সোমবার, ২৫ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

চার দাবিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

চার দাবিতে দেশজুড়ে কর্মবিরতি পালন করছেন ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় কর্মবিরতি পালন করেছে তারা। এ সময় তারা বলেন, বর্তমানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক ১৫ হাজার টাকা দিয়ে কোনোভাবেই চলা সম্ভব নয়। তাই ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা ৩০ হাজার টাকা করতে হবে। পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকদের বেতন ছয় মাসে দেওয়ার কথা থাকলেও ৯ মাস হয়ে গেছে, এখনো তাদের বেতন দেওয়া হয়নি। দ্রুত বেতন দিতে হবে। তাদের বেতন ২৫ হাজার টাকা। এ টাকা দিয়ে তাদের সংসার চালানো অসম্ভব। তাই তাদের বেতন ৫০ হাজার টাকা করতে হবে। তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে মেডিকেলে থাকা যত ইন্টার্ন চিকিৎসক রয়েছেন তারা সবাই আমাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছেন। আমাদের এ দাবির পক্ষে প্রত্যেকটা মেডিকেল কলেজ মানববন্ধনের আয়োজন করেছে। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের অবস্থান কর্মসূচি ও কর্মবিরতি চলমান রাখব। এ সময় তারা চারটি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো-পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকদের মাসিক ভাতা ৫০ হাজার এবং ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মাসিক ভাতা ৩০ হাজারে উন্নীতকরণ এবং নিয়মিতকরণ করতে হবে। এফসিপিএস, রেসিডেন্ট, নন রেসিডেন্ট, চিকিৎসকদের বকেয়া ভাতা পরিশোধ করতে হবে। বিএসএমএমইউর অধীনস্থ ১২টি প্রাইভেট ইনস্টিটিউটের রেসিডেন্ট, নন রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের ভাতা পুনরায় চালু করতে হবে। চিকিৎসক সুরক্ষা আইন ও চিকিৎসকদের নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করতে হবে। এ কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচিতে প্রায় শতাধিক পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসক ও ইন্টার্ন চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো আরও খবর- খুলনা : বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই দিনের কর্মবিরতি শুরু করেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হওয়া এ কর্মবিরতি চলবে ২৫ মার্চ রাত ৮টা পর্যন্ত। কর্মবিরতি চলাকালে গতকাল হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম থেকে বিরত ছিলেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। দাবি না মানলে পরবর্তীতে শক্ত কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। এদিকে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ইন্টার্ন চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসাসেবা এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ভর্তিকৃত রোগী ও তাদের স্বজনরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। কক্সবাজার : বেতন ভাতা ৩০ হাজার টাকা করার দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ (ইচিপ)। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ ২০২৩-২৪ সেশনের সভাপতি ড. বোরহান উদ্দিন, সম্পাদক ডা. সিদ্দিক মো. আবদুুল্লাহ ও দফতর সম্পাদক ডা. সৈয়দ আবু সায়েদ আকিব স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি ও শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা চার দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছেন। গতকাল দুপুরে দ্বিতীয় দিনেরমতো চমেক হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা যৌথভাবে কর্মসূচি পালন করেন। কর্মবিরতি আজ সোমবার দুপুর ২টা পর্যন্ত চলবে। 

বর্তমানে চমেক হাসপাতালে ইন্টার্নি চিকিৎসক আছেন ২৫০ জন এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসক আছেন প্রায় ৭০ জন। বর্তমানে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকের ভাতা ২৫ হাজার এবং ইন্টার্ন চিকিৎসকের ভাতা ১৫ হাজার টাকা। চমেক হাসপাতাল ইন্টার্ন চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. মুকেশ রঞ্জন দে বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছি। তবে কর্মসূচি আজ সোমবার দুপুর ২টা পর্যন্ত চলবে। আমাদের দাবির বিষয়ে আজ স্বাস্থ্যমন্ত্রী একটি সিদ্ধান্ত দেবেন। দাবি মানা হলে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হবে। অন্যথায় কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মতে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। মানববন্ধনে বিক্ষুব্ধ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বলেন, আমরা সপ্তাহে সাত দিন, মাসে ৩০ দিন, বছরে ৩৬৫ দিন ডিউটি করি। অন্যদের মতো আমাদের নেই কোনো নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা। অথচ এর বিনিময়ে আমাদের যে ভাতা দেওয়া হয়, সেটা অমানবিক। চমেক হাসপাতালে বেসরকারি হাসপাতাল, ল্যাব, ক্লিনিক, ফার্মেসি ও ডায়াগনস্টিকের দালালে ভরে গেছে। এসব দালালও ডাক্তারদের থেকে অনেক বেশি ইনকাম করে। ডাক্তারদের তুলনায় তারা অনেক সুখী জীবনযাপন করে। অথচ আমরা এত কষ্ট করে চিকিৎসা পেশায় নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে উজাড় করে দিলেও নামমাত্র ভাতা দেওয়া হয়। যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

সর্বশেষ খবর