বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

রোজাদারের পুরস্কার ও জান্নাত লাভ

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

রোজাদারের পুরস্কার ও জান্নাত লাভ

প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের মনের প্রবল প্রত্যাশা, যেন মৃত্যুর পর আল্লাহর অনাবিল শান্তির জায়গা জান্নাত লাভ হয়। এর জন্য রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। ‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনান নার’ হে আল্লাহ আমরা আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম হতে মুক্তি চাই। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে যথা (১) হজরত আবু ওমামা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে গিয়ে বললাম, ইয়া রসুলুল্লাহ, আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন যার দ্বারা আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। তিনি বললেন, তুমি রোজা রাখ। কেননা এর সমতুল্য কিছু নেই। আমি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি একই জবাব দিলেন, তুমি রোজা রাখ।’ (মুসনাদে আহমাদ : ২২১৪৯)

(২) রোজাদার বেহেশতে প্রবেশ করবে রাইয়ান নামক বিশেষ দরজা দিয়ে। হজরত সাহল ইবনে সা’দ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জান্নাতে একটি দরজা আছে যার নাম রাইয়ান। কিয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে কেবল রোজাদারগণ প্রবেশ করবেন। অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা করা হবে- কোথায় সেই সৌভাগ্যবান রোজাদারগণ? তখন তারা উঠে দাঁড়াবে। তারা ব্যতীত কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। অতঃপর রোজাদারগণ যখন প্রবেশ করবে, তখন তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফলে কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (সহিহ মুসলিম : ১১৫২, মুসনাদে আহমাদ : ২২৮১৮) (৩) একজন রোজাদারকে রোজা জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল ও দুর্গ হিসেবে রোজাদারের জন্য কাজ করবে। হাদিসে এসেছে, ‘হজরত জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রোজা হলো (জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ লাভের) ঢাল ও সুরক্ষিত দুর্গ।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৯২২৫) (৪) রোজা একজন রোজাদারের জন্য কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর. (রা.) বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘রোজা ও কোরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে রব, আমি তাকে খাদ্য ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘অতঃপর তাদের উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৬৬২৬)

(৫) রোজাদারের সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়। হাদিসে এসেছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা রাখে তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (সহিহ বুখারি : ২০১৪) (৬) রোজাদারের মুখের গন্ধ মিশকের চেয়েও সুগন্ধিযুক্ত। এ সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শপথ সেই সত্তার যার হাতে রয়েছে মুহাম্মদের প্রাণ, রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহতায়ালার কাছে মিশকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক সুগন্ধিময়।’ (সহিহ বুখারি : ১৯০৪)

(৭) রোজার প্রতিদান আল্লাহপাক নিজেই দেবেন এবং বিনা হিসাবে প্রত্যেক নেক আমলের নির্ধারিত সওয়াব ও প্রতিদান রয়েছে যার মাধ্যমে আল্লাহপাক আমলকারীকে পুরস্কৃত করবেন। কিন্তু রোজার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ রোজার বিষয়ে আছে আল্লাহর পক্ষ থেকে এক অনন্য ঘোষণা।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মানুষের প্রতিটি আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয়। একটি নেকির সওয়াব ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত হতে পারে। আল্লাহতায়ালা বলেন, কিন্তু রোজার বিষয়টা আলাদা। কেননা তা আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর বিনিময় প্রদান করব। বান্দা একমাত্র আমার জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ করেছে।’

(সহিহ মুসলিম : ১১৫১, মুসনাদে আহমাদ : ৯৭১৪)

(৮) আল্লাহতায়ালা রোজাদারদের কিয়ামতের দিন পানি পান করাবেন।

হজরত আবু মুসা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহতায়ালা নিজের ওপর অবধারিত করে দিয়েছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য গ্রীষ্মকালে (রোজা রাখার কারণে) পিপাসার্ত থেকেছে, তিনি তাকে তৃষ্ণার দিন (কিয়ামতের দিন) পানি পান করাবেন। (৯) রোজাদারের দুটি আনন্দের মুহূর্ত : হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে। যখন সে আনন্দিত হবে- এক. ইফতারের সময়। তখন সে ইফতারের কারণে আনন্দ পায়। দুই. যখন সে তার রবের সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ করবে তখন তার আনন্দ হবে। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, যখন তার প্রতিপালক রোজার পুরস্কার দেবেন।’ (সহিহ মুসলিম : ১১৫১) (১০) রোজাদারের দোয়া কবুল হয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘ইফতারের সময় রোজাদার যখন দোয়া করেন তখন তার দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। (অর্থাৎ দোয়া কুবল করা হয়)’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৭৫৩) আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে হাদিসের সুসংবাদ অনুযায়ী মাহে রমজানে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর