে মাতৃমৃত্যু হার লক্ষণীয়ভাবে কমে আসা এবং দেশের সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার যে জনকল্যাণে কাজ করছে তা দুটি সূচক দেখে সহজেই অনুমান করা যায়। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন বলেন, যে কোনো পরিস্থিতিতে যথাসময়ে পরিসংখ্যান প্রস্তুত, প্রকাশ ও সংরক্ষণে বিভাগ এবং এর আওতাধীন সংস্থা বিবিএস-এর কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে থাকেন। আজকের প্রতিবেদন প্রকাশনা তারই প্রমাণ। পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু বলেন, জন্মনিয়ন্ত্রণের অপূর্ণ চাহিদা ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে কিছুটা হ্রাস পেয়েছে, যা সরকারের সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থার প্রতিফলন।

সিজারিয়ান ডেলিভারির হার বেড়েছে : দেশে এক বছরে সিজারিয়ান ডেলিভারির হার ৯ শতাংশের বেশি বেড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে মোট প্রসবের ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ ছিল সিজারিয়ান ডেলিভারি। স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমের (এসভিআরএস) প্রকল্প পরিচালক আলমগীর হোসেন প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বলেন, ২০২৩ সালে সিজারিয়ান ডেলিভারির হার বেড়ে ৫০ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে। এটি উদ্বেগজনক এবং বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন। প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩ সালে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যু হারও বেড়েছে। ২০২২ সালে যেখানে প্রতি হাজারে ৩১ জন শিশু মারা গিয়েছিল, ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ জনে। ২০২২ সালে এক মাসের কম বয়সী প্রতি হাজার শিশুর মধ্যে মারা যায় ১৬ জন, ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২০ জনে। ২০২২ সালে এক বছরের কম বয়সী প্রতি হাজার শিশুর মধ্যে মারা যায় ২৪ জন, ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ জনে।

এ ছাড়া, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭৩ দশমিক ৩ বছরে, যা ২০২২ সালে ছিল ৭৩ দশমিক ৪ বছর। আলমগীর হোসেন বলেন, এটি আয়ু হ্রাস নয়, কারণ সংখ্যাটি পরিসংখ্যানগতভাবে অতি নগণ্য। আমরা বলব এটি অপরিবর্তিত রয়েছে।

শহরের বস্তিতে বরিশালের মানুষ বেশি : মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ পরিবার বসবাস করে শহরাঞ্চলের বস্তিতে। এদের মধ্যে বরিশাল এলাকার মানুষ সবচেয়ে বেশি। জরিপ অনুযায়ী বস্তির প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ পরিবার বরিশালের। এর পরই আছে ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জের মানুষ। ৪ ও ৫ নম্বরে আছে কুমিল্লা ও নেত্রকোনার মানুষ। বিবিএসের জরিপের তথ্যমতে, বস্তিবাসীর মধ্যে ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ পরিবার এসেছে মংমনসিংহ জেলা থেকে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে এসেছে ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ পরিবার। এরপর কুমিল্লা থেকে এসেছে ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ পরিবার। পঞ্চম অবস্থানে থাকা নেত্রকোনা জেলা থেকে এসেছে ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ পরিবার।

সর্বশেষ খবর