বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলন

মাঠে না থাকলেও বিএনপি সমালোচনা ছাড়বে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলমান ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলনে সরাসরি যুক্ত হতে চাচ্ছে না বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে এমন মতামতই দিয়েছেন অধিকাংশ সদস্য। তবে আগামী সোমবারের বৈঠকে আলোচনা শেষে এ ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান খোলাসা করবে দলটি। ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলনে সরাসরি মাঠে না নামলেও বাংলাদেশের রাজনীতি, সীমান্ত হত্যাসহ নানা ইস্যুতে ভারতের হস্তক্ষেপ ও নেতিবাচক ভূমিকার সমালোচনা দেশের স্বার্থে অব্যাহত রাখার কথা ভাবছে বিএনপির নীতিনির্ধারক মহল। দলীয় অবস্থান থেকে কীভাবে প্রতিবেশী এই দেশের সমালোচনা আরও তীব্র করা যায়- তার একটি কৌশল খোঁজা হচ্ছে। স্থায়ী কমিটির পরবর্তী বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। গত সোমবার রাতে লন্ডনে বসবাসরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এসব মতামত আসে।

বৈঠক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভারতের ভূমিকায় বিএনপিসহ বেশকিছু বিরোধী রাজনৈতিক দল ক্ষুব্ধ হয়। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বর্জন ক্যাম্পেইন শুরু করে এসব দল। সম্প্রতি তাদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। সর্বশেষ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গত সোমবার বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের ব্যানারেও লেখা ছিল ‘ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন’। কয়েকদিন ধরে ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলন নিয়ে রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দেয়। এ অবস্থায় গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হলেও এ ইস্যুতে শেষ পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ভারতের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক স্থাপনের আশায় নানা মহলের পরামর্শে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে দেশটির সমালোচনা বন্ধ করে বিএনপি। দলটির নেতারা মনে করেন, দলীয় প্রধানের ওই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না- তার বড় প্রমাণ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ও ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন। ২০১৪ সালের মতো পরবর্তী দুটি নির্বাচনেও ভারত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষেই ছিল। এখনো আছে। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে অবস্থান না নেওয়ায় ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ভারতের বিষয়ে বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে এক ধরনের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কিছু রাজনৈতিক দল ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলন শুরু করে।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মনে করেন, জনগণ তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ থেকে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। এতে বিএনপির কিছু করার নেই। কিন্তু রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সরাসরি এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলে তাতে রাজনৈতিক ‘রং’ লেগে যাবে। ফলে সামাজিক যে আন্দোলন গড়ে উঠছে তা সঠিক পথে থাকবে না। এ বিষয়ে দলীয় কৌশল ঠিক করতে কমিটির আগামী বৈঠকে আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়। গত ২০ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নিজের ব্যবহার করা ভারতীয় চাদর ছুড়ে ফেলেন। এরপর বিএনপির ভারত বিরোধিতার বিষয়টি বেশ আলোচনায় আসে। এরপর দলের আরও কয়েকজন নেতাও এ বিষয়ে বক্তব্য দেন।

স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে রিজভী আহমেদের ভারতবিরোধী বক্তব্যের বিরোধিতা করেননি কেউ। তবে দায়িত্বশীল পদে থেকে এভাবে চাদর ছুড়ে ফেলে দিয়ে প্রতিবাদ জানানো শোভনীয় হয়নি বলে মনে করেন কেউ কেউ। এ বিষয়ে রিজভী আহমেদ বলেন, ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলন দেশের মানুষ খুশিতে করেনি। দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, অপমান, লাঞ্ছনা এবং ক্ষোভ থেকে তারা এটি করছেন। যে সংহতি জানিয়েছি- তা বাংলাদেশের জনগণ ও গণতন্ত্রের পক্ষে।

এ ব্যাপারে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিএনপি সব সময় দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে রাজনীতি করে। আমাদের দলের চেয়ারপারসনেরও একই ভাবনা। তার কথা হচ্ছে দেশের বাইরে আমাদের বন্ধু আছে, প্রভু নেই। আমরা এ নীতিতে বিশ্বাস করি।

সোমবার নয়াপল্টনে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যে তা আরও স্পষ্ট হয়েছে। তিনি বলেছেন, কোনো দেশ যদি আমাদের মনে করে যে, আমাদের ওপরে প্রভুত্ব করবে, বাংলাদেশের মানুষ কোনো দিন সেই প্রভুত্ব স্বীকার করেনি। মুঘল, ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলেও করেনি, এখনো করবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, বিএনপিকে অবশ্যই ভারতের কর্মকাণ্ডের সমালোচনায় সোচ্চার থাকতে হবে। কিন্তু সেটার কৌশল কী হবে তা আগে ঠিক করতে হবে। দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের জনগণ যদি ভারতীয় পণ্য বর্জন করে তাহলে দল হিসেবে বিএনপির কিছু করার নেই। জনগণের বিবেচনাবোধকে তারা অগ্রাহ্য করতে পারেন না। বিএনপিকে ভারতের সরকারের নীতি ও নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করতে হবে।

 

সর্বশেষ খবর