বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
অবৈধ ডায়াগনস্টিকে মা-শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু

ইউএনও-ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বরগুনার বামনা উপজেলায় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অপারেশনের পর প্রসূতি মেঘলা আক্তার (১৯) ও তার নবজাতকের মৃত্যুর দায় সংশ্লিষ্ট উপজেলার ইউএনও এবং ওসি এড়াতে পারেন না বলে মনে করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। তাই তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠিত তদন্ত কমিটি। সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেছে কমিশন। ৩৪ বিসিএসের কর্মকর্তা বামনার সাবেক ইউএনও অন্তরা হালদার        বর্তমানে বরিশালের বানারীপাড়ার ইউএনও হিসেবে কর্মরত। আর বামনার সাবেক ওসি মো. মাইনুল ইসলামও বর্তমানে একই উপজেলায় কর্মরত। গত জানুয়ারিতে ওই মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। বামনায় থাকাকালীন ওই অবৈধ ডায়াগনস্টিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইউএনও-ওসিসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই। বানারীপাড়ার ইউএনও অন্তরা হালদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সেই ঘটনায় কর্তৃপক্ষ আমার কাছে জবাব চেয়েছেন। আমি জবাব লিখছি, দ্রুতই জমা দেব। আর ওসি মাইনুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনার আগেই অন্য কর্মস্থলে যোগ দিয়েছি। যেখানে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউএনও, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন সেখানে ওসি থাকতে পারেন। তা বৈধ না অবৈধ দেখার জন্য সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি রাতে বামনা উপজেলার সুন্দরবন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রসূতিকে নিয়ে এলে ভর্তি করে কোনো স্টাফ ছাড়া অদক্ষ কর্মী নিয়ে অপারেশন করেন চিকিৎসক। এক পর্যায়ে চিকিৎসক প্রসূতির বাচ্চাকে তার পেটের মধ্যে পুনরায় রেখে বাইরে থেকে পেট সেলাই করে স্কচটেপ মেরে দ্রুত বরিশাল মেডিকেল হাসপাতালে নিতে বলেন। অপারেশনের নামে বামনায় দুই ঘণ্টার বেশি সময় নষ্ট করা হয়। বরিশাল নেওয়ার পথে ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দেড় থেকে দুই ঘণ্টা আগে প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে জানান। ঘটনার পরপরই ক্লিনিকের চিকিৎসক, নার্সসহ সব স্টাফ পালিয়ে যান।

বরগুনার এ ঘটনায় কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অভিযোগ আমলে নিয়ে কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) এবং জেলা জজ মো. আশরাফুল আলমকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করে। কমিটি সরেজমিন তদন্ত করে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করে। কমিশন গঠিত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ৮টি সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে অনুমোদনহীন হাসপাতালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দায়িত্বশীল ওই দুই কর্মকর্তার যোগদানের বিষয়ে ব্যাখ্যা তলব করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে দেওয়া সুপারিশের কপি আছে বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে। সেখানে কমিশন বলেছে, কাগজপত্রহীন অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রসব ব্যথায় কাতর প্রসূতিকে অস্ত্রোপচার করে জীবিত নবজাতককে ফের মায়ের পেটে ঢুকিয়ে অন্য হাসপাতালে পাঠানোর পর মা-শিশুর মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক, অমানবিক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এমন ঘটনায় কতর্ব্যরত চিকিৎসকগণ যেমন দায় এড়াতে পারেন না, তেমনি মনিটরিংয়ের অভাবে কাগজপত্রবিহীন প্রতিষ্ঠানটি অপচিকিৎসার মাধ্যমে মানুষকে হয়রানির কারণে মনিটরিং কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারেন না। এ ছাড়াও সে সময়ের ইউএনও, ওসি অনুমোদনহীন প্রাইভেট হাসপাতাল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সে কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনকে অবহিত করতে বলেছেন। ইউএনও-ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ছাড়াও স্বাস্থ্য বিভাগকে কিছু সুপারিশ দিয়েছে কমিশন। পাশাপাশি ভুক্তভোগীর পরিবারের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার স্বার্থে ঘটনার বিষয়ে দায়েরকৃত মামলার আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করতে, মামলার তদন্তকাজ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার সুপারিশ করেছে কমিশন।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর